কয়েনে নাকাল পুজো উদ্যোক্তারা

এত খুচরো জমে গিয়েছে, যার কারণে দুর্গা পুজোর চাঁদা তুলতে গিয়ে এমন কাকুতি-মিনতি করতে দেখা গিয়েছে উদ্যোক্তাদের। বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যদের ক্ষোভ, এ বারে যেখানেই পুজোর চাঁদা তুলতে যাওয়া হচ্ছে, সেখানে সকলে প্রায়ই কয়েনে চাঁদা দিচ্ছেন।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১১
Share:

কয়েন হাতে পুজো উদ্যোক্তারা। নিজস্ব চিত্র

‘দাদা দয়া করে এত খুচরো দেবেন না।’ ‘প্রয়োজনে চাঁদা কম দিন।’ ‘কয়েন না দিয়ে নোট দিন।’

Advertisement

এত খুচরো জমে গিয়েছে, যার কারণে দুর্গা পুজোর চাঁদা তুলতে গিয়ে এমন কাকুতি-মিনতি করতে দেখা গিয়েছে উদ্যোক্তাদের। বিভিন্ন পুজো কমিটির সদস্যদের ক্ষোভ, এ বারে যেখানেই পুজোর চাঁদা তুলতে যাওয়া হচ্ছে, সেখানে সকলে প্রায়ই কয়েনে চাঁদা দিচ্ছেন। এত কয়েন জমে যাচ্ছে যে, তা দিয়ে পুজোর যাবতীয় আয়োজন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাঁদের আভিযোগ, মৃৎশিল্পীকে প্রতিমার দাম দিতে গেলে তাঁরা খুচরো নিতে চাইছেন না। মণ্ডপ, আলোকসজ্জা থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রে নোট চাওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ আবার কয়েন দিলে উল্টে যা দাম তার থেকে বেশি পয়সা চাইছেন। অথচ চাঁদা দেওয়ার সময় সবাই কয়েন দিচ্ছেন। এমন অবস্থা যে, রীতি মেনে পুজো করতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থা। এত আয়োজন করার পরে তো আর পুজো বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু কীভাবে যে খরচের দাম মেটানো হবে তা বোঝা যাচ্ছে না। খুচরো সমস্যায় বড় বড় পুজো কমিটিগুলির থেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন ছোট ছোট পুজো কমিটিগুলি।

সম্প্রতি বাজারে কয়েনের জোগান বেড়ে যাওয়ায় শুধু পুজো উদ্যোক্তারা যে সমস্যায় পড়ছেন তা নয়। ভুগছেন সাধারণ মানুষও। এর আগে খুচরোর জন্য নানা জায়গায় গোলমাল পর্যন্ত হতে দেখা গিয়েছে। অনেক পেট্রোল পাম্প থেকে শুরু করে বিভিন্ন দোকানে বোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ১, ২, ৫ ও ১০ টাকার কয়েন নেওয়া হবে না বলে। এ দিকে, সাধারণ মানুষের হাতে এতটাই খুচরো কয়েন জমে গিয়েছে যে, ব্যাঙ্কে জমা দিতে গেলেও তা নেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

Advertisement

এই সমস্যার জন্য সকলেই ‘নোট-বন্দিকে’ দায়ী করছেন। ক্যানিং মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘এটা সত্যি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনও খুচরো কয়েন অবৈধ নয়। সকলে যাতে কয়েন নেন তার জন্য বারবার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হচ্ছে। কেউ কয়েন নিতে না চাইলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারপরেও কেউ কয়েন নিতে চাইছেন না বলে অভিযোগ আসছে।’’ ওই কর্তা আরও বলেন, ‘‘নোটবন্দির সময়ে একদিকে যেমন বাজারে প্রচুর পরিমাণে নতুন খুচরো কয়েন ছাড়া হয়েছিল, তেমনি অনেকেই তাদের ভান্ডারে জমানো টাকা বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। যার কারণে হঠাৎ করে এতটা কয়েনের জোগান বেড়ে গিয়েছে।’’ এক রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বলেন, ‘‘একদিকে কর্মী সংখ্যা কম। তার উপরে এখন ব্যাঙ্কে যা ভীড় হয় কয়েন জমা নেওয়ার মতো সময় থাকে না। তবে যে সব ব্যাঙ্কে কয়েন গোনার জন্য মেসিন আছে তারা তো কয়েন জমা নিচ্ছে।’’

তা হলে কয়েন সমস্যা কাটিয়ে কী ভাবে পুজো সামলাচ্ছেন উদ্যোক্তারা?

ক্যানিংয়ের মিঠাখালি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক পরেশরাম দাস বলেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এ বছরও ঐতিহ্য মেনে পুজোর সব আয়োজন করা হয়েছে। মহকুমায় আমাদের পুজো সকলের নজর কাড়ে। অথচ এ বার পুজো করতে গিয়ে খুচরো কয়েনের জন্য সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। যেটুকু চাঁদা উঠেছে তার সবটাই প্রায় কয়েন।’’

গোলকুঠি মিলনী দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি শুভেন্দু মণ্ডলও বলেন, ‘‘এ বার পুজোতে খুচরো অন্যতম বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নোট-বন্দি, জিএসটির কারণে এমনিতেই মানুষ সমস্যায়। তার উপরে খুচরো কেউ নিতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে খরচ কমিয়ে দিয়ে কোনও রকমে পুজো করতে হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন