আর এক প্রতিবাদীর মৃত্যুতে ক্ষোভ বরুণের স্মরণসভায়

ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ-অনুষ্ঠানে আর পৌঁছতে পারলেন না প্রমীলা রায় বিশ্বাস। রেল অবরোধে দেরি হয়ে গেল অনেকটাই। ট্রেনে বসেই শুনলেন, রেললাইনে উদ্ধার হয়েছে এক প্রতিবাদী যুবকের খণ্ডিত দেহ। সেই মৃত্যুর জেরেই অবরোধ। রাজ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা অসামাজিক কাজকর্ম আর তা রুখতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি প্রমীলাদেবী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গাইঘাটা ও কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

কলেজ স্কোয়ারের স্মরণ-অনুষ্ঠানে বরুণের বাবা জগদীশ বিশ্বাস। ছবি: সুমন বল্লভ

ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকীর স্মরণ-অনুষ্ঠানে আর পৌঁছতে পারলেন না প্রমীলা রায় বিশ্বাস। রেল অবরোধে দেরি হয়ে গেল অনেকটাই। ট্রেনে বসেই শুনলেন, রেললাইনে উদ্ধার হয়েছে এক প্রতিবাদী যুবকের খণ্ডিত দেহ। সেই মৃত্যুর জেরেই অবরোধ। রাজ্যে ক্রমাগত বাড়তে থাকা অসামাজিক কাজকর্ম আর তা রুখতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে ক্ষোভ গোপন করেননি প্রমীলাদেবী।

Advertisement

তারিখটা একই। ৫ জুলাই। দত্তপুকুরের কলেজছাত্র সৌরভ চৌধুরীর অকালমৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক ভাবেই তাঁকে মিলিয়ে দিল আর এক অকালপ্রয়াত তরুণ প্রতিবাদীর সঙ্গে। দু’বছর আগে এই তারিখেই খুন হয়েছিলেন প্রমীলাদেবীর ভাই বরুণ বিশ্বাস।

২০১২-র ৫ জুলাই সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে গোবরডাঙা স্টেশন চত্বরে গুলিতে খুন হন শিয়ালদহ মিত্র ইনস্টিটিউশনের (মেন) বাংলার শিক্ষক, বছর আটত্রিশের বরুণ। তাঁর অপরাধ, গাইঘাটার সুটিয়ায় গণধর্ষণ-সহ নানা অসামাজিক কাজকর্মের নিয়মিত প্রতিবাদ করতেন তিনি। ওই খুনের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত জনকে ধরেছে সিআইডি। কয়েক মাস আগে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে মারা গিয়েছে সুটিয়ার গণধর্ষণ এবং বরুণের খুনে প্রধান অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরী।

Advertisement

২০০২-০৩ অবধি সুটিয়ায় একের পরে এক গণধর্ষণের প্রতিবাদে বরুণের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’। গোবরডাঙা স্টেশনের কাছে এ দিন সকালে এবং সুটিয়ায় বিকেলে মঞ্চের তরফে দু’টি স্মরণসভার আয়োজন করা হয়েছিল। বরুণের কর্মস্থলে তাঁর ছবিতে মালা দেন সহকর্মী শিক্ষক এবং ছাত্রেরা। পরে ‘বরুণ বিশ্বাস স্মৃতি রক্ষা কমিটির উদ্যোগে’ কলকাতার কলেজ স্কোয়ারে আর একটি স্মরণ অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে বরুণের বাবা জগদীশ বিশ্বাস, দাদা অসিত বিশ্বাস ছাড়াও শিক্ষাবিদ সুনন্দ সান্যাল এবং মীরাতুন নাহার হাজির ছিলেন।

মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রিয় শিক্ষককে স্মরণ মিত্র ইনস্টিটিউশনের ছাত্রদের।

কলেজ স্কোয়ারের অনুষ্ঠানে প্রশাসনের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন বরুণের দাদা অসিত। তাঁর অভিযোগ, প্রশাসনের সক্রিয়তার অভাবেই নৈরাজ্যের মেঘ ঘনিয়েছে এ রাজ্যে। এক ধাপ এগিয়ে কামদুনির প্রতিবাদী শিক্ষক প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য, “উত্তর ২৪ পরগনা জেলা অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে।” বরুণের বাবা জগদীশবাবু বলেন, “এলাকায় অসামাজিক কাজকর্মের প্রতিবাদ করতে গিয়ে খুন হয়েছে আর একটা ছেলে (সৌরভ চৌধুরী)। এই খুনের বিরুদ্ধে ঘৃণা নিয়ে নিহতের পরিবারের পাশে দাঁড়াব।” আজ, রবিবার বিকেলে দত্তপুকুরের ওই তরুণের বাড়িতে যাওয়ার কথা জগদীশবাবু, অসিতবাবুদের।

বিকেলে সুটিয়ায় ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’-এর সভায় সংগঠনের সভাপতি ননীগোপাল পোদ্দার বরুণ-হত্যা মামলায় সিবিআই তদন্তের দাবি তোলেন। ওই অনুষ্ঠানে বরুণের পরিবারের কেউ হাজির ছিলেন না। পরে জগদীশবাবু বলেন, “সিআইডি দুষ্কৃতীদের ধরার নামে নাটক করছে। তাই আমিও চাই, সিবিআই এই তদন্তের ভার নিক।”

প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে এ দিন বিকেলে সুটিয়ায় বহু মানুষ হাজির হয়েছিলেন বরুণ বিশ্বাসের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেই ভিড়েরও আফশোস, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই অকালে চলে গেল দত্তপুকুরের ছেলেটাও!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন