নিজস্বীর নেশায় প্রাণ খোয়াল কিশোর

উত্তরবঙ্গে বে়ড়াতে গিয়ে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার শখ হয়েছিল বছর তেরোর কিশোরের। পর্যটকদের এ হেন শখ নতুন কিছু নয়। বেড়াতে যাওয়ার যে সব ছবি ফেসবুকের দৌলতে নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে অন্তর্জাল জগতের প্রিয়জনের কাছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাড়োয়া শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:২৯
Share:

উত্তরবঙ্গে বে়ড়াতে গিয়ে নদীর ধারে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার শখ হয়েছিল বছর তেরোর কিশোরের। পর্যটকদের এ হেন শখ নতুন কিছু নয়। বেড়াতে যাওয়ার যে সব ছবি ফেসবুকের দৌলতে নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে অন্তর্জাল জগতের প্রিয়জনের কাছে। কিন্তু ফোন হাতে ছবি তোলার শখ যে প্রাণঘাতী হতে পারে, আন্দাজই করতে পারেনি হাড়োয়ার সেই কিশোর, আরমান কবীর।

Advertisement

মঙ্গলবার জলঢাকা নদীতে পড়ে নিখোঁজ হয়ে যায় সপ্তম শ্রেণির ছেলেটি। শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে নাগরাকাটা থানা এলাকায় ঝলঢাকা নদী থেকে দেহ উদ্ধার হয় দেহ। ময়না-তদন্তের পরে সোমবার তা এসে পৌঁছয় নজরনগর গ্রামের বাড়িতে। মেধাবী ছেলেটির অকাল মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন পাড়া-প্রতিবেশী, পরিজনেরা। এ দিনই কবরস্থ করা হয়েছে আরমানকে।

কলকাতার বিধাননগর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলে পড়ত ছেলেটি। পরিবারটি থাকত রাজারহাটে, সিটি সেন্টারের কাছে। আরমানের বাবা মহিউদ্দিন কবীর হাড়োয়া পীর গোরাচাঁদ হাইস্কুলের শিক্ষক। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়িতে যাতায়াত করতেন তাঁরা।

Advertisement

আরমানের মামা মনিরুল ইসলাম এ দিন বলেন, ‘‘৯ অক্টোবর বাবা, মা, দিদির সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়েছিল আরমান। নদীতে পড়ে ভেসে গিয়েছে জানতে পেরে আমি উত্তরবঙ্গে যাই। মালবাজারের এসডিপিও এবং জলঢাকা ও নাগরাকাটা থানার ওসি দেহ উদ্ধারের জন্য আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।’’ হাড়োয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সঞ্জু বিশ্বাস জানান, আরমান নিখোঁজ হওয়ার পরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জানানো হয়। তিনি দ্রুত দেহ উদ্ধারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী এবং পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে কথা বলেন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভারত-ভুটান সীমান্তের বিন্দুতে বেড়াতে গিয়েছিল পরিবারটি। বাবা-মা-দিদির চোখের আড়ালে পাথরের উপরে দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে নিজের ছবি তুলছিল আরমান। বাকিরা ছিলেন কাছেই। হঠাৎ তাঁরা দেখেন, ছেলে নেই। তারপরেই শুরু হয় খোঁজ খোঁজ। জলঢাকা থানার পুলিশের অনুমান, পাথরে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিল ছেলেটি। জলের তোড়ে বেশ কিছু দূরে ভেসে যায়।

পুজোর ছুটিতে বে়ড়াতে গিয়ে এমন কাণ্ড ঘটায় স্তম্ভিত গোটা পরিবার। গ্রামের বহু মানুষও চোখের জলে ভাসছেন। এক প্রবীণ গ্রামবাসীর কথায়, ‘‘বেড়াতে গিয়ে এমন বিপদ ঘটতে পারে, ভাবাই যাচ্ছে না।’’

কিন্তু ঘটনা হল, নিজস্বী তোলার এই হিড়িক সারা বিশ্বে অনেকেরই বিপদ ডেকে আনছে। কখনও রেললাইনে দাঁড়িয়ে নিজস্বী তোলার নেশায় ট্রেনে কাটা পড়ছেন কেউ। কখনও নদীর জলের তোড়ে ভেসে যাচ্ছেন। নিজস্বী তোলার হিড়িকে দুর্ঘটনার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গত ফেব্রুয়ারিতে মুম্বইয়ের ১৬টি জায়গায় নিজস্বী তোলা নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। বিন্দুর ঘটনা পর্যটকদের জানিয়ে সতর্ক করার কাজটা তারা ইতিমধ্যেই শুরু করেছে বলে জানিয়েছে গরুমারা ট্যুরিজম ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন