নিরাপত্তা: লরি দাঁড় করিয়ে হাতে চা-জল তুলে দিচ্ছে পুলিশ। হাবরায় তোলা নিজস্ব চিত্র
রাত প্রায় ১২টা। মাতলা সেতুর উপর দিয়ে সাঁ সাঁ করে বেরিয়ে যাচ্ছে বড় বড় ট্রাক। সেতু থেকে রাস্তায় নামতেই সামনে পুলিশের গার্ডরেল। গজ গজ করতে করতে গাড়ি থেকে নামলেন চালক-খালাসি। পুলিশের এক কর্মী বাড়িয়ে দিলেন জলের বোতল। বলা হল চোখে-মুখে জল দিয়ে একটু জল খান।
তখনও থতমত দশা চালকের। এরপরে ঘাড়ে কী কোপ পড়ে, ভাবতে ভাবতে শীতের রাতেও রীতিমতো ঘাম কপালে। তাদের আরও অবাক করে বাড়িয়ে দেওয়া হল গরম চা, বিস্কুট।
মাঝরাতে এমন আপ্যায়ন কেন?
পুলিশ জানাল, ভয় নেই। গাড়ি চালাতে চালাতে যাতে চোখ লেগে এসে কোনও বিপদ-আপদ না ঘটে, তাই এই বন্দোবস্ত। ক্যানিংয়ের এসডিপিও দেবীদয়াল কুণ্ডু, ক্যানিং থানার ওসি আশিস দাস জানালেন, পথ নিরাপত্তা নিয়ে চালকদের সতর্ক করতেই এই উদ্যোগ।
মাতলা সেতু থেকে ক্যানিঙের দিকে যেতে বড় বড় বাঁক। রাতে বেপরোয়া ভাবে চলতে গিয়ে ট্রাক অনেক সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মেছোভেড়ি, নয়ানজুলিতে পড়ে। পুলিশ কর্তারা চালক-খালাসিদের সতর্ক করে দিয়েছেন, ঘুম চোখে গাড়ি চালাবেন না। বেপরোয়া ভাবে তো নয়ই। মদ্যপ অবস্থায় স্টিয়ারিংয়ে বসা তো নৈব নৈব চ। চালকের অসতর্কতা পথচারীর ক্ষেত্রেও প্রাণঘাতী হতে পারে।
অভিভূত এক ট্রাক চালক বললেন, ‘‘রাত-বিরেতে বহু পুলিশ দেখেছি। নানা রকম ব্যবহার দেখতে হয়েছে তাদের। কিন্তু আজ যা ঘটল, এমন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি।’’
একই উদ্যোগ দেখা গিয়েছে হাবরায়। ভোরের দিকে বেনাপোল বন্দরে পণ্য খালি করে ট্রাক নিয়ে যশোর রোড ধরে ফেরার পথে ট্রাক চালকদের হাবরার চোংদা মোড়ে দাঁড় করান পুলিশ, সিভিক ভলান্টিয়াররা। ধরপাকড় চলছে ভেবেছিলে চালক। কিন্তু পুলিশ কর্মীরা এগিয়ে দেন জলের বোতল। চোখে-মুখে জলের ছিটে দিতে বলা হয়। ভোর রাতে মাটির ভাঁড়ে চা-ও মেলে।
দিন পাঁচেক ধরে জেলা পুলিশের নির্দেশে হাবরা থানার পুলিশ এই কর্মসূচি নিয়েছে। হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পথ দুর্ঘটনা কমাতেই পুলিশের এই পদক্ষেপ।
বুধবার ভোরে হাবরা থানার পুলিশ জল-চা খাওয়ানোর সময়ে দেখেন, একটি ট্রেকার বেপরোয়া গতিতে যাচ্ছে। পুলিশ ট্রেকারটি আটক করেছে। একই সঙ্গে অন্য একটি ট্রাকে দেখা যায়, পিছনে ঝুলে যাত্রীরা যাচ্ছেন। ওই ট্রেকারটিও আটক করে চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।