Probablity of Accident reduced

পুলিশের নজরদারি, রাস্তা সম্প্রসারণে কমেছে দুর্ঘটনা

পথ দুর্ঘটনার পরিসংখ্যানের বিচারে সারা দেশের মধ্যে একাদশতম স্থানে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রকের প্রকাশিত সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে দুর্ঘটনার কারণ চিহ্নিত করে সামগ্রিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দুই জেলার গুরুত্বপূর্ণ কিছু সড়কের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার

Advertisement

ঋষি চক্রবর্তী

বারাসত শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৫০
Share:

২০০৭ সালের ৭ এপ্রিল তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতা ফিরছিলেন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে। উল্টো দিক থেকে আসা একটি লোহার রড বোঝাই লরির সঙ্গে প্রণববাবুর গাড়ির মুখোমুখি ধাক্কা লাগে। প্রণববাবুর মাথা ফাটে। চোট পান তাঁর পাশে থাকা মানস ভুঁইঞা। গুরুতর জখম হন চালকও।

Advertisement

সকলে পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে (অধুনা ১২ নম্বর) দুর্ঘটনায় অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন গত কয়েক বছরে। পঙ্গু হয়েছেন বহু মানুষ। বিদেশমন্ত্রীর দুর্ঘটনার পরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ শুরু হয়। প্রশাসনের দাবি, জাতীয় সড়ক চওড়া হতেই কমেছে দুর্ঘটনা, মৃত্যুর সংখ্যা।

কিছু অংশ বাদে দুই লেনের জাতীয় সড়ক এখন চার লেনের হয়েছে। পুলিশের দাবি, বারাসত পুলিশ জেলার অন্তর্গত এই রোডে এখন দুর্ঘটনা অনেকটাই কমেছে। গত এক বছরে দুর্ঘটনায় জখম হন সাত জন। মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের।

Advertisement

কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের ডালখোলা পর্যন্ত সড়কটি চার লেন করার জন্য ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটে ২০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। ৫০০ কিলোমিটার রাস্তার ৯৫ শতাংশই চার লেনের হয়েছে। জমি না মেলায় বারাসত থেকে বড়জাগুলি পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার রাস্তা চওড়া করার কাজ শুরু হয়নি আজও। ২০০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েও ওই এলাকায় জমি পাওয়া যায়নি। বিষয়টি গড়ায় আদালতে। ইতিমধ্যে রায়ও দিয়েছে আদালত। প্রশাসনের দাবি, আদালতের রায় মেনেই জমি কেনা হবে।

বারাসত জেলা পুলিশের দাবি, গত তিন মাসে বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি এই সড়কে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, মাঝে মধ্যে ছোটখাট দুর্ঘটনা ঘটে। মূলত, বেপরোয়া গতিতে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে গাড়ি। পুলিশের দাবি, গতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জনবসতি ও বাজার এলাকায় রাস্তার উপরে লোহার ব্যারিকেড দেওয়া, গতি মাপার যন্ত্র দিয়ে নজরদারি করা, টহলদারি চলছে। এত কিছুর পরেও সাইকেল ও বাইক আরোহীদের অসতর্কতার ফলে কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে। পুলিশের দাবি, বিশেষ করে প্রবীণেরা সাইকেল নিয়ে অসচেতন ভাবে দ্রুত গতির গাড়ির সামনে চলে আসেন। আবার কিশোর ও যুবকেরা বেপরোয়া ভাবে বাইক চালাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য গাড়িতে ধাক্কা মারে।

স্থানীয় সূত্রের খবর, বারাসতের হেলাবটতলা থেকে সন্তোষপুর মোড় পর্যন্ত রাস্তা চার লেন হওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটে না বললেই চলে। তবে সন্তোষপুর মোড় থেকে আমডাঙা থানার রাজবেড়িয়া পর্যন্ত রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটছে। জমিজটের কারণে এখানে সড়ক সম্প্রসারণ হয়নি। সঙ্কীর্ণ রাস্তা দিয়ে যাতায়াতের সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময়েই রাস্তার এই অংশ ভাঙাচোরা থাকে। শীতের মরসুমে কুয়াশায় জেরে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি।

সোনাডাঙার বাসিন্দা রমজান আলি বলেন, “বছর পনেরো আগে আমার এক আত্মীয় বাসের ধাক্কার গুরুতর আহত হন। আজও তিনি পঙ্গু। গত কয়েক বছরে এলাকার চার জন দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন। পিচ রাস্তা থেকে ফুটপাত বেশ নিচু হওয়ায় সাইকেল ও বাইক আরোহীরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন।” আমডাঙার বাসিন্দা বিধান ঘোষ বলেন, “আগে প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটত। এখন অনেক কমেছে। পুলিশের নজরদারির কারণে গাড়ির গতি কমেছে।”

গাড়ি চালকদের দাবি, রাস্তা সঙ্কীর্ণ হওয়ায় গাড়ি চালাতে সমস্যা হয় বেশি। তার উপরে নিয়ম ভেঙে অনেক গাড়ি অতিরিক্ত উজ্জল আলো ব্যবহার করার ফলে উল্টো দিক থেকে গাড়ি চালাতে সমস্যা হয়। চালক রাজকুমার মণ্ডল বলেন, “দূরপাল্লার পণ্যবাহী ট্রাক ও বাসের আলোর জন্য সরকারের গাইড লাইন কঠোর হওয়া প্রয়োজন। ছোট গাড়ি চালাতে খুবই সমস্যা হয়।”

উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক শরদ কুমার দ্বিবেদী বলেন, “আদালতের রায় মেনেই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য জমি কেনা হবে। শীঘ্রই বসা হবে জমিদাতাদের সঙ্গে। নতুন বছরেই শুরু হবে কাজ।” বারাসত পুলিশ জেলার সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “রাস্তায় গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে জনবহুল এলাকায় গার্ডরেল দেওয়া হয়েছে। সব সময়ে টহলদারি চলে। গতি নিয়ন্ত্রণ মেশিন বসানো থাকে বেশ কিছু এলাকায়। নিয়ম ভাঙলে জরিমানা করা হয়।”

পুলিশ জানিয়েছে, নিয়ম করে ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করা হয়। বোঝানো হয়, হেলমেট পরে বাইক চালানোর উপকারিতা। নাবালকদের গাড়ি না চালানোর ব্যাপারে সচেতন করা হয়। তবুও নাবালকদের কাছে বাইক ও ছোট চারচাকার গাড়ি দেন বহু অভিভাবক। দুর্ঘটনা ঘটে। সুপার বলেন, “নাবালকদের হাতে কোনও রকম গাড়ি দেবেন না, এ কথা অভিভাবকদের বার বার বোঝানো হয়। নিজের জীবন সুরক্ষায় হেলমেট ব্যবহার করবেন বাইক চালানোর সময়ে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন