ছাদের উপরে তৈরি ‘বাঞ্ছারামের বাগান’

বাড়ির ছাদে যেন এক টুকরো জঙ্গল। বাগান নয়, সত্যিই জঙ্গল! কী নেই সেখানে? কোথাও আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, দেবদারু। আবার কোথাও করমচা, বেদানা, ন্যাসপাতি, আঙুর, কমলালেবু, আখ।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫৫
Share:

ছাদে নিজের তৈরি বাগানে দেববরণ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

বাড়ির ছাদে যেন এক টুকরো জঙ্গল। বাগান নয়, সত্যিই জঙ্গল!

Advertisement

কী নেই সেখানে? কোথাও আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, দেবদারু। আবার কোথাও করমচা, বেদানা, ন্যাসপাতি, আঙুর, কমলালেবু, আখ। এ ছাড়াও রয়েছে লাউ, কুমড়ো, ঢ্যাঁড়স, উচ্ছে, ঝিঙে। ছাদে ছায়া দিতে লাগানো হয়েছে বট, কদবেল, কামিনী, আমলকী, ডুমুর, পাকুড়। আম গাছের মধ্যে রয়েছে মল্লিকা, গোলাপখাস, হিমসাগর, আম্রপালি। আছে ফলসা, সবেদা, কালো আঙুর, স্ট্রবেরি, রসুন, আদা, পেঁয়াজ, কচু, কলা, আনারস এমনকী বাঁশ গাছ পর্যম্ত!

ছাদেই তৈরি করা হয়েছে কৃত্রিম জলাশয়। সেখানে মাথা তুলেছে পদ্ম। জলে খেলে বেরোচ্ছে সিঙি, মাগুর, খলসে এবং তেলাপিয়া। সুন্দরবন থেকে নিয়ে এসেছেন সুন্দরী গাছ। দোতলার ছাদের উপরে রয়েছে আরও দু’টি কাঠের ছাদ। সেগুলিও আসলে গাছের ঘর।

Advertisement

হাসনাবাদের আষাড়িয়া নারায়ণপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তথা হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক দেববরণ সরকারের রূপনগরের গলদা গ্রামের বকুলতলার বাড়ির ছাদকে পড়শিরা বলেন, ‘বাঞ্ছারামের বাগান।’

বাড়ি দোতলা। কিন্তু হরেক গাছের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য কাঠ এবং কংক্রিটের সিঁড়ি দিয়ে ছাদের উপরে আরও দু’টি তলা তৈরি করা হয়েছে। দেবনারায়ণবাবু জানালেন, সব মিলিয়ে তাঁর তৈরি জঙ্গলের পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার বর্গ ফুট।

বাঞ্ছারামের বাগানে গাছের মধ্যে রয়েছে পাখির বাসা এবং বোলতার চাক। এ দিক ও দিক ঘুরে বেড়ায় গোসাপ, বিড়াল, গিরগিটি। মাঝে মাঝে সাপেরও দেখা মেলে। সকলের সঙ্গেই দেবনারায়ণবাবুর দীর্ঘ দিনের সম্পর্ক। তাঁর কথায়, ‘‘মনে হয় গাছগুলো আমার কথা শোনে। তাই যে গাছই লাগাই না কেন, কেউ আমাকে হতাশ করে না। বেঁচে থেকে, ফুল-ফল দিয়ে আনন্দ দেয়।’’ গাছে রাসায়নিক সার, কীটনাশকের ব্যবহার করেন না তিনি। ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক রয়েছে। তাই পুকুরের জল পাম্প করে তুলে গাছে দেন।

গভীর রাত পর্যন্ত নিজের তৈরি জঙ্গলের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন গাছ-পাগল মানুষটি। তাঁর এই শখ পূরণে তিনি শুরু থেকেই পরিবারকে পাশে পেয়েছেন। স্ত্রী শাশ্বতীদেবী দর্শনের শিক্ষিকা। মেয়ে বাসবী সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। ছেলে ঋতদীপ পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। সকলেই দেববরণবাবুর জঙ্গলের পরিচর্যায় হাত লাগায়।

শাশ্বতীদেবীর কথায়, ‘‘প্রতিটি গাছই আমাদের পরিবারের অংশ। তাদের যত্ন তো নিতেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন