স্কুলের সামনে থকথকে কাদা। ইনসেটে, মালসার উপর ঢালাই দেওয়া ছাদ। নিজস্ব চিত্র।
আকাশে মেঘ দেখলেই ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে চান না অভিভাবকেরা। পঠনপাঠন লাটে তুলে ঘরেই বসে থাকে পড়ুয়ারা। শিক্ষকদের অবস্থাও একই রকম।
বৃষ্টি হলেই কুলপি ব্লকের করঞ্জলি সার্কেলের বাজবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদ থেকে জল পড়ে। ক্লাসে জল থই থই করে। তার মধ্যেই চলে পড়াশোনা। বছর পর বছর বৃষ্টিতে স্কুলে অঘোষিত ‘রেনি ডে’ চলে। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হয় ছাত্রছাত্রীদের।
করঞ্জলি পঞ্চায়েতের বাজবেড়িয়া গ্রামের এই স্কুলটি টালির চাল মাটির দেওয়ালের ছিল। ২০০০ সালে সর্বশিক্ষা মিশনের প্রায় ৩ লক্ষ টাকায় নতুন ভবন তৈরি করা হয়েছিল। ছাদের উপর পোড়ানো মালসা বসিয়ে ঢালাই করা হয়েছিল ছাদ। ফলে তা অতটা পোক্ত হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। কিছু দিন পর থেকেই ছাদ ফেটে যায়। বছর পাঁচেক আগে ফাটা ছাদ মেরামত করতে নতুন করে জল ছাদ করা হয়। কিন্তু তারপরেও কোনও লাভ হয়নি। এখন ছাদের অবস্থা বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাদের নীচের অংশে চিড় ধরেছে। ক্লাসের মধ্যেই ছাতা খুলে অনেকে বসছে। কিন্তু তাও সীমিত সময়ের জন্য। এ ভাবে পড়াশোনা করতে সমস্যা হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। তাই স্কুলে আসতে চায় না কেউই। ব্ল্যাক বোর্ডে জল পড়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চক, ডাস্টার ভিজে যাওয়া তা দিয়ে কাজ চলছে না। তা ছাড়া স্কুলে পানীয় জলের নলকূপটি দীর্ঘদিন ধরে খারাপ।
প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ওই স্কুলে আছে। পড়ুয়ার সংখ্যা৬৫ জন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক-সহ দু’জন। পার্শ্ব শিক্ষিকা একজন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অরবিন্দ দলুই বলেন, ‘‘সমস্যাটি শিক্ষা দফতরে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’’
কুলপি বিডিও বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ এ বিষয়ে করঞ্জলি সার্কেলের স্কুল পরিদর্শক কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বাজবেড়িয়া গ্রামের ছেলেমেয়েরা ছাড়াও পাশের লক্ষ্মীপুর ও লক্ষ্মীপাশা গ্রামের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়তে আসে। স্কুলে আসার রাস্তাটিও খারাপ। বর্ষাকালে স্কুলে আসতে গিয়ে কাদায় পা পিছলে পড়ে হাত পা কাটছে পড়ুয়ারা। অভিভাবকেরা ছোটদের পৌঁছতে এসেও দুর্ঘটনা ঘটছে। ওই এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্কুল ভবনটির এখন এমনই অবস্থা যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই এই স্কুলে শিশুদের পড়তে পাঠাতে হয়। তৃতীয় শ্রেণির এক পড়ুয়ার বাবা মহাদেব দুলুই বলেন, ‘‘এই বেহাল পরিকাঠামোর মধ্যে স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে। কিন্তু কোনও উপায় নেই। পাঠাতেই হয়।’’