ঝড়ের রাতে পাশে পুলিশ

তখন উত্তাল সাহেবখালি নদী। আকাশ কালো করে শোঁ শোঁ করে হাওয়া দিচ্ছে। রাত ঘনিয়ে তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় ১২টা ছুঁই ছুঁই। সুন্দরবন-লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা দুলদুলি পঞ্চায়েতের পুকুরিয়া গ্রাম।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৬ ০২:০২
Share:

তখন উত্তাল সাহেবখালি নদী। আকাশ কালো করে শোঁ শোঁ করে হাওয়া দিচ্ছে। রাত ঘনিয়ে তখন ঘড়ির কাঁটায় প্রায় ১২টা ছুঁই ছুঁই।

Advertisement

সুন্দরবন-লাগোয়া হিঙ্গলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকা দুলদুলি পঞ্চায়েতের পুকুরিয়া গ্রাম। সেখানকার বাসিন্দা বছর পঞ্চাশের সুশান্ত সর্দারের শরীর বেশ খারাপ। হঠাৎই পায়খানা-বমিতে কাহিল তিনি। প্রায় নেতিয়ে পড়েছেন। আত্মীয়-স্বজন বুঝেছিলেন, রাতেই হাসপাতালে না নিয়ে যেতে পারলে খারাপ-ভাল একটা কিছু হয়ে যেতে পারে। কাছেই কালিন্দীর পাড়ে সাহেবখালি প্রাথমিক হাসপাতাল। কিন্তু থাকলে কী হবে, চিকিৎসকের অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে সপ্তাহে দু’দিন খানিকক্ষণের জন্য খুলেই ফের বন্ধ হয়ে যায় তার ঝাঁপ। তাই ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পরিবার-পড়শিরা জনা তিনেক জুটে কোনও রকমে পাঁচ কিলোমিটার পথ কোলে-পিঠে করে সুশান্তবাবুকে নিয়ে আসেন নেবুখালি ফেরিঘাটে। সাহেবখালি নদী তখন ফুঁসছে। মাঝি নৌকো পারাপারে রাজি হলেন না।

ঘটনাটা চোখে পড়ে হিঙ্গলগঞ্জের এএসআই স্বপন সরকারের। তিনি খবর দেন ওসি সঞ্জিত সেনাপতিকে। স্বপন জানান, রায়মঙ্গল-গৌড়েশ্বর-সাহেবখালির সঙ্গমস্থলে ঢেউয়ের জন্য কোনও মাঝি যাত্রী পারাপারে রাজি হচ্ছে না। এই পরিস্থিতে অসুস্থ মানুষটাকে বাঁচাতে গেলে একটাই উপায়, থানার লঞ্চ ব্যবহার করা।

Advertisement

ওসি নেবুখালি ফেরিঘাটে লঞ্চ পাঠিয়ে দেন। হিঙ্গলগঞ্জের ইছামতী নদীর ঘাটে রাখা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। রাত ১টা নাগাদ ওসির উপস্থিতিতে লঞ্চে করে সুশান্তবাবু ও তাঁর সঙ্গীদের প্রায় ১৭ কিলোমিটার পথ পার করে হিঙ্গলগঞ্জে আনা হয়। পরে সেখান থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় ৯ নম্বর সান্ডেলেরবিল হাসপাতালে। ততক্ষণে রোগীর অবস্থা আরও কাহিল। চিকিৎসক জানান, দ্রুত রোগীকে পাঠাতে হবে বসিরহাট জেলা হাসপাতালে। তক্ষুণি দরকার ছিল কিছু দামি ওষুঝপত্রেরও। রোগীর সঙ্গীরা জানান, তাঁদের সঙ্গে অত টাকা নেই। এ বার ওসির চেষ্টায় ওষুধ কেনা হয়। ফের ১৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ছোটে হাসনাবাদে ইছামতী নদীর পাড়ে। ভুটভুটিতে করে হাসনাবাদ ফেরিঘাট। পুলিশের পক্ষে আগে থেকে খবর দেওয়ায় সেখানে হাজির ছিল অ্যাম্বুল্যান্স। তাতে চাপিয়ে সুশান্তবাবুকে প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যখন নিয়ে যাওয়া হল বসিরহাট জেলা হাসপাতালে, ততক্ষণে ভোর হয় হয়। পুলিশের পক্ষে সেখানেও প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে দেওয়া হয়।

বর্তমানে স্থিতিশীল সুশান্তবাবু। তাঁর প্রতিবেশী বিমল সর্দারের কথায়, ‘‘পুলিশের এমন ভূমিকা ভাবা যায় না। একজন সাধারণ সুন্দরবনবাসীর জন্য যে ভাবে রাতভোর সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ওঁরা, তা সত্যিই মনে রাখার মতো। না হলে হয় তো মানুষটাকে বাঁচানোই যেত না। আমরা ওসির কাছে কৃতজ্ঞ।’’ ওসি সঞ্জিতবাবু বলেন, ‘‘কী আর করেছি যে প্রশংসা করতে হবে। মানুষের উপকারে লাগাটা তো সকলেরই কাজ।’’ খবর দিলে পুলিশ সব সময়ে পাশে থাকবে, প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন