‘ধুর পাচারে’ জড়িয়েছিল জাহাঙ্গির

জাহাঙ্গির ঘটনার দিন দুপুরে যে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিল, সেই বাড়িতে বাংলাদেশিদের এনে রাখা হত বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুযোগ বুঝে তাদের সীমান্ত পার করে দেওয়া হত।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৭ ১০:০০
Share:

দু’দিন আগে পেট্রাপোলে খুন হয়েছিলেন এক যুবক। ওই ঘটনায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার রাতে পেট্রাপোল গ্রাম থেকে কাসেম মণ্ডল ও সাদ্দাম মণ্ডল নামে ওই দু’জনকে ধরা হয়। বনগাঁ মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তাদের ১৬ অগস্ট পর্যন্ত পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও ঘটনায় মূল অভিযুক্ত জুলু মণ্ডল এখনও পলাতক।

Advertisement

শুক্রবার দুষ্কৃতীরা জাহাঙ্গির বিশ্বাস (৩৬) নামে এক যুবককে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। নিহতের দাদা শাহাজান বিশ্বাস ভাইকে খুনের জন্য থানায় স্থানীয় তিন যুবক জুলু মণ্ডল, কাসেম মণ্ডল ও সাদ্দাম মণ্ডলের নামে অভিযোগ করেন। অভিযুক্তেরা সম্পর্কে দাদা-ভাই। পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে শাহাজান ভাইকে খুনের কারণ হিসাবে জানিয়েছেন, পুরনো কোনও রাগেই ওই তিনজন জাহাঙ্গিরকে খুন করেছে। নিহতের স্ত্রী রুকসানার দাবি, দিন কয়েক আগে স্বামীকে জুলু খুনের হুমকিও দিয়েছিল।

পুলিশ জানায়, জাহাঙ্গির ধুর (চোরাপথে দু’দেশের মধ্যে মানুষ পারাপারের কারবার) পাচারের অন্যতম মাথা ছিল। পুলিশ তাকে খুঁজছিল। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকাটি সীমান্ত লাগোয়া। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সীমানা বলতে রয়েছে হাঁকোর খাল। ওই এলাকা দিয়ে রমরমিয়ে চলে ধুর পাচার।

Advertisement

জাহাঙ্গির ঘটনার দিন দুপুরে যে বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিল, সেই বাড়িতে বাংলাদেশিদের এনে রাখা হত বলে পুলিশ জানিয়েছে। সুযোগ বুঝে তাদের সীমান্ত পার করে দেওয়া হত। কারা বেশি ধুর পাচার করবে, তা নিয়ে জুলুর সঙ্গে জাহাঙ্গিরের বিবাদ চলছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এক পুলিশ কর্তার কথায়, ‘‘ধুর পাচার নিয়ে রেষারেষির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, পেট্রাপোল জয়ন্তীপুর কালিয়ানি-সহ বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে চলে ধুর পাচার। যাকে কেন্দ্র করে কাঁচা টাকা ওড়ে। ওই টাকার লোভে মাঝে মধ্যে খুন জখমের ঘটনা ঘটে। গত দু’মাসে পেট্রাপোল, বনগাঁ, হাবরা, গাইঘাটা, গোপালনগর থানার পুলিশ প্রায় দু’শো জন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, তারা মূলত পেট্রাপোল, জয়ন্তীপুর, কালিয়ানি, আংরাইল সীমান্ত দিয়ে দালাল ধরে টাকা দিয়ে এ দেশে আসে। মাথা পিছু বাংলাদেশিরা এ দেশে আসার জন্য কমবেশি ৫০০০ হাজার টাকা করে দালালকে দেয় বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। জাহাঙ্গির ছিল সে রকমই একজন দালাল।

পুলিশ জানায়, ধুর পাচার বন্ধ করতে সীমান্তে বিএসএফের সঙ্গে যৌথ টহল দেওয়া হয়। পুলিশ নিজেও আলাদা করে নজরদারি চালাচ্ছে। এত কিছুর পরেও ধুর পাচার বেড়ে চলেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। সীমান্তে কী ভাবে বিএসএফ জওয়ানদের নজর এড়িয়ে বাংলাদেশিরা ঢুকে পড়ে, সেটাই প্রশ্ন। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘ধুর পাচার বন্ধ করতে বিএসএফ ও পুলিশ কর্তাদের আগেও বলা হয়েছে, ফের বলা হবে।’’ পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘ধুর পাচার বন্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন