রিপোর্টে এক সন্তান, প্রসব দু’টির

আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘ওয়ান‌ লাইফ’। প্রসূতি ও তাঁর পরিবারকে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, এক সন্তানের জন্ম হতে চলেছে। কিন্তু বসিরহাট জেলা হাসপাতালে প্রসবের সময় দেখা গেল, গর্ভে শিশু ছিল দু’টি। কন্যাসন্তানটি মৃত। তবে পুত্রসন্তান ও মা ভাল আছে।

Advertisement

নির্মল বসু

বসিরহাট শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০২:১৬
Share:

নবজাতক: বসিরহাট হাসপাতালে সন্তান কোলে মা। নিজস্ব চিত্র

আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্টে লেখা ছিল, ‘ওয়ান‌ লাইফ’। প্রসূতি ও তাঁর পরিবারকে চিকিৎসক জানিয়ে দেন, এক সন্তানের জন্ম হতে চলেছে। কিন্তু বসিরহাট জেলা হাসপাতালে প্রসবের সময় দেখা গেল, গর্ভে শিশু ছিল দু’টি। কন্যাসন্তানটি মৃত। তবে পুত্রসন্তান ও মা ভাল আছে।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে বসিরহাট জেলা হাসপাতালের বিছানায় নবজাতককে জড়িয়ে ধরে মা সরিফা বিবি বলেন, ‘‘পরীক্ষার রিপোর্ট ঠিক এলে বা সঠিক চিকিৎসা হলে হয় তো যমজ সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরতে পারতাম।’’

সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও ক্লিনিকের (যেখানে আলট্রাসনোগ্রাফি হয়েছিল) বিরুদ্ধে তদন্ত করে শাস্তি চেয়েছেন সরিফা। অভিযোগ করেছেন বসিরহাট হাসপাতালের সুপার শ্যামল হালদারের কাছেও।

Advertisement

শ্যামলবাবু বলেন, ‘‘মাস চারেক আগের একটি আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট নিয়ে সোমবার সকালে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হন মিনাখাঁর ঘোনারবনের বাসিন্দা সরিফা। ওই রিপোর্টে একটি সন্তানেরই উল্লেখ ছিল। মহিলা এতটাই অসুস্থ ছিলেন, যে নতুন করে আলট্রাসনোগ্রাফি করানো সম্ভব হয়নি।’’ তিনি জানান, চিকিৎসক যুগলকিশোর পাঁজার কাছে স্বাভাবিক প্রসব করেন ওই মহিলা। তখনই জানা যায়, একটি নয়, গর্ভে দু’টি শিশু রয়েছে। দিন কয়েক আগে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গর্ভে মৃত সন্তান বেশি দিন থাকলে মহিলা ও অন্য সন্তানের জীবনসংশয়ও হতে পারত বলে মনে করেন শ্যামলবাবু।

এমন রিপোর্ট তৈরির পিছনে চিকিৎসক বা সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের কোনও অন্য চক্রান্ত আছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সরিফার বাড়ির লোকজন। তাঁর স্বামী আবদুল্লা মণ্ডল, ননদ বিলকিস গাজিদের বক্তব্য, ‘‘যে চিকিৎসককে দেখানো হয়েছিল আগে, তাঁর হাতে নার্সিংহোমে প্রসব হলে হয় তো দু’টি শিশু জন্মালে একটিকে দেখানো হতো। অন্যটিকে পাচার করে দেওয়া হতো।’’

বসিরহাটের বদরতলার একটি নার্সিংহোমের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের দাবি, তিনি আলট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখে চিকিৎসা চালিয়েছিলেন। প্লেট দেখেননি।

এই যুক্তি শুনে বিস্মিত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। সুপার বলেন, ‘‘একে তো ওই প্লেট দেখা উচিত ছিল চিকিৎসকের। তা ছাড়া, ক্লিনিক্যালি দেখেও (চোখে দেখে) চিকিৎসকের বোঝা উচিত ছিল, গর্ভে একটি নয়, দু’টি সন্তান বড় হচ্ছে।’’

সরিফার পরিবার জানাচ্ছে, বদরতলার ওই নার্সিংহোমের চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই স্থানীয় একটি ক্লিনিক থেকে আলট্রাসনোগ্রাফি হয়েছিল। সোমবার মহিলা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই চিকিৎসকের চেম্বারে আনা হয়। তিনি দ্রুত একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শও দেন। কিন্তু প্রসুতির আত্মীয়রা অস্ত্রোপচারের পক্ষপাতী ছিলেন না। স্বাভাবিক প্রসবের জন্য সরিফাকে বসিরহাট হাসপাতালে আনা হয়।

কী যুক্তি দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকের মালিক? সত্যি সত্যিই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগসাজশে শিশু পাচারের চক্রান্ত নয় তো?

ক্লিনিকের মালিকের কথায়, ‘‘পরীক্ষায় কোনও ভাবে একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। আমরা দুঃখিত।’’ যে টেকনিশিয়ান পরীক্ষা করেছিলেন, তিনিও দুঃখপ্রকাশ করেছেন বলে জানান ক্লিনিকের মালিক।

কিন্তু ঠিকঠাক রিপোর্টের ভিত্তিতে উপযুক্ত চিকিৎসা, পরিচর্যা পেলে কন্যাসন্তানটিকেও হয় তো বাঁচানো যেত, এটাই আফসোস সরিফা-আবদুল্লাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন