পর পর দুর্ঘটনা দক্ষিণ ২৪ পরগনায়

লাইনের ধারে বসছে দোকানপাট

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনে তালদি, বেতবেড়িয়া, ঘুটিয়ারিশরিফ, চম্পাহাটি-সহ বিভিন্ন স্টেশনে রেললাইনের উপরে বা লাইনের ধারে প্রতি দিন বাজার বসে।

Advertisement

সামসুল হুদা

ক্যানিং শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৭ ০১:৪২
Share:

বিপদ: দুই লাইনের মাঝে পসরা সাজিয়ে। নিজস্ব চিত্র

রেল লাইনের ধারে বাজার। দুই লাইনের মাঝেও আলু-বেগুন-পটল-মুলো নিয়ে বসে পড়েন বিক্রেতারা। ভিড় জমে সেখানে। তার মধ্যে দিয়েই চলে লাইন পারাপার। মাঝে মধ্যেই যার জেরে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান মানুষ। রবিবার ভোরেও দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটিতে রেললাইনের ধারে বসা মাছ বাজারে মাছ কিনতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছে ৩ জনের। বছর তিনেক আগে বেতবেড়িয়ায় রেললাইনের ধারে বসা বাজারের কারণে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল।

Advertisement

একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও রেল পুলিশ ও রেলরক্ষী বাহিনীর হেলদোল নেই বলে অভিযোগ। রেল পুলিশ সূত্রের খবর, বেশ কয়েকটি স্টেশনে রেললাইনের ধারে বা উপরে বাজার বসছে বলে নজরে এসেছে। আগেও এ সব বাজার সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আবারও রাজনৈতিক মদতে ব্যবসা শুরু করে অনেকে। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এ বিষয়ে আমরা রেল ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কী পদক্ষেপ করা যায়, তা দেখছি।’’

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনে তালদি, বেতবেড়িয়া, ঘুটিয়ারিশরিফ, চম্পাহাটি-সহ বিভিন্ন স্টেশনে রেললাইনের উপরে বা লাইনের ধারে প্রতি দিন বাজার বসে।

Advertisement

তালদির এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘এমনিতে বাজারের মধ্যে বসে ব্যবসা করার মতো তেমন জায়গা নেই। তা ছাড়া, বাজারে বসতে গেলে রাজনৈতিক নেতাদের মাসোহারা দিতে হয়। যা আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের পক্ষে সম্ভব নয়। রেলের জায়গায় বসে ব্যবসা করতে গেলে রেল পুলিশের চোখ রাঙানি থাকে। কিন্তু পেটের তাগিদে আমাদের সে সব সহ্য করতে হয়।’’

চম্পাহাটির এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘বাপ-ঠাকুর্দার আমল থেকে এই জায়গায় ব্যবসা করছি। বাজারের মধ্যে এমনিতেই জায়গা নেই। তা ছাড়া, আমাদের দু’তিন ঘণ্টার জন্য পাইকারি মাছের ব্যবসা। বাইরে থেকে যারা মাছ কিনতে আসেন, তাঁরা ট্রেন থেকে নেমে লাইনের ধারে বসা বাজার থেকে মাছ কিনে চলে যান। এ সব কারণে তাই বিপদ হতে পারে জেনেও এখানে ব্যবসা করি।’’

চম্পাহাটি মৎস্য পাইকারি কল্যাণ সমিতির সম্পাদক রমেন্দ্রনাথ নস্কর জানালেন, সম্প্রতি বাজারের কাছে একটা জায়গা দেখা হয়েছে। কিন্তু অনেক আড়তদার সেখানে যেতে চাইছেন না। তবে মাছ বাজারকে পিছিয়ে দিয়ে সামনে দিয়ে স্টেশনে যাওয়ার জন্য ইটের রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাছবাজার কী ভাবে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, তার চেষ্টা চলছে।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার যুব তৃণমূল সভাপতি সওকত মোল্লা জানান, ব্যবসায়ীদের কী ভাবে রেললাইনের ধার থেকে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ব্যবসার সুযোগ করে দেওয়া যায়, তা দলীয় ভাবে এবং রেল দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জয়নগরের প্রাক্তন সাংসদ এসইউসি-র তরুণ মণ্ডলের দাবি, সংসদে বহুবার বিষয়টি উত্থাপন করেছেন তিনি। তরুণবাবুর কথায়, ‘‘বলেছি, রেলের যে সব অব্যবহৃত জায়গা পড়ে আছে, সেখানে রেল নিজেদের উদ্যোগে বাজার করে দিলে ব্যবসায়ীরা নিরাপদে ব্যবসা করতে পারেন। রেলেরও আয় হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন