Saraswati Puja

প্রথা ভাঙতে সরস্বতী পুজো অব্রাহ্মণ মেয়ের

গত চার-পাঁচ বছর ধরে সংস্কৃতের উচ্চারণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বারুইপুরের সহেলি সর্দার। সেই দলে রয়েছেন অনেক পুরোহিতও।

Advertisement

শিবনাথ মাইতি

বারুইপুর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:২৮
Share:

রানাবেলিয়াঘাটা হাইস্কুলে পুজো করছেন সহেলি সর্দার।—নিজস্ব চিত্র।

জাতে অব্রাহ্মণ। তায় মেয়ে। তাঁরই উপরে ভার পড়েছে সরস্বতী পুজোর। প্রথা ভাঙতে কোমর বেঁধেছেন সেই মেয়েও।

Advertisement

ভাষা সংস্কৃত হলেও উচ্চারণে বাংলা টান এসে পড়ে। মাইকে পুরোহিতদের চণ্ডীপাঠ শুনলে তা স্পষ্ট ধরা পড়ে। গত চার-পাঁচ বছর ধরে সংস্কৃতের উচ্চারণ কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বারুইপুরের সহেলি সর্দার। সেই দলে রয়েছেন অনেক পুরোহিতও। এ বার পুজোয় বসবেন। বারুইপুর থানা এলাকার রানাবেলিয়াঘাটা হাইস্কুলে পুজো করবেন তিনি।

সহেলি জানাচ্ছেন, পুজোর মন্ত্র কত ভাল ভাবে উচ্চারণ করতে পারবেন সেই ভয়ের চেয়ে আশপাশের লোকজন তাঁর এই সরস্বতী বন্দনা কত ভাল ভাবে নেবেন মনে সেই ভয় কাজ করছে বেশি। তিনি বলেন, ‘‘সবেতেই তো পরিবর্তন হচ্ছে। প্রথা ভাঙছে। তা হলে পুজোর ক্ষেত্রে নয় কেন? ভয় একটু করছে ঠিকই। কিন্তু সেই ভয়কে জয় করবই।’’

Advertisement

স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, বারুইপুর থানা এলাকায় কৃষ্ণমোহন স্টেশন লাগোয়া রানাবেলিয়াঘাটা হাইস্কুলে বেশির ভাগ পড়ুয়া মুসলিম। মণ্ডপ বাঁধা থেকে প্রতিমা আনা সবেতেই স্কুলের পড়ুয়ারা। এমনকি, পুষ্পাঞ্জলি না হওয়া পর্যন্ত সকাল থেকেই না খেয়ে থাকে পড়ুায়ারা। এমন স্কুলে পুজোর ভার পড়েছে সহেলির। স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক কানাইলাল দাস সহেলিকে পুজোর জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

পুজো শেষে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সহেলি।—নিজস্ব চিত্র।

কানাইলাল জানান, ছোট থেকে সহেলিকে চেনেন। তাঁর কাছে পুরোহিতেরা প্রশিক্ষণ নিতে আসেন শুনে তাঁর স্কুলে পুজো করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। সহেলি তাতে সম্মতি দেন। কানাইলালের কথায়, ‘‘সরস্বতী কি শুধু পুরুষেরই আরাধ্য? মেয়েদের নয়? যদি মেয়েদের আরাধ্য হয় তা হলে পুরোহিত হতে অসুবিধা কোথায়?’’

তাঁর প্রশ্ন, ‘‘যিনি পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন, তিনি নিজে কেন পুজো করতে পারবেন না?’’ তাঁর আশা, এক দল পড়ুয়ার মাঝে যখন একজন মেয়ে পুরোহিত পুজো করবেন, তখন প্রথা যে ভাঙা যায় সেই বার্তাটিও তাদের মধ্যে চারিত হবে।

সহেলির প্রথা ভাঙা এই প্রথম অবশ্য নয়। প্রথম বার যখন তিনি পুরোহিতদের উচ্চারণের পাঠ দিতে যান, তখন বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। অব্রাহ্মণ ও বয়সে নবীন হওয়ায় প্রশিক্ষণ নিতে আসা অনেকে বেঁকে বসেন। কিন্তু তাঁর প্রথম ক্লাসের পর সুর নরম হয়। নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন।

পুজো যাতে নির্বিঘ্নে হয় তার জন্য বারবার ঝালিয়ে নিচ্ছেন সহেলি। আর বলছেন, ‘‘পরে আবারও সুযোগ পেলে পুজো করতে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন