‘‘বলে দেবেন হাসপাতাল হবে না’’—জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে পুরপ্রধান সুভাষ দত্তকে বলা মুখ্যমন্ত্রীর ওই কথার জেরে দলের খাসতালুক হিসাবে পরিচিত গোবরডাঙাতেই এখন রীতিমতো ব্যাকফুটে তৃণমূল। আর সেই সুযোগে হাসপাতালকে হাতিয়ার করে নিজেদের হারানো রাজনৈতিক জমি ফিরে পেতে আসরে নেমে পড়েছে বামেরা।
গোবরডাঙা ও সংলগ্ন কিছু পঞ্চায়েত এলাকার প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি, গোবরডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালটি ফের চালু করুক রাজ্য সরকার। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও সরকারের কাছে ওই দাবি করেছে বহুবার। সাধারণ মানুষও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন রাজ্য সরকার ফের হাসপাতালটি চালু করবে।
স্বাভাবিক ভাবে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় এলাকাবাসীর সঙ্গে স্থানীয় তৃণমূলের নেতা কর্মীরাও হতাশ ও ক্ষুব্ধ। পুরপ্রধান সুভাষ দত্ত হতবাক।
তবে সঙ্কটে পড়েছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা তাঁরা মেনে নিতে না পারলেও প্রকাশ্যে কোনও আন্দোলন করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। প্রকাশ্যে কোনও কর্মসূচি গ্রহণ করলে তা দলবিরোধী কাজ হবে। আবার নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকাও তাঁদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। চুপচাপ বসে থাকলে জন সমর্থন হরানোর চিন্তাও আছে তাদের। তাই ইতিমধ্যেই তৃণমূল নেতৃত্ব দলীয় কর্মী সমর্থকদের রাস্তায় নামিয়ে হাসপাতালের দাবিতে মিছিলও করিয়েছে। তবে তা দলীয় কর্মসূচি ছিল না। এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আগে তো নিজেরা বাঁচি। তারপর না হয় দলের কথা ভাবা যাবে।’’
মানুষের হতাশা ও ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের জনভিত্তি ও সংগঠন বাড়াতে সিপিএম আসরে নেমে পড়েছে। তবে তা দলীয় কর্মসূচির মাধ্যমে নয়। কারণ সিপিএম নেতৃত্ব এটাও জানেন এখনও গোবরডাঙার বেশির ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে তৃণমূলের দিকেই। পুরসভার ১৭টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের দখলে ১৫টি আসন।
রাজনৈতিক মহল মনে করছে, দলীয় কর্মসূচিতে সব মানুষকে সামিল করা সিপিএমের পক্ষে এখন সম্ভব নয়। তাই নাগরিক কনভেনশন করে ‘গোবরডাঙা হাসপাতাল বাঁচাও কমিটি’ নামে সংগঠন গড়েছে। ওই কমিটির ডাকে হাসপাতালের দাবিতে মিছিলও হয়েছে।
তৃণমূল নেতৃত্বের না হয় রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা আছে। তাঁরা কেন দলীয় ভাবে হাসপাতালের দাবিতে আন্দোলন করছেন না? প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা হাসপাতাল বাঁচাও কমিটির আহ্বায়ক সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘হাসপাতালের দাবি এলাকার সব মানুষের। ওই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যাতে কোনও বিভাজন দেখা না দেয় এবং বেশি মানুষকে সংগঠিত করতে হাসাপতাল বাঁচাও কমিটি তৈরি করা হয়েছে।’’
হাসপাতাল নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অস্বস্তি বাড়াতে তাঁদের মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য সিপিএমের পক্ষ থেকে তৃণমূলকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তবে তৃণমূলের কেউ যাননি। সিপিএমের হাবরা জোনাল কমিটির সদস্য শঙ্কর নন্দী বলেন, ‘‘হাসপাতাল নিয়ে তৃণমূল কোনও কর্মসূচি নিলে আমাদের আমন্ত্রণ করলে যাব।’’ সেটা যে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের পক্ষে প্রকাশ্যে করা সম্ভব নয় ভাল করে জানেন তিনি।
গোবরডাঙা শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘গোবরডাঙাতে হাসপাতাল চালুর দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। সেই লড়াই আমাদের চলছে। থেমে যায়নি। আমাদের আশা দলীয় স্তরে মুখ্যমন্ত্রীকে বুঝিয়ে আমরা হাসপাতাল চালু করতে পারব। ফলে অন্য কারও সঙ্গে আমাদের যাওয়ার প্রশ্ন নেই।’’