ঘরছাড়া বৃদ্ধ দম্পতি, অভিযুক্ত ছেলে

অভিযোগকারিণী অসীমা হালদার এবং তাঁর স্বামী দিবাকর হালদার দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার চ্যাটার্জি পাড়ার বাসিন্দা। তাঁদের দাবি, নিত্য অশান্তির সুরাহা করতে ২০১৪ সালে প্রথম বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা।

Advertisement

জয়তী রাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৭ ০২:২৮
Share:

সন্তানের জন্য আলাদা বাড়ি করে দিয়েছিলেন বৃদ্ধ দম্পতি। দেনার দায়ে সেই বাড়ি বিক্রি করে বাবা-মায়ের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন ছেলে। এ বার মা-বাবাকে তাড়িয়ে তাঁদের বাড়ি দখল করার অভিযোগ উঠল সেই ছেলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

অভিযোগকারিণী অসীমা হালদার এবং তাঁর স্বামী দিবাকর হালদার দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলার চ্যাটার্জি পাড়ার বাসিন্দা। তাঁদের দাবি, নিত্য অশান্তির সুরাহা করতে ২০১৪ সালে প্রথম বার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। বর্তমানে দম্পতি ওই বাড়ি ছাড়া। এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে ঘুরে ভাড়া নিয়ে থাকছেন তাঁরা। অভিযোগ, পুলিশে জানিয়েও সুরাহা না মেলায় আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন ওই দম্পতি। বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আদালত নির্দেশও দিয়েছিল চলতি বছরের মার্চ মাসে। তাঁদের অভিযোগ, সবটুকু নির্দেশেই আটকে কাগজে, এখনও কোনও সমাধান সূত্র বেরোয়নি।

পরিবার সূত্রের খবর, দিবাকরবাবু ইলেকট্রিক মিটার তৈরির সংস্থায় কাজ করতেন। ২০০৮ সালে সেই কাজ থেকে অবসর নেন তিনি। বড় এবং মেজ ছেলের জন্য দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিষ্ণুপুর এলাকায় দু’টি বাড়ি করে দেন। কন্যানগর চ্যাটার্জি পাড়ায় নিজেদের বাড়িটি দোতলা করে ছোট ছেলেকে নিয়ে থাকছিলেন। তিন বছর আগে পথ দুর্ঘটনায় মারা যান অটোচালক বড় ছেলে। ওই সময় থেকেই সমস্যা শুরু হয় মেজো ছেলে বিশ্বজিৎ হালদারকে নিয়ে।

Advertisement

অসীমাদেবী বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছর আগে মেজো ছেলে আমাদের বাড়িতে পরিবার নিয়ে ওঠে। কিছু দিন পরে শুরু হয় অশান্তি। প্রথমে ছোটখাটো বিষয় নিয়ে শুরু হয় ঝগড়া। প্রতিবাদ করলে অকথ্য গালাগালি জুটত। এমনকী ছেলে-বৌমার হাতে মার পর্যন্ত খেতে হয়েছে।’’ বর্তমানে পুরোহিতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন বৃদ্ধ দম্পতি। দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিবাকরবাবু বলেন, ‘‘অটো কিনে দিয়েছিলাম সেটাও বেচে দিয়েছে। নাতনিটাও তুই-তোকারি করে, গালিগালাজ করে। বড় ছেলের মৃত্যুর পর থেকে ওর ছেলে আমাদের সঙ্গেই থাকে। সেই নাতি বাধা দিতে গেলে ওকেও মেরে ফেলার হুমকি দেয়।’’

অভিযুক্ত বিশ্বজিতবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘বাবা-মা নিজেরাই চলে গিয়েছে। গালাগালি–মারধরের সব অভিযোগ মিথ্যা। দেনার জন্য ওই বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছি। থাকব কোথায়? বাবা-মা তো সন্তানের জন্যই বাড়ি বানিয়েছে, থাকতে দিয়ে কোনও উদ্ধার করে দেয়নি। ওরা যখন থানা-পুলিশ-আদালত পর্যন্ত গিয়েছে। আমিও দেখে নেব ওদের।’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কন্যানগরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘মা-বাবাকে মারধর করার অভিযোগ পুরোপুরি সত্যি। প্রথম দিকে ওঁদের ছোট ছেলে ইন্দ্রজিৎ বাধা দিতেন। কিন্তু তাঁকেও মারধর এবং মিথ্যা কেস দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দেওয়ায় ইন্দ্রজিৎ এ সবে আর থাকেন না।’’

আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও কেন সুরাহা হল না? দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও রাজস্ব) নিখিলেশ মণ্ডল জানান, আদালতের নির্দেশ এসেছে। এ ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে ডায়মন্ড হারবারের এসপি-র কাছে আদালতের নির্দেশের কপি পাঠানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে ডায়মন্ড হারবার পুলিশ জেলার সুপারইন্টেনডেন্ট অব পুলিশ কোটেশ্বর রাও বলেন, ‘‘অসীমাদেবীরা অভিযোগের সমস্ত নথিপত্র এবং আদালতের নির্দেশের কপি নিয়ে
দ্রুত বিষ্ণুপুর থানায় যোগাযোগ করুন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন