ঝাঁকুনির চোটে রাস্তাতেই প্রসব হয়ে যায়

রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের গ্রামীণ রাস্তাগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। মূল রাস্তাগুলিও বেহাল।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:১১
Share:

এবড়ো-খেবড়ো: রায়দিঘি থেকে দমকল জেটিঘাট পর্যন্ত। নিজস্ব চিত্র

রাস্তার নাম শুনলেই বুকিং বাতিল করে দেয় নিশ্চয়যান। সমস্যায় পড়েন আশাকর্মীরা। হাসপাতালে প্রসূতিদের নিয়ে না গেলে টাকা পাবেন না তাঁরা। এ দিকে, রাস্তা খারাপের জন্য প্রসূতিদের পরিবারও হাসপাতালে যেতে দিতে চান না।

Advertisement

রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের গ্রামীণ রাস্তাগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। মূল রাস্তাগুলিও বেহাল। দিন কয়েক আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সফরে এসে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ৯৯ শতাংশ প্রসব হাসপাতালেই হয়। কিন্তু এ বার স্বাস্থ্যকর্মীদের তা ১০০ শতাংশ করতে হবে। যে ভাবে হোক প্রসূতিদের বুঝিয়ে হাসপাতালে আনতে হবে। আশাকর্মীদের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য বলছে, খারাপ রাস্তায় ঝাঁকুনির চোটে অনেক সময়ে রাস্তাতেই প্রসব হয়ে যায়। তবে নাড়ি কাটতে হয় হাসপাতালে গিয়ে। না হলে টাকা পাবেন না তাঁরা।

রায়দিঘি মথুরাপুর ২ বিডিও স্বাতী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গ্রামীণ রাস্তাগুলি সারানোর জন্য পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে প্রতিটি পঞ্চায়েতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। বাকিগুলির কাজও শুরু হবে। আর মূল রাস্তাগুলি প্রধানমন্ত্রী সড়ক যোজনার ও পূর্ত দফতরের অধীনে। রাস্তা সংস্কারের জন্য একাধিকবার তাদের জানানো হয়েছে।’’

Advertisement

ওই ব্লকে ১১টি পঞ্চায়েতে ৪৫টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ও তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতাল রয়েছে। পঞ্চায়েতগুলির মধ্যে দমকল, নগেন্দ্রপুর, কুমড়োপাড়া, নন্দকুমারপুর, রাধাকান্তপুর, কঙ্কনদিঘি, গিলারছাট ও রায়দিঘি নিয়ে ৮টি পঞ্চায়েত এলাকায় উপস্বাস্থ্যকে‌ন্দ্র রয়েছে। যাতায়াতের রাস্তা বলতে মাটির কিংবা ইট পাতা রাস্তা। বছরের পর বছর কেটে গেলেও ওই রাস্তা সংস্কার হয়নি। কোথাও এখন খানাখন্দ। আলোর ব্যবস্থা নেই। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে প্রসূতি আনতে গিয়ে নিশ্চয়যানের চালকেরা বিপদে পড়েন বলে অভিযোগ। রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালের অধীনে রয়েছে ২২টি নিশ্চয় যান। তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন বর্ণাশিস হালদার। তিনি জানান, মূল রাস্তা ছাড়াও গ্রামীণ বহু রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। একদিন গাড়ি ঢুকলে যন্ত্রাংশ খারাপ হয়ে যায়। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রসূতিদের আনতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, শুধু গ্রামীণ রাস্তা নয়, মূল সড়কের অবস্থাও খারাপ। রায়দিঘি থেকে দমকল ১৯ কিলোমিটার ও রায়দিঘি থেকে বোলের বাজার প্রায় ৪ কিলোমিটার। রাস্তায় বড় বড় গাড্ডা তৈরি হয়েছে। সেখান দিয়ে সুস্থ মানুষ যাতায়াত করতেই নাজেহাল হয়ে যান। আর প্রসূতিরা তো রীতিমতো ভয় পান।

গিলারছাট পঞ্চায়েতে কালিকাপোতা গ্রাম থেকে বৈদ্যপাড়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, পাখিরালা থেকে হালদার পাড়া সাব সেন্টার, কঙ্কনদিঘি পঞ্চায়েতের উত্তর কঙ্কনদিঘি কালীরঘেরি পুরকাইতপাড়া সাব সেন্টার, উত্তর কুমড়োপাড়া শেখপাড়া সাব সেন্টার, নগেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতে পূর্ব শ্রীধরপুর সাব সেন্টার-সহ বিভিন্ন পঞ্চায়েতে সাব সেন্টারে যাতায়াতের রাস্তা খুবই খারাপ। সে জন্য দুর্ভোগে পড়েছেন প্রসূতিরা। অনেকেই বাড়ির থেকে হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। তাঁদেরকে বুঝিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হিমসিম খেতে হয় স্থানীয় আশাকর্মীদের।

বর্তমানে এলাকায় প্রায় দেড় হাজার মহিলা সদ্য মা হয়েছেন। সাড়ে ৩০০ প্রসূতি রয়েছেন। তাঁদের নিয়মিত চিকিৎসা করাতে এলাকায় উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা গ্রামীণ হাসপাতালে আনতে হয়ে ওই বেহাল রাস্তা দিয়েই। ওই পঞ্চায়েত এলাকার আশা কর্মীরা জানাচ্ছেন, রাস্তার নাম শুনে অনেক নিশ্চয় যান আসতে চান না। এ দিকে প্রসব বেদনা উঠে যায়। তখন কী করবেন, তাঁরা ঠিক করতে পারেন না। গর্ভবতীদের দোলায় চাপিয়ে ভ্যানে করে রাস্তার মোড় পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। এ ভাবে সময় নষ্ট হয়।

আরও অভিযোগ, এ ভাবে প্রসূতিদের নিয়ে যেতে গিয়ে আত্মীয়দের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হচ্ছে আশা কর্মীদের। গালিগালাজ তো আছেই। মারধরের হুমকিও মেলে।

বেহাল রাস্তার কথা মেনে নিয়ে রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতালের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার প্রণবেশ হালদার বলেন, ‘‘এলাকায় বেহাল রাস্তার কারণে মাঝপথে গাড়িতেই প্রসব হয়ে যাচ্ছে। রাস্তাগুলি সারানোর জন্য পঞ্চায়েতে সভা ডেকে বলা হয়েছে। তা একাধিকবার ব্লক প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন