ডাকাতির পরে। — নিজস্ব চিত্র।
ভর সন্ধ্যায় জনবহুল বাজার এলাকায় একটি বাড়িতে ঢুকে বৃদ্ধাকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে কয়েক হাজার টাকা লুঠ করে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে অশোকনগরের গোলবাজারে।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘ডাকাতির মামলা রুজু করে পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।’’ গোলবাজার এলাকায় বাড়ি অবসর প্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী মৃণাল দাসের। বাড়িতে তিনি এবং তাঁর ৫৯ বছরের বৃদ্ধা স্ত্রী উমাদেবী থাকেন। বছর দেড়েক আগে দাস দম্পতির একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছেন। প্রত্যেকদিনই সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ মৃণালবাবু বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করতে যান। ফেরেন রাত ৯টা নাগাদ। এ দিনও তিনি বাড়িতে ওই সময় ছিলেন না। যাওয়ার সময় ঘরের দরজা ভেজিয়ে দিয়ে যান। ঘরে উমাদেবী টিভি দেখছিলেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তিন দুষ্কৃতী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হঠাৎ ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা ওই বৃদ্ধাকে গামছা দিয়ে হাত পা বেধে দেয়। বৃদ্ধার শাড়ি দিয়েই তাঁর মুখ বেধে দেওয়া হয়। তারপর আলমারির চাবি চায়। বৃদ্ধা প্রথমে দিতে না চাইছিলেন না। তখন আগ্নেয়াস্ত্র বৃদ্ধার মাথায় ঠেকানো হয় বলে অভিযোগ। ঘরে থাকা একটি দা বৃদ্ধার গলায় ঠেকায় দুষ্কৃতীরা। ভয়ে বৃদ্ধা চাবি দিয়ে দেন। দুষ্কৃতীরা আমলারি থেকে মোট ৩৬ হাজার টাকা লুঠ করে ওই যুবকেরা পালায় বলে অভিযোগ। যাওয়ার আগে তারা ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দিয়ে যায়। তালার চাবি অবশ্য তালাতেই ছিল।
মৃণালবাবু সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখেন তাঁর স্ত্রীকে বেঁধে রাখা হয়েছে। মৃণালবাবু বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের মুখ খোলা ছিল। তবে আমার স্ত্রী তাদের চিনতে পারেননি। বাড়িতে সম্ভবত টাকা রয়েছে তা তারা আগের থেকেই জানত।’’ ঘটনার পর ওই বৃদ্ধা অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এই ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। গোলবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রবীর মজুমাদার বলেন, ‘‘রাত বারোটা পর্যন্ত বাজারের দোকান খোলা থাকে। লোকজন যাতায়াত করেন। তার মধ্যেই ডাকাতির ঘটনায় ব্যবসায়ীরা ভীত।’’ স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, সম্প্রতি অশোকনগর থানার পুলিশ দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে ঠিকই। তাতে দুষ্কৃতীদের অবাধ দৌরাত্ম্য বন্ধও হয়েছিল। কিন্তু ফের ডাকাতির ঘটনা ঘটল। পুলিশ সূত্রের খবর, গত মার্চ মাস থেকে এখনও পর্যন্ত অশোকনগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ২৪টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৭৪ রাউণ্ড গুলিও আটক করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, এই ঘটনার সঙ্গে স্থানীয় দুষ্কৃতীরা জড়িত নাও থাকতে পারে। কারণ স্থানীয় দুষ্কৃতী যুক্ত থাকলে তারা মুখ ঢেকে ডাকাতি করত।
ঘটনার পরই খবর পেয়ে ওই বাড়িতে আসেন স্থানীয় বিধায়ক ধীমান রায় এবং অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভার নব নির্বাচিত পুর প্রধান প্রবোধ সরকার। এলাকাটি পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শ্রীকান্ত চৌধুরীও ঘটনাস্থলে আসেন। পুরপ্রধান প্রবোধবাবু জানিয়েছেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য আগের তুলনায় অনেকটাই কমেছে। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি আমরাও ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুষ্কৃতীদের কোনও ভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’’