পাঁচ সাইকেল চোর ধরে দুই চুরির পর্দা ফাঁস

কয়েক জন টহলদার পুলিশের কানে তোলেন, মদের দোকানের সামনে থেকে নিয়মিত সাইকেল চুরি যাচ্ছে। খবর পেয়ে তৎপর হন নোদাখালি থানার অফিসারেরা। সন্ধ্যা নামতেই দেশি মদের দোকানে শুরু হয় সাদা পোশাকে টহলদারি।

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ০২:১১
Share:

উদ্ধার হওয়া সিলিন্ডার। নিজস্ব চিত্র

‘টার্গেট’ থাকত দেশি মদের দোকান। ‘অপারেশনের’ মূল সময় ছিল সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা। কেউ দোকানের বাইরে সাইকেল দাঁড় করিয়ে মদ কিনতে গিয়েছেন, অমনি সাইকেল নিয়ে ধাঁ! চাবি খোলার যন্ত্র থাকত পকেটেই। মূলত ভরসন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা— মদের দোকানে লাইন পড়ে ক্রেতাদের। আশপাশে সাইকেল রেখে মদ কিনতে যান তাঁরা। সেটাই ছিল সুবর্ণ সুযোগ। সাইকেল চুরি যাওয়ার পরে অনেকেই পুলিশে অভিযোগ জানাতে ইতস্তত বোধ করছিলেন। পিছিয়েও আসছিলেন কেউ কেউ।

Advertisement

কিন্তু ক্রমেই বাড়ছিল চুরি। বাধ্য হয়ে কয়েক জন টহলদার পুলিশের কানে তোলেন, মদের দোকানের সামনে থেকে নিয়মিত সাইকেল চুরি যাচ্ছে। খবর পেয়ে তৎপর হন নোদাখালি থানার অফিসারেরা। সন্ধ্যা নামতেই দেশি মদের দোকানে শুরু হয় সাদা পোশাকে টহলদারি। প্রাথমিক ভাবে কয়েক জন চোরকে চিহ্নিতও করা হয়। এক তদন্তকারী অফিসারের কথায়, প্রথমেই অভিযুক্তদের ধরা হয়নি। কারণ, এর পিছনে বড় চক্র আছে বলে মনে হয়েছিল। শুধু নোদাখালিই নয়, পার্শ্ববর্তী বিষ্ণুপুর থানা এলাকার একাধিক মদের দোকানের সামনে থেকেও একই কায়দায় সাইকেল চুরি করত দুষ্কৃতীরা। চুরির পরে তারা জড়ো হত বড়ুলে।

এর পরেই সপ্তাহখানেক আগে এক দিন সব দেশি মদের দোকান ঘিরে ফেলে সাদা পোশাকের পুলিশ। পাক়ড়াও করা হয় পাঁচ সাইকেল-চোরকে। পুলিশের দাবি, জেরায় দুষ্কৃতীরা জানিয়েছে, রাত ১০টা পর্যন্ত চলত সাইকেল চুরি পর্ব। ১০টা থেকে ১২টা, মোটরবাইকে চেপে নোদাখালি ও আশপাশের এলাকায় ছিনতাই হত। রাত আরও বাড়লে হয় কোনও বাড়িতে চুরির চেষ্টা বা কোনও কারখানায় হানা দেওয়া।

Advertisement

দিন কয়েক আগে আলমপুরের এক গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর থানায় অভিযোগ করেন, তাঁর গুদাম থেকে কয়েকটি সিলিন্ডার চুরি গিয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ দেখে, গুদামের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে কিছুই ধরা পড়েনি। প্রথমে খানিকটা ধন্দেই পড়ে যান তদন্তকারীরা। কিন্তু পাঁচ সাইকেল-চোরকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতেই একের পর এক পর্দা ফাঁস হতে থাকে। ধৃতদের থেকে বাজেয়াপ্ত হয় ১০টি সাইকেল, আটটি গ্যাস সিলিন্ডার ও দু’টি ওয়ান শটার।

তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় পাঁচ জন কবুল করেছে, সিসি ক্যামেরা ছাতা দিয়ে ঢেকে, তালা ভেঙে সিলিন্ডার গায়েব করা হত। পাঁচ জনের মধ্যে দু’জন সিলিন্ডার বার করত। এক জন থাকত পাঁচিলের উপরে। একে একে সিলিন্ডার নিয়ে সে চালান করত দলের বাকি
দু’জনের কাছে। কাজ মিটলে সাইকেল ভ্যানে সিলিন্ডার চাপিয়ে নিয়ে যাওয়া হত বড়ুলে।

এক অফিসার বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে একটি মোবাইল ছিনতাই-চক্রের খোঁজ মিলেছে। জানা গিয়েছে, সাইকেল-চোরদের তিনটি মোটরবাইক ছিল। দিনে তারা সেগুলি ভাড়া দিত মোবাইল ছিনতাই চক্রের পাঁচ সদস্যকে। প্রতি বাইক বাবদ ভাড়া নেওয়া হত ৩০০ টাকা।’’ সাইকেল-চোরদের জেরা করে শনিবার রাতে ধরা হয়েছে ওই মোবাইল ছিনতাই দলের পাঁচ জনকেও। উদ্ধার হয়েছে ১০টি মোবাইল।

এক অফিসার জানান, চুরির মামলায় সাধারণত তিন মাসের মাথায় জামিন মঞ্জুর হয়ে যায়। জামিন পেয়ে ফের এই চোরেদের দল সক্রিয় হয়ে ওঠে কি না, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন