অ্যাসিড ছড়িয়ে রাখতে হয় পুলিশ ক্যাম্পের ঘরে

জনসাধারণের নিরাপত্তার ভার তাঁদের হাতে। কিন্তু তাঁরাই নিরাপদ নন। ডায়মন্ড হারবারের প্রত্যেকটি পুলিশ ক্যাম্পের পরিকাঠামো বেহাল। কোনও ভেঙে পড়ে পড়ে দশা। কোথাও সাপখোপের উপদ্রব। রাতে শান্তিতে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে না পুলিশ কর্মীরা।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৫
Share:

এর ভিতরেই চলছে ক্যম্প। —নিজস্ব চিত্র।

জনসাধারণের নিরাপত্তার ভার তাঁদের হাতে। কিন্তু তাঁরাই নিরাপদ নন।

Advertisement

ডায়মন্ড হারবারের প্রত্যেকটি পুলিশ ক্যাম্পের পরিকাঠামো বেহাল। কোনও ভেঙে পড়ে পড়ে দশা। কোথাও সাপখোপের উপদ্রব। রাতে শান্তিতে রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে না পুলিশ কর্মীরা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর পনেরো আগে বিভিন্ন এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামে কোনও ঝামেলা হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে সময় মতো পৌঁছতে পারত না। তা ছাড়া, গ্রামের রাস্তাঘাটগুলিও সে সময়ে উন্নতমানের ছিল না। ফলে পুলিশের গাড়ি ঢুকতে পারত না। পুলিশ ঠিকমতো নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না। অপরাধমূলক কাজ বন্ধ ও এলাকাগুলি ঠিকমতো দেখভালের জন্য তৈরি করা হয়েছিল পুলিশ ক্যাম্প।

Advertisement

পুলিশের থাকার ব্যবস্থা নিয়ে কেউ কোনও দিন মাথা ঘামায়নি। ফ‌লে তাঁদের ঠাঁই হয়েছে কোনও ক্লাব ঘরে, কোনও পুরনো বাড়ি কিংবা গ্রন্থাগারে, স্কুলে, পঞ্চায়েতে। এমনকী, হাসপাতালের ঘরেও পুলিশ ক্যাম্প চলছে। ক্যাম্পগুলির দীর্ঘ দিন কোনও সংস্কার হয় না।

ওই মহকুমা এলাকায় রয়েছে ডায়মন্ড হারবার, ফলতা, রামনগর, উস্তি, মগরাহাট, মন্দিরবাজার, কুলপি, মথুরাপুর ও রায়দিঘি-সহ ৯টি থানা। পুলিশ ক্যাম্প রয়েছে প্রায় ৪০টি। প্রত্যেকটি ক্যাম্পে পুলিশ কর্মী রয়েছেন চার-পাঁচ জন করে।

রায়দিঘিতে রয়েছে ৪টি পুলিশ ক্যাম্প। কাশীনগর সব্জি বাজারে টিনের ছাউনি দিয়ে কোনও রকমে চলছে পুলিশ ক্যাম্প। বহু বছর ধরে কোনও সংস্কার না হওয়ায় ভেঙে পড়েছে। পলিথিন দিয়ে ছাউনি করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাতে কিছু লাভ হয়নি। বৃষ্টি হলেই ভিজতে হয়। পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। শৌচাগারও নেই। একই অবস্থা ছিল জটার পুলিশ ক্যাম্পটির। একটি বিপজ্জনক পরিত্যক্ত ঘরে পুলিশ কর্মীরা থাকতেন। দিন কয়েক আগে তাঁদের সেখান থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে।

মথুরাপুরেও রয়েছে ৪টি পুলিশ ক্যাম্প। দেবীপুর গ্রামে একটি টালির চালের ঘরের মধ্যে পুলিশ ক্যাম্প চলছে। সেখানে থাকেন ৪ জন পুলিশ কর্মী। চাল চুঁইয়ে জল পড়ে। বড় গাড়ি রাস্তা দিয়ে গেলে বাড়ি কেঁপে ওঠে। ওই ঘরে আবার মাঝে মধ্যে দেখা মেলে বিষধর সাপের। চারিদিকে অ্যাসিড ছড়িয়ে রাখতে হয়। অ্যাসিডের গন্ধে আবার পুলিশ কর্মীরাই অসুস্থ বোধ করেন। জল কিনে খেতে হয়।

একই অবস্থা মগরাহাটের ৭টি পুলিশ ক্যাম্পের। উস্তি এলাকায় রয়েছে ৬টি পুলিশ ক্যাম্প। এর মধ্যে বামনা গ্রামের ক্যাম্পটির ঘর ভগ্নপ্রায়।

ডায়মন্ড হারবারে রয়েছে ৫টি পুলিশ ক্যাম্প। এর মধ্যে পঞ্চগ্রামের হাসপাতালে চলে একটি ক্যাম্প। বাকিগুলির মধ্যে মরুইবেড়িয়া গ্রামের টালির চালের পুলিশ ক্যাম্পটি বিপজ্জনক ভাবে রয়েছে। কুলপিতে রয়েছে চারটি, মন্দিরবাজারে রয়েছে ৭টি, ফলতা ও রামনগরে ২টি করে ক্যাম্প আছে। ওইগুলির বেশির ভাগেরই খারাপ অবস্থা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ কর্মীরা অনেকে বললেন, ‘‘আমাদের দুর্দশার কথা কারও অজানা নয়। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ভবনগুলির বছরের পর বছর সংস্কার হয় না। ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হয়। এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘এমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে।’’

থানার আধিকারিকেরাও স্বীকার করেছেন সমস্যার কথা। তাঁদের কারও কারও বক্তব্য, এ বিষয়ে তাঁদের কিছু করার নেই। ক্যাম্পের কিছু কিছু সমস্যা স্থানীয় বাসিন্দারা মেটানোর চেষ্টা করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন