প্রশিক্ষণ: বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে বনগাঁর নূতনগ্রামের বাসিন্দা সাধন গোপাল মণ্ডলের ছিল দৌড়ের প্রতি প্রবল আগ্রহ। যা মোটেই ভাল চোখে দেখেননি বাবা রণজিৎবাবু। ছেলের লেখাপড়ার ক্ষতি হবে ভেবে একবার বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন।
কয়েক দিন বাড়ির কাছে কাকার কাছে ঠাঁই মিলেছিল। পরে অবশ্য খেলার প্রতি ছেলের আগ্রহ মেনে নেন বাবা। এমন ঘটনাও ঘটে, বাবা স্কুলে গিয়ে ছুটি করিয়ে সাধনকে দৌড় প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে নিয়ে গিয়েছেন।
সাধনবাবুর এখন বাহান্ন বছর বয়স। নিয়মিত দৌড়চ্ছেন। চিনে অনুষ্ঠিত এশীয় বয়স্ক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে চলেছেন। ৪০০, ৮০০ ও ১৫০০ মিটার দৌড়ে নামবেন।
সাধনবাবুর বাড়িতে উসেইন বোল্টের প্রায় ১০০টি ছবি টাঙানো। বোল্টের ক্রীড়া দক্ষতার কথা মাথায় রেখেই সকাল-বিকেল-রাত বনগাঁ স্টেডিয়ামে ক্রীড়া প্রশিক্ষক বাদলচন্দ্র বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে প্র্যাকটিস করছেন সাধনবাবু। প্রশিক্ষকও ছাত্রের সাফল্যের বিষয়ে আশাবাদী। বললেন, ‘‘দৌড়ের প্রতি ওঁর ভালবাসা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত।’’ ভোর রাতে ট্রেন ধরে সল্টলেকে গিয়ে সাই-এও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন সাধনবাবু।
গা ঘামাতে আপত্তি নেই সাধানবাবুর। বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক মানুষটির কথায়, ‘‘মাঠ ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না। এক দিন মাঠে না এলে মন খারাপ হয়ে যায়। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পদক এনে দেশের সম্মান বাড়াতে চাই।’’
ছাত্র জীবনে ট্রাকে নেমে সাফল্য পেলেও পরবর্তী সময়ে সময়ে খেলা ছেড়ে দিতে হয়েছিল সাধনবাবুকে। একটি প্রতিযোগিতায় হাইজাম্প দিতে গিয়ে শিরদাঁড়ার হাড় ভেঙে গিয়েছিল। তা ছাড়া, ছবি আঁকার প্রতিও ছিল প্রবল আগ্রহ। সে দিকেও মন চলে যায় খানিকটা। চিত্রশিল্পী হিসাবেও নামডাক আছে সাধনবাবুর। কিন্তু বেশি দিন ট্র্যাক থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পারেননি।
স্ত্রী মণিদীপাদেবীও স্কুল শিক্ষিকা। তিনিও স্বামীকে দৌড়ে উৎসাহ দেন। বাবাও পাশে আছেন। সব মিলিয়ে ২০০৫ সাল থেকে ফের মাঠমুখী জীবন সাধনবাবুর। এর মধ্যে রাজ্য ও জাতীয় বয়স্ক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এসেছে সাফল্য। সেই সূত্রে মিলেছে চিন যাওয়ার ছাড়পত্র।