Influenced to Murder

সমীরের কীর্তি, প্রশ্রয় কি তবে যুব তৃণমূল সভাপতির?

বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত কাননের দেহ গ্রামে আসার পরে উত্তেজিত জনতা নিরুপমের শাস্তির দাবি করেন। এক গ্রামবাসীর কথায়, “সমীর এক-আধদিন মাঠে কাজ করত।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

গাইঘাটা শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৩৬
Share:

অভিযুক্ত সমীর মল্লিক। —নিজস্ব চিত্র।

বিজেপি কর্মী জয়ন্ত রায়ের বৃদ্ধা মা কানন রায়কে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল কর্মী সমীর মল্লিকের বিরুদ্ধে। বুধবার রাতে গাইঘাটা থানার মানিকহীরা এলাকার ওই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছে, সমীরের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার যুব তৃণমূল সভাপতি নিরুপম রায়ের প্রশয়ে। বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “নিরুপমের প্রশয়ে সমীর এলাকায় দাদাগিরি শুরু করেছিল। নিরুপমের মদত ছাড়া তার বাড়বাড়ন্ত সম্ভব ছিল না। আমরা নিরুপমের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।” নিরুপম অবশ্য অভিযোগ মানেননি।

Advertisement

জয়ন্তের দাবি, “নিরুপমের ইন্ধনেই সমীর ইদানীং আমাদের গালিগালাজ করত। নিরুপমের জন্যেই সমীরের এই বাড়বাড়ন্ত।” গ্রামের অনেকেই জানালেন, বছর আটত্রিশের সমীর কাজকর্ম তেমন কিছু করে না। রগচটা হিসাবে চেনে লোকে। মানিকহীরার বাসিন্দাদের অনেকেই জানালেন, রাত হলেই মত্ত অবস্থায় সমীর অনেকের সঙ্গে ঝামেলা পাকায়। ধমকায়-চমকায়। নিরুপমের সঙ্গে সমীরের ঘনিষ্ঠতা অনেকেই জানেন। সমীরের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হলেও যে কারণে তাঁরা প্রতিবাদ করে ঝামেলায় জড়াতে চাইতেন না।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নিহত কাননের দেহ গ্রামে আসার পরে উত্তেজিত জনতা নিরুপমের শাস্তির দাবি করেন। এক গ্রামবাসীর কথায়, “সমীর এক-আধদিন মাঠে কাজ করত। অন্য সময়ে কাজ করত না। রাতে মদ খেয়ে হুজ্জুতি করত। কেউ টাকা না দিলে মদ খাওয়ার টাকা পেত কোথা থেকে? কেউ মদত না দিলে ঝামেলা পাকানোর সাহস সমীরের ছিল না।”

Advertisement

যদিও নিরুপম দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। তাঁর কথায়, “মানিকহীরায় তৃণমূলের কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক আছেন। সমীরও তাঁদের এক জন। কর্মী হিসেবে চিনতাম। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আমার তেমন মেলামেশা বা যোগাযোগ ছিল না।” নিরুপমের দাবি, বিজেপির লোকজনই তাঁর বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে। তাঁর বাবাকে মেরে পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। যদিও তৃণমূলেরই অনেকের মতে, নিরুপমের বাড়িতে যাঁরা চড়াও হয়েছিলেন, তাঁরা সকলে বিজেপির কর্মী-সমর্থক নন। সাধারণ গ্রামবাসীও ছিলেন। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানিকহীরা এলাকায় বিজেপি জয়ী হয়েছিল। এলাকাটি শিমুলপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত। স্বাভাবিক ভাবে এলাকায় বিজেপি শক্তিশালী।

গাইঘাটার এক তৃণমূল নেতা অবশ্য বলেন, “সমীর যে নিরুপমের কাছ থেকে প্রশয় পেত, এ কথা পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।” সমীরের বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের মধ্যে বহু দিন ধরেই ক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল। কাননের মৃত্যুতে সেই বাঁধ ভাঙে। জনরোষ গিয়ে পড়ে নিরুপমের উপরে। নিরুপমের বাড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখানো হয়।’’

যুব তৃণমূল নেতা হিসেবে বনগাঁ সাংগঠনিক জেলায় নিরুপমের জেলা সভাপতি হওয়া দলের অনেকেই ভাল ভাবে মেনে নিতে পারেননি বলে দলের অন্দরের খবর। গত পঞ্চায়েত ভোটে গাইঘাটা পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন নিরুপম। পরবর্তীতে পঞ্চায়েত সমিতির গুরুত্বপূর্ণ পদ পান, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ হয়েছেন। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের কারও কারও দুর্নীতি নিয়ে নিরুপম সরব হয়েছিলেন। ফলে তাঁদের সঙ্গে নিরুপমের দূরত্ব বেড়েছিল। তাঁর বাড়িতে মানুষের বিক্ষোভে তৃণমূলের কারও উসকানি থাকতে পারে বলে মনে করছেন দলেরই অনেকে।

নিরুপমের পাশে দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। তিনি বলেন, “নিরুপম এক জন দক্ষ সংগঠক। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি। ওই বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় নিরুপমের কোনও ভূমিকা নেই। বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তুলতেই তাঁর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত চক্রান্ত করছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন