প্রতীকী ছবি।
নামেই নার্সিংহোম। কিন্তু সেখান থেকে কোনও জরুরি পরিষেবাই মেলে না বনগাঁয়। বেশিরভাগ নার্সিংহোমে টুকটাক সিজার, গল ব্লাডার স্টোন অপারেশন, অ্যাপেনডিক্স এবং হাড়ের ছোটখাট অস্ত্রোপচার হয়। কোথাও ডাক্তার কম। কোথাও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সের অভাব প্রকট। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতারও অভাব চোখে পড়ে। শহরের এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘নার্সিংহোম না বলে এদের আঁতুড় ঘর বলাই ভাল!’’
১১-৩০ হাজার টাকার নানা রকম প্যাকেজ আছে নার্সিংহোমগুলির। ওই একই কাজ বনগাঁ মহকুমায় গেলে বিনা খরচে হয়। কিন্তু বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু চিকিৎসকই বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নার্সিংহোমে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। বেশির ভাগ নার্সিংহোমে সর্বক্ষণের জন্য কোনও চিকিৎসক (আরএমও) থাকেন না। সিজার বা অস্ত্রোপচারের সময়ে শল্য চিকিৎসকদের ডেকে আনা হয়। হঠাৎ রোগীর অবস্থার অবনতি হলে সমস্যায় পড়েন রোগীর পরিজন। দু’একটি নার্সিংহোম বাদ দিলে রক্ত পরীক্ষা বা অন্য কোনও পরীক্ষারও ব্যবস্থা নেই সেখানে। একটি নার্সিংহোমে হাতুড়ে চিকিৎসকও অস্ত্রোপচার করেন বলে অভিযোগ শোনা গেল।
বনগাঁ পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলর দীপেন্দু বিকাশ বৈরাগীর অভিযোগ, ‘‘একটি নার্সিহোমের কথা জানি, যেখানে সিজার করতে নেওয়া হয় ১৬ হাজার টাকা। গরিব মানুষকে একবার বুঝিয়ে-সুঝিয়ে ভর্তি করার পরে নানা ভাবে বিল বাড়ানো হয়।’’ বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের অভিযোগ, ‘‘রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনাভুক্ত মানুষের চিকিৎসার খরচ দেয় সরকার। কিন্তু ওই সব মানুষ নার্সিংহোমে গেলে তাদের কাছ থেকে কেউ কেউ নানা উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়। আবার সরকারের কাছ থেকেও ওই চিকিৎসা বাবদ টাকা পায়।’’
বনগাঁর এক চিকিৎসক যিনি নার্সিংহোমে অস্ত্রোপচার করেন, তিনি জানালেন, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্যবিমা যোজনাভুক্ত কোনও রোগী ভর্তির পরে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময়ে নার্সিংহোমের পক্ষ থেকে পাঁচ দিনের ওষুধ দেওয়া হয়। যাতায়ত খরচ হিসাবে দেওয়া হয় ১০০ টাকা। কিন্তু যে ওষুধ তাদের দেওয়া হয়, তার গুণগত মান ভাল নয়।’’
চিকিৎসকেরা যে প্যাকেজের ভিত্তিতে নার্সিংহোমে রোগী পাঠান, তাতে নার্সিংহোমের লাভ নামমাত্র বলে জানালেন একটি নার্সিংহোমের মালিক স্বপন চক্রবর্তী। কোনও কোনও চিকিৎসকের আবার বক্তব্য, নার্সিংহোম যখন সরাসরি রোগীর সঙ্গে কথা বলে প্যাকেজ ঠিক করে, সেখানে চিকিৎসকদের দেওয়া হয় সামান্য টাকা। নার্সিংহোম মালিকদের দাবি, গরিব মানুষের জন্য এখানে ছাড় দেওয়া হয়। নার্সিংহোম চালিয়ে তাদের লাভও বিশেষ হয় না। একটি নার্সিংহোমের মালিক প্রভাত সরকার বলেন, ‘‘হার্টের চিকিৎসা বা জরুরি পরিষেবা চালু করতে হলে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসকের প্রয়োজন। তা এখানে পাওয়া যায় না। সমস্যা প্রচুর।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘ওই সব নার্সিংহোম থেকে রোগী হয়রানির অভিযোগ তুলনায় অনেক কম আসে আমাদের কাছে। এলে আমরা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে দিই।’’
তবে নার্সিংহোমগুলির উপরে এখন কড়া নজর রাখা হচ্ছে। বনগাঁর পুরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘শীঘ্রই শহরের নার্সিংহোমের মালিকদের নিয়ে বৈঠক করা হবে। তাঁরা যাতে মানুষের চিকিৎসার টাকা নিয়ে মানবিক আচরণ করেন, তা তাঁদের বলা হবে।’’