Barasat

খাল বুজেছে জঞ্জালে, জমা জলে বানভাসি এলাকা

নতুন পুরবোর্ডের কাছে জমা জল সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দাবি করছেন ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা।

Advertisement

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:২৫
Share:

আবর্জনা জমে এমনই চেহারা বাণীকণ্ঠ খালের। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নিকাশি খাল মজে গিয়েছে অনেক জায়গাতেই। তাই ভারী বৃষ্টি হলেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে বহু এলাকা। দুর্ভোগের শিকার হন বারাসতের বাসিন্দারা। প্রশাসনের দাবি, খাল সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। তবে এলাকার নিকাশি ব্যবস্থাকে সচল রাখতে জনগণকেও সচেতন হতে হবে বলে পাল্টা যুক্তি প্রাক্তন পুর কর্তৃপক্ষ তথা পুরভোটে শাসকদলের প্রার্থীদের।

Advertisement

আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি বারাসতে পুরভোট। তার আগে তাই নতুন পুরবোর্ডের কাছে জমা জল সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান দাবি করছেন ৩৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘আগামী দিনে প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাব বাড়বে বলেই শোনা যাচ্ছে। তাই নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত না হলে জল জমার সমস্যা আরও বাড়বে।’’

বারাসত এলাকায় ঘুরে জানা গেল, ১৬, ১৭, ২৯, ৩০, ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মতো কয়েকটি ওয়ার্ডে জমা জলের সমস্যা রয়েছে। বারাসতের কালিকাপুর, পুঁইপুকুর, হৃদয়পুর, উত্তরায়ণের মতো এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই জানাচ্ছেন, ভারী বৃষ্টিতে জলের নীচে চলে যায় সেইসব এলাকা। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের অশ্বিনীপল্লি, মানিকনগর, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর, মধ্য কালিকাপুর, মাঠপাড়া, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের পুঁইপুকুর, উত্তরায়ণ, ৩২ ও ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের হৃদয়পুরের অংশ, ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়নগর, বনমালিপুরের মতো এলাকাও জলমগ্ন হয়ে পড়ে। স্থানীয়েরা জানান, অতীতে হৃদয়পুরের অম্বেডকর এলাকায় জলে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।

Advertisement

বারাসত পুর এলাকার নিকাশি ব্যবস্থার অধিকাংশটাই নির্ভর করে বাণীকণ্ঠ খালের উপরে। পাশাপাশি রয়েছে সুতি খালও। তবে বাণীকণ্ঠই নিকাশির জল বেরোনোর প্রধান পথ। কিন্তু এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, আবর্জনা জমে জমে সেই খাল কার্যত নালায় পরিণত হয়েছে। খালে ভাসছে বড় বড় প্লাস্টিকের প্যাকেট-সহ নানাবিধ বর্জ্য। খালের আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা বসতির একটি বড় অংশের বৈধতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

বারাসতের নিকাশির সমস্যাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রচারে নেমেছে বামফ্রন্টও। পুরভোটের জন্য তৈরি কমিটির আহ্বায়ক দেবব্রত বসুর দাবি, হরিতলা থেকে বারাসত আদালত পর্যন্ত রাস্তা বর্ষায় নদীর চেহারা নেয়! তাঁর কথায়, ‘‘বাণীকণ্ঠ ও সুতি— দু’টি খালেরই সংস্কার প্রয়োজন। বাণীকণ্ঠ খালকে নোয়াইয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। বর্ষায় একাধিক জায়গা জলে ডুবে যায়। বারাসত ও মধ্যমগ্রামের মধ্যে একটি লকগেট আছে। কিন্তু তা নিয়ন্ত্রিত হয় মধ্যমগ্রাম থেকেই। কারণ বারাসতের জলে মধ্যমগ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে তাতে বারাসতের কোনও সুবিধা হয় না।’’ বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্রের দাবি, ‘‘বারাসত আদালতের আশপাশের এলাকায় প্রশাসনের একাধিক দফতর রয়েছে। একটু বৃষ্টি হলেই ওই এলাকা ভেসে যায়। ১৭, ১৬, ২৮, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও জল জমার ব্যাপক সমস্যা রয়েছে। বাণীকণ্ঠ খালের সংস্কারের বিষয়টি আমরাও দলীয় ইস্তেহারে রেখেছি।’’

বারাসত পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মুখোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, এলাকায় জমা জল তেমন কোনও বড় সমস্যা নয়। মাত্র দু’-তিনটি ওয়ার্ডে একটুআধটু জল জমার সমস্যা রয়েছে। সে জন্য বাণীকণ্ঠ খালের সংস্কারের কাজও শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বাণীকণ্ঠের জল দিগবেড়িয়া এলাকার কাছে অন্য একটি খালে ফেলার জন্য নিকাশি পথ তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। খালে আবর্জনা ফেলার প্রবণতা কমাতে হবে। চেষ্টা করছি, পরবর্তী পুরবোর্ড তৈরির পরে খালের উপরের অংশ ঢেকে দিতে। তাতে খাল বুজবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন