Baguiati double murder

বাগুইআটি-কাণ্ডের পরে গা ঘামাচ্ছে পুলিশ নিখোঁজ কারা, হঠাৎ তৎপরতা

দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজদের খোঁজে তৎপর হয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, কোন থানা এলাকায় কত জন নিখোঁজ আছে, তার তালিকাও তৈরি হচ্ছে।

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড়  শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:৫৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

প্রায় আট মাস ধরে নিখোঁজ ভাঙড় থানার দক্ষিণ মাধবপুর গ্রামের বছর আঠারোর এক যুবক। পরিবারের দাবি, নিখোঁজ হওয়ার পরেই পুলিশে ডায়েরি করা হয়েছিল। তবে পুলিশ এত দিন তেমন গুরুত্ব দেয়নি। হঠাৎই গত দু’তিন দিন নিখোঁজ ওই যুবকের খোঁজে পুলিশি তৎপরতা বেড়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যেরা। এত দিন পরে হঠাৎ পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠায় অবাক তাঁরা।

Advertisement

শুধু ওই যুবকের ক্ষেত্রেই নয়, গত দু’তিন দিন ধরে জীবনতলা, কাশীপুর, ভাঙড়-সহ জেলার বিভিন্ন থানায় নিখোঁজদের খোঁজে নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ। দিন কয়েক আগে বাগুইআটি থানা এলাকার অপহৃত দুই ছাত্র খুনের ঘটনায় পুলিশি গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। পরে ওই দুই ছাত্রের দেহ উদ্ধার হয় হাড়োয়া থানা এলাকার বাসন্তী হাইওয়ে এবং ন্যাজাট থানা এলাকা থেকে। এই ঘটনায় পুলিশের উপরে ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য পুলিশের ডিজি সমস্ত পুলিশ সুপার-সহ পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর থেকেই দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজদের খোঁজে তৎপর হয়েছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, কোন থানা এলাকায় কত জন নিখোঁজ আছে, তার তালিকাও তৈরি হচ্ছে।

বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে, নিখোঁজ ডায়েরি করা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে তেমন ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কখনও ধরে নেওয়া হয়, প্রেমঘটিত কারণে ছেলেমেয়েরা বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আবার কখনও মনে করা হয়, বাবা-মায়ের বকা খেয়ে চলে গিয়েছে, নিজেরাই ঠিক ফিরে আসবে।

Advertisement

দক্ষিণ মাধবপুরের নিখোঁজ ওই যুবক রাহুল মণ্ডলের বাবা শ্যামল মণ্ডল বলেন, “ডায়েরি করার পরে বার বার থানায় গিয়েছি। বলা হত, খোঁজ করা হচ্ছে। খবর পাওয়া গেলে জানানো হবে। আশ্বাসটুকু ছাড়া পুলিশের পক্ষ থেকে কোনও সক্রিয়তা চোখে পড়েনি। হঠাৎ কী হল জানি না, ছেলের খোঁজ করতে পুলিশ ঘনঘন বাড়িতে আসছে। আমাদের থানায় ডেকে বিভিন্ন তথ্যও চাওয়া হচ্ছে।’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বছর জানুয়ারি মাস থেকে অগস্ট পর্যন্ত ভাঙড় থানায় ১১১টি মিসিং ডায়েরি হয়েছে। এঁদের মধ্যে ২৭ জন যুবক, ২ জন নাবালক, ৫০ জন যুবতী, ৩২ জন নাবালিকা। এখনও পর্যন্ত ৭৫ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। এখনও নিখোঁজ ১১ জন যুবক, ২৪ জন যুবতী, ১ জন নাবালিকা।

কাশীপুর থানায় জানুয়ারি মাস থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত ৮৪টি মিসিং ডায়েরি হয়েছে। এঁদের মধ্যে ১৮ জন যুবক, ৪৪ জন যুবতী এবং ২২ জন নাবালিকা। এখনও পর্যন্ত ২২ জন নাবালিকা এবং ৩৭ জন যুবক-যুবতীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ২৫ জন এখনও নিখোঁজ।

জীবনতলা থানায় গত আট মাসে প্রায় ৯০টি মিসিং ডায়েরি হয়েছে। এর মধ্যে ৪১ জন যুবক-যুবতীকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পরে ওই সব যুবক-যুবতীদের অনেকে মোবাইল বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেকেই ফোন নম্বর বদলে ফেলেছেন। বাড়ির সঙ্গে কোনও ভাবেই যোগাযোগ করছেন না। কিছু ক্ষেত্রে নিখোঁজ যুবক-যুবতীদের পরিবারের পক্ষ থেকে সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না বলেও দাবি পুলিশের। যার ফলে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তা ছাড়া, অনেক প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছেন। তাঁরা আর বাড়ি ফিরতে চাইছেন না বলে জানায় পুলিশ। অনেকেই আবার বাড়ির লোকের উপরে রাগ করে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। তাঁরা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। ফলে খোঁজ পেতে সমস্যা হচ্ছে। বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘এ বিষয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। বিভিন্ন থানায় কত মিসিং কেস সামাধান হয়নি, তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। অধিকাংশ কেসেরই সমাধান হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলি দ্রুত সমাধান করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন