সকালে নমাজ পড়ে খুশির ইদ পালন, আর বিকেলে জমজমাট রথের মেলা। এ ভাবে দিনভর আনন্দ আর সম্প্রীতির মেজাজে কাটাল বসিরহাট। স্বরূপনগরে প্লাবিত কয়েকটি গ্রাম কেবল বাদ পড়ে গেল এই আনন্দ-উৎসব থেকে।
বসিরহাট মহকুমা জুড়ে শতাধিক জায়গাতে রথের মেলা বসে। হিঙ্গলগঞ্জ ব্লকের সুন্দরবন-লাগোয়া যোগেশগঞ্জের রথযাত্রার উৎসব বহু প্রাচীন । রথের আকার বেশ বড়। স্থানীয় হাই স্কুলের পাশে ঠাকুরবাড়ি এলাকা থেকে বিকেল চারটে নাগাদ দুটি রথ টানা শুরু হয়। এলাকা ঘুরে সেই রথ আসে যোগেশগঞ্জ বাজারে। একই সময়ে সর্দারপাড়া এলাকা থেকে আরও একটি রথ আসে যোগেশগঞ্জ বাজারে। সেখান থেকে পাটঘরা গ্রামে মাসির বাড়ি যাত্রা।
রথের উপরেই ঢাক-কাঁসি-সহ নানা বাজনা চলে। ফুল, মালা আর আলোয় সাজানো তিনটি রথের যাত্রা পথের দু’পাশে কয়েক হাজার মানুষের ভিড় জমে যায়। তিনটি রথের উদ্যোক্তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে, কার রথ কত সুন্দর করে সাজানো যায়, কে কত প্রসাদ দর্শকদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে। সুন্দরবন-লাগোয়া যোগেশগঞ্জ বাজারে তিনটি রথ দেখতে এবারে মাধবকাটি, হেমনগর, সামসেরনগর, কালীতলা, এমনকী টাকি-হাসনাবাদ এবং বসিরহাট থেকেও বহু মানুষ গিয়েছিলেন।
যোগেশগঞ্জ বাজারে রথযাত্রা উপলক্ষে এক সপ্তাহ ধরে মেলা বসে। স্থানীয় প্রভাস নস্কর, অসীম মৃধা বলেন, ‘২০০৯ সালের ভয়ঙ্কর আয়লা ঝড়ের পর থেকে মেলায় কেনাকাটার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে গাছের চারা। আয়লাতে ওই সব এলাকাতে প্রায় সব গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে গাছ বিক্রি এবং গাছ লাগানো এলাকার মানুষের কাছে গুরুত্ব পেয়েছে।’’ তাঁরা জানান, সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের বিনোদনের খুব বেশি উপকরণ নেই। তাই এই তিনটি রথকে ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে নানা জিনিস কেনা থেকে শুরু করে অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ হারাতে চান না এলাকার মানুষ। তাই এত ভিড় হয় রথের মেলায়।
বসিরহাটের বড়কালী বাড়ি এলাকার রথও বহু প্রাচীন। এখানে রথ উপলক্ষে টাকি রাস্তা জুড়ে মেলা বসে। মেলায় পুতুল, বেলুন, চুড়ি, জিলাপি আর পাঁপড় ভাজা যেমন মেলে, তেমনি আম, জাম, নারকেল, পেয়ারা, গোলাপ, জবা-সহ নানা রকম ফুল-ফলের গাছ বিক্রি হয়। মেলার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে কাঠের চেয়ার, টেবিল, খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল-সহ নানা ধরনের আসবাবপত্র। রঘুনাথপুর, মির্জাপুর, হরিশপুর ,হাসনাবাদ, ভেবিয়া, মহেশপুর, টাকি,বাদুড়িয়া, রথতলা,উত্তরদিয়াড়া, চন্ডিপুর, কাটিয়াহাট, চারঘাট, হাড়োয়া, স্বরূপনগর, ট্যাটঁরা, মিনাখাঁ, সন্দেশখালির অনেক জায়গাতেই রথ যাত্রার অনুষ্ঠান হয়। রথ উপলক্ষে কোথাও ফুটবল কোথাও নদীতে নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা হয়।
দেগঙ্গার বেড়াচাঁপায় প্রাচীন রথের মেলা বসে স্থানীয় ভ্রাতৃসংঘ এবং প্রগতি সংঘের মাঠে। নানা ধরনের বাজনার সঙ্গে প্রায় ২৫ ফুট লম্বা রথ টানা হয়। যা দেখতে রাস্তার দু’পাশে ভিড় জমে যায়। এক সপ্তাহ ধরে মেলা উপলক্ষে নাটক, যাত্রা দেখার পাশাপাশি নানা জিনিসপত্র কেনাকাটা করে বাড়ি ফেরেন সকলে।
বসিরহাটের বিভিন্ন এলাকায় খুশির ইদ পালনের জন্য রঙিন কাগজ, বেলুন দিয়ে সাজানো হয়। রাস্তার পাশে রঙিন তোরণ, আলো দিয়ে সাজানো হয় এলাকা। সাজানো হয় ঈদগাহ্, মসজিদ এলাকা।
বসিরহাটের ত্রিমোহনী, শুকপুকুরিয়া, পশ্চিম দন্ডিরহাট, সাঁইপালা, হাড়োয়া, মিনাখাঁ-সহ মহকুমার একাধিক জায়গাতেও খুশির ইদ পালনে ঝলমলে গেট করা হয়েছে। বসিরহাটের আর এন মুখার্জি রোডে সমাজসেবী প্রতিষ্ঠানের সরফরাজ আলি রাজ, বুরহানুল মুকাদ্দিন লিটন বলেন, ‘‘কেবল এবারেই নয়, ঈদের দিনে গরিব মানুষের হাতে নতুন পোষাক তুলে দেওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।’’
এক দিকে খুশির ইদ, অন্য দিকে রথযাত্রা। এমন দিনে গরিব মানুষের হাতে তুলে দেওয়া হয় লুঙ্গি, গামছা, শাড়ি, জামা-কাপড়।