জয়নগর-কাণ্ডে তদন্তকারীদের দাবি

‘ক্যাসেট বোমা’র মাথাই খুনের পিছনে

উদ্ধার হওয়া ‘ক্যাসেট বোমা’র সূত্র ধরে জয়নগরের জয়হিন্দ বাহিনীর টাউন সভাপতি সারফুদ্দিন খান (৩০) খুনের মূল চক্রীদের শনাক্ত করা গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৮
Share:

তদন্ত: ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। ছবি: সুমন সাহা

উদ্ধার হওয়া ‘ক্যাসেট বোমা’র সূত্র ধরে জয়নগরের জয়হিন্দ বাহিনীর টাউন সভাপতি সারফুদ্দিন খান (৩০) খুনের মূল চক্রীদের শনাক্ত করা গিয়েছে বলে দাবি করল পুলিশ। রবিবার বিকেলেও সুভাষগ্রাম স্টেশন এলাকা থেকে দু’জনকে ধরেন বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপের অফিসারেরা। এই নিয়ে ধরা পড়ল ১৪ জন। তবে জয়নগরের সন্দেহভাজন দুই তৃণমূল কর্মী ও মন্দিরবাজারের এক দাগি দুষ্কৃতী ফেরার বলে জানান তদন্তকারীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সন্ধায় জয়নগরের দুর্গানগরে পেট্রেল পাম্পে সারফুদ্দিন-সহ তিন জনকে গুলি-বোমা ছুড়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। সারফুদ্দিনকে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোপানোও হয়। ঘটনাস্থল থেকে প্রচুর কার্তুজের খোলের পাশাপাশি কয়েকটি ‘ক্যাসেট বোমা’ উদ্ধার করে পুলিশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবার ও মন্দিরবাজার এলাকায় এ ধরনের বোমা তৈরি হয় বলে জানায় পুলিশ। দুই এলাকার দুই দাগি দুষ্কৃতী এই বোমা তৈরিতে সিদ্ধহস্ত বলেও জানা গিয়েছে। সেই সূত্রেই তদন্ত এগোয়।

পুলিশ জানতে পারে, জয়নগরের দুই তৃণমূল নেতা ভাড়াটে খুনিদের টাকা দিয়েছিলেন। সারফুদ্দিনকে খুন করতে পারলে মাথা-পিছু ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। জনা সাতেক পেশাদার খুনিকে সুপারি দেওয়া হয়। জয়নগর, মথুরাপুর, মন্দিরবাজার এলাকা থেকে এক জোট করা হয় দুষ্কৃতীদের।

Advertisement

ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, সম্প্রতি মন্দিরবাজারে ২২ কাঠা একটি পুকুর বুজিয়ে জমি বিক্রির কাজ শুরু করেছিলেন সারফুদ্দিন। কিন্তু ওই পুকুর প্রথমে কিনেছিল মন্দিরবাজারের এক দাগি দুষ্কৃতী। সে ক্যাসেট বোমা তৈরিতে দক্ষ।

স্থানীয় সূত্রের খবর, রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে ওই দুষ্কৃতীকে এলাকা ছাড়া করেন সারফুদ্দিন। জয়নগর এলাকায় পুকুর ভরাট, জমি-মাটির কারবারের উপরে দখল তৈরি হয় তাঁর সারফুদ্দিন। তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, বিধায়ক বিশ্বনাথ দাসের হাত ছিল সারফু্দিনের মাথায়। এই পরিস্থিতিতে সারফুদ্দিন প্রভাব বাড়িয়ে চলে। স্থানীয় কিছু তৃণমূল নেতা-কর্মীর চক্ষুশূল হয়ে ওঠেন ডাকাবুকো সারফুদ্দিন।

তদন্তকারীরা জানালেন, মন্দিরবাজারের ওই দাগি দুষ্কৃতীর সঙ্গে হাত মেলান জয়নগর টাউন অঞ্চলের ‘কোণঠাসা’ দুই তৃণমূল নেতা। সারফুদ্দিনকে খুন ছক তৈরি হয়।

কিন্তু প্রথম বাধা ছিলেন বিধায়ক বিশ্বনাথ। সারফুদ্দিন সব সময়েই তাঁর সঙ্গে ঘুরতেন। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘সকালে বিশ্বনাথের বাড়িতে নিজের গাড়ি নিয়ে চলে আসতেন সারফুদ্দিন। তারপরে বিশ্বনাথকে সঙ্গে নিয়ে ঘুরতেন। বিধায়করা সরকারি পর্যায় গাড়ি পান না। বিশ্বনাথকে নিয়মিত গাড়ি দিতেন সারফুদ্দিনই।

সপ্তাহখানেক ধরে ওই পেট্রল পাম্প থেকে কিছুটা দূরে একটি ভেড়িতে জড়ো হত ভাড়াটে খুনির দল। সন্ধ্যার পর থেকে নজরদারি চালাতে সাজামল নামে এক দুষ্কৃতীকে পাঠানো হত পাম্পের কাছাকাছি। খুনের ঘটনায় ধরা পড়েছে ওই যুবকও। বৃহস্পতিবার বিধায়ক সারফুদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন না। পুলিশ জানতে পেরেছে, মোবাইলে সে খবর ভেড়ির কাছে থাকা খুনিদের দিয়েছিল সাজামলই। এমন পরিস্থিতি চাইছিল দুষ্কতীরাও। বিধায়কের অনুপস্থিতির সুযোগে দুষ্কৃতীরা হামলা চালায় সারফুদ্দিনের উপরে। পালাতে গিয়ে প্রাণ যায় চালক ও আর এক যুবকের। ‘অ্যাকশন’ শেষ করে ভেড়িতে ফিরে গিয়ে নিজেদের মোটর বাইক নিয়ে গা ঢাকা দেয় ভাড়াটে খুনির দল। পাম্পের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে সাজামল ও জাকির নামে দুই দুষ্কৃতীকে শনাক্ত করেন তদন্তকরীরা। রাতেই দু’জনকে ধরা হয়। জেরা করে আরও কয়েক জনকে ধরে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন