মৌখালী

উদ্বোধনের পরেও পরিষেবা অমিল প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে

প্রায় দু’ দশক ব্লকটিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল না। বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে সম্প্রতি ব্লকের উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মর্যাদাও দেওয়া হল। কিন্তু অভিযোগ, এখনও তা শুধুই খাতায়-কলমে। উদ্বোধন হওয়ার পরে চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চালু হল না দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লকের মৌখালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা।

Advertisement

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪৮
Share:

(উপরে) নব নির্মিত ভবন। (নীচে) রোগীর প্রতীক্ষায় ফাঁকা শয্যা। — নিজস্ব চিত্র

প্রায় দু’ দশক ব্লকটিতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল না। বাসিন্দাদের দীর্ঘ দিনের দাবি মেনে সম্প্রতি ব্লকের উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মর্যাদাও দেওয়া হল। কিন্তু অভিযোগ, এখনও তা শুধুই খাতায়-কলমে। উদ্বোধন হওয়ার পরে চার সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও চালু হল না দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর দু’নম্বর ব্লকের মৌখালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা।

Advertisement

হাসপাতাল সূত্রে খবর, ফাঁকা পড়ে রয়েছে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য বরাদ্দ পাঁচটি করে নতুন শয্যা, সদ্যোজাতের বিশেষ শয্যা, অপারেশন টেবিল-সহ চিকিৎসার সরঞ্জাম। আর এ সব সরঞ্জাম নিয়ে তালা বন্ধ পড়ে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা খরচে জেলা পরিষদের তৈরি করে দেওয়া নতুন ভবনটি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, রসপুঞ্জ গ্রামপঞ্চায়েত এক সময়ে বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকের অধীন ছিল। শ্যামালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির ভৌগোলিক অবস্থান রসপুঞ্জে হওয়ায় তাও বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকেই ছিল। নব্বইয়ের দশকের গোড়ায় ওই ব্লক ভেঙে ঠাকুরপুকুর মহেশতলা (টিএম) ব্লকটি তৈরি হয়। রসপুঞ্জ নতুন ব্লকে চলে যায়। তখন থেকেই শ্যামালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র টিএম ব্লকে যায়। সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকের মৌখালী উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করা হবে। সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হতেই পেরিয়ে গেল দু’দশক। কিন্তু খাতায়
কলমে উদ্বোধন হয়েও অমিল ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা।

Advertisement

এখনও কেন মৌখালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরিষেবা মিলছে না? ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক অঞ্জন বসু বলেন, ‘‘ডাক্তার না থাকাই পরিষেবা বন্ধের অন্যতম কারণ।’’ কবে শুরু হবে? উত্তর জানা নেই তাঁর।

প্রশাসন সূত্রের খবর, গ্রামীণ এলাকায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামো ত্রিস্তরীয়। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি হেল্থ সেন্টার। প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীন থাকে একাধিক উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসায় নিরাময় না হলে সেখান থেকে রেফার করা হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষিত করার পাশাপাশি সদ্যোজাতের টিকাকরণ কর্মসূচী, জন্ম নিয়ন্ত্রণ, মা ও সদ্যোজাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডায়রিয়া, কুকুরের কামড়, সাপ ও বিষাক্ত পোকার কামড় প্রভৃতির চিকিৎসার পরিকাঠামো থাকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। এত বছর সেই পরিষেবা পেতে বিষ্ণুপুর দু’ নম্বর ব্লকের বাসিন্দাদের যেতে হত আমতলা গ্রামীণ হাসপাতালে অথবা শ্যামালীতে। দূরত্বের কারণে সমস্যা হত স্থানীয়দের।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে খবর, প্রায় পঞ্চাশ বছরের পুরনো এই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। আগে স্বাভাবিক প্রসব, কাঁটা-ছেঁড়ার চিকিৎসা হত। দশ বছর বন্ধ সেই পরিষেবাও। এখন চলে শুধু আউটডোর। স্বাস্থ্যকেন্দ্র লাগোয়া বাড়ি শ্যামল জাসুর। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি দিন এই হাসপাতালে গড়ে শ’ দুয়েক রোগী আসেন। এক জন মাত্র ফার্মাসিস্ট আছেন। তিনিই সপ্তাহে ছ’দিন রোগী দেখেন।’’

কেন এত বছর কোনও প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছাড়া চলল একটি ব্লক? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথী বলেন, ‘‘এটা অনেক পুরনো বিষয়। আমার জানা নেই।’’ পরিষেবা শুরুর বিষয়ে তাঁর আশ্বাস, ‘‘‘দু’জন মেডিক্যাল অফিসার ও দু’জন জিএনএম নার্সের জন্যে স্বাস্থ্য ভবনে আবেদন করা হয়েছে । দ্রুত নিয়োগের চেষ্টা চলছে। মার্চের মধ্যেই শুরু হবে পরিষেবা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন