Ganga Sagar Mela 2024

নতুন ঘাটেও ভাঙন রোখা যাচ্ছে না, চিন্তায় প্রশাসন

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরের ১ নম্বর স্নানঘাট থেকে ৬ নম্বর স্নানঘাটে মেলার আগে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন করে পাড় বানানো হয়েছিল।

Advertisement

সমরেশ মণ্ডল

সাগর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৪ ১০:১৩
Share:

জল বেড়ে এই অবস্থা স্নানঘাটের। —নিজস্ব চিত্র।

মকর সংক্রান্তির পুণ্যস্নান শুরু, রবিবার রাত ১২টা ১৩ মিনিট থেকে। তার আগেই, রবিবার ভোর থেকে ভিড় উপচে পড়েছে গঙ্গাসাগরের পুণ্যতীর্থে। সমুদ্র তটের স্নানঘাট ১-ক, ৪, ৫ ও ৬ নম্বর রাস্তায় পুণ্যার্থীদের ঢল নেমেছে। অন্য দিকে ১, ২ ও ৩ নম্বর স্নানঘাটের অবস্থা খুব খারাপ থাকায় ওই সমস্ত ঘাটগুলিতে পুণ্যার্থীদের নামতে বারণ করে দেওয়া হচ্ছে। তাঁদের ঘুরপথে অন্যান্য স্নান ঘাটে পাঠানো হচ্ছে। ফলে কিছুটা হলেও হয়রানি হচ্ছে বলে জানালেন অনেক পুণ্যার্থী।

Advertisement

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সাগরের ১ নম্বর স্নানঘাট থেকে ৬ নম্বর স্নানঘাটে মেলার আগে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন করে পাড় বানানো হয়েছিল। কিন্তু মেলা শুরুর কয়েক দিনের মাথায় ঘাটগুলি বেহাল হয়ে পড়ে। এমনকী, নতুন করে ২ নম্বর স্নানঘাট এবং পরিবেশ মেলার আয়োজন যেখানে করা হয়েছিল, সেই সমুদ্রতটে জল ঢুকে যাওয়ায় বন্ধ করে দিতে হয় মেলা। ধীরে ধীরে পাড় ভাঙতে শুরু করেছে ১ নম্বর স্নানঘাট লাগোয়া জায়গা থেকে ৪ নম্বর স্নানঘাট পর্যন্ত। ফলে কোটি কোটি টাকা জলে গেল বলেই মনে করছেন অনেকে। অন্যান্য স্নানঘাটগুলির অবস্থাও ভাল নয় বলে অভিযোগ উঠছে।

রবিবার বিহার থেকে এসেছিলেন রাজারাম যাদব। বললেন, ‘‘আমি স্নান করতে গিয়ে বিপদে পড়ি। জলে নামতেই ভাঙা ইটের টুকরোয় আঘাত লেগে পড়ে যাই। পা কেটে রক্ত বেরোতে থাকে। সমুদ্রের জল বেশি থাকায় জলের তলায় কী আছে, বোঝা যায়নি।’’ মধ্যপ্রদেশ থেকে এসেছেন সঞ্জয় সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘যে ভাবে পুলিশ আমাদের পথ ঘুরিয়ে দেল, তাতে স্নান সেরে বেরোতে অনেক দেরি হল।’’

Advertisement

তবে এ বার স্নান নিয়ে অতিরিক্ত সতর্ক প্রশাসন। কারণ, প্রকৃতির খেয়ালে সমুদ্র পাড় ভেঙে আরও এগিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে মেলার দিনগুলিতে জলস্তর ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভরা জোয়ারের সময়ে সমুদ্রের জল একেবারে পাড়ে এসে ধাক্কা মারছে। তট বলতে কার্যত কিছুই আর অবশিষ্ট নেই সাগরে। সেটাই চিন্তায় ফেলেছে প্রশাসনকে। যার প্রভাব পড়েছে ১ থেকে ৩ নম্বর স্নানঘাটে।তীর্থযাত্রীরা ভিড় জমাচ্ছেন ৪, ৫ ও নতুন করে এ বছরই বানানো ৬ নম্বর স্নানঘাটে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার ভোরে জোয়ারের সময়ে স্নান করতে গিয়ে বেশি অসুবিধা হতে পারে বলে আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। বিশেষ করে, সমুদ্র আরও কাছে চলে আসায় জলের গভীরতা না বুঝলে বিপদের আশঙ্কা থাকছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আলোর সাহায্য নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। অন্ধকারে জলের গভীরতা কত, তা যাতে পুণ্যার্থীরা বুঝতে পারেন, সে জন্য বিশেষ ভাবে আলোর সঙ্কেত ফেলে সাহায্য করছে প্রশাসন।

মেলা নিয়ে রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে বলা হয়, রবিবার দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৬৫ লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছেন। সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, ‘‘রবিবার রাত থেকে সোমবার রাত পর্যন্ত সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের মধ্যে অনেক পুণ্যার্থী স্নান করবেন। তাই প্রশাসন অতিরিক্ত ভাবে সতর্ক থাকছে।’’

পাড়ের ভাঙন নিয়ে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘‘গত বছর আমরা ট্রেটাপট ব্যবহার করেছিলাম ভাঙন রোধের জন্য। কিন্তু তা পুরোপুরি সফল হয়নি। পরে আমরা আবার পাড় বাঁধিয়েছি। কিন্তু প্রকৃতির উপরে তো কারও হাত নেই। আমরা চেষ্টা করছি, মানুষের পাশে থাকার জন্য। যাতে পুণ্যার্থীরা কোনও সমস্যায় না পড়েন। যেখানে সমস্যা আছে, সেখানে স্নানে বারণ করা আছে। অন্যান্য ঘাটগুলিতে স্নান চলছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য ভাবনা-চিন্তা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন