বরাহনগর ও কামারহাটি

বেহাল ব্যবস্থাতেই ডেঙ্গি-যুদ্ধ

গঙ্গার এক পাড়ের পুরসভা হাওড়ার মতো ডেঙ্গি মোকাবিলায় সামিল হয়েছে এ পারের বরাহনগর, কামারহাটি পুরসভাও। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পুরসভাগুলির পরিকাঠামো যথেষ্ট ‘দুর্বল’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০১:২৬
Share:

গঙ্গার এক পাড়ের পুরসভা হাওড়ার মতো ডেঙ্গি মোকাবিলায় সামিল হয়েছে এ পারের বরাহনগর, কামারহাটি পুরসভাও। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, এই পুরসভাগুলির পরিকাঠামো যথেষ্ট ‘দুর্বল’। কোথাও সপ্তাহে এক দিন করে তেল ছড়ানো, কামান দাগা হচ্ছে। কোথাও সচেতনতা শিবিরে বক্তব্য রেখেই দায় সারছেন পুরকর্তারা।

Advertisement

হাওড়ার মতো বরাহনগর ও কামারহাটি পুরসভাতেও নেই পতঙ্গবিদ। ভরসা পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরাই। কিন্তু সেখানেও কর্মীর অভাব। ফলে নিয়মিত পুরকর্মীদের দেখা মিলছে না বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, সপ্তাহে মাত্র এক দিন করে কামান দাগা হচ্ছে। এক বার তেল ছড়িয়ে যাওয়ার পরে আর দেখাই মিলছে না পুরকর্মীদের।

আর এর ফলে ওই দুই পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। অজানা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। বরাহনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি অনেক রোগী। এখনও পর্যন্ত ৩৩ জনের রক্তে ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে বলে জানান হাসপাতালের সুপার
জয়ব্রতী মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

অন্য দিকে, কামারহাটির সাগর দত্ত হাসপাতালেও জ্বর নিয়ে ভর্তি অনেকে। প্রতিদিন আউটডোরে জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও সুপার গৌতম জোয়ারদারের দাবি, এখনও পর্যন্ত ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারও ডেঙ্গি ধরা পড়েনি। কামারহাটি ও বরাহনগরের স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই দুই এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দাই স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি। অনেকের রক্তে ডেঙ্গির ভাইরাস মিলেছে।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, এই পরিষে‌বা কি মশাবাহিত রোগ মোকাবিলার জন্য পর্যাপ্ত? কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) বিমল সাহা বলেন, ‘‘যে পরিকাঠামো আছে, তা যথেষ্ট। স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি চিকিৎসকদের সঙ্গে নিয়েও অভিযান চালাচ্ছি। অনেক জায়গাতেই লার্ভা মিলছে।’’

খোদ পুরকর্তাদের একাংশ মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার পিছনে পুরসভাগুলির পরিকাঠামোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। এর পরেও অবশ্য তাঁদের দাবি, ‘দুর্বল’ পরিকাঠামোকে কোনও মতে চাঙ্গা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে। যেমন বরাহনগরের চেয়ারম্যান পারিষদ (স্বাস্থ্য) ব্রজেন মণ্ডল বলেন, ‘‘পুরোপুরি পরিকাঠামো না থাকলেও যতটা সম্ভব তৈরি করে নিয়েছি। গত বারের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার আগে থেকেই তৈরি ছিলাম। তাই স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েও রাখা হয়েছিল। মাস দেড়েক আগে থেকেই তাঁরা রাস্তায় নামতে শুরু করেছেন।’’ কিন্তু, বেহাল পরিকাঠামোর কথা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউই।

কিন্তু, মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ার পরে কেন ঘুম ভাঙল পুরসভার? কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহা অবশ্য তা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার যে পরিকাঠামো আছে, তা নিয়ে আগে থেকেই যতটা সম্ভব কাজ করা হচ্ছে। কোথাও খামতি রাখা হচ্ছে না। নিকাশি ও স্বাস্থ্য দফতরকে নিয়ে তৈরি কমিটি যৌথভাবে কাজ করছে।’’ যদিও কামারহাটির বিধায়ক, সিপিএমের মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কিছু দিন ধরে পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীদের রাস্তায় দেখা যাচ্ছে ঠিকই। তবে আরও অনেক আগে পুরসভার ঘুম ভাঙা উচিত ছিল।’’

বরাহনগর পুরসভার চেয়ারপার্সন অপর্ণা মৌলিকও বেহাল পরিকাঠামোর কথা কার্যত মেনে নিয়ে জানান, যে মহিলারা স্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে কাজ করেন, তাঁদের এ বার জেলার আধিকারিকদের দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা-ও সেটি খুব উন্নত নয়। তবে অপর্ণাদেবীর দাবি, ‘‘শুধু স্বাস্থ্যকর্মীদের উপর ভরসা করা হচ্ছে না। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে চিকিৎসক ও কর্মীরাও কাজ করছেন।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, বরাহনগরের যে সব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, সেখানে শিবিরের পাশাপাশি সময়ও দিচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। অন্য এলাকাতেও ধোঁয়া দেওয়া, তেল ছড়ানো হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement