বিশেষ ‘হেল্পলাইন’ চালুর প্রথম দিনই সক্রিয়তা দেখাল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ।
থানা অভিযোগ না নিলে কিংবা অভিযোগের গুরুত্ব না দিলে সে কথা জানানোর জন্য বিশেষ দু’টি নম্বরে যোগাযোগের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। সোমবার বারাসতে সাংবাদিক সম্মেলন করে সে কথা জানিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার নবনিযুক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই সেই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
সক্কাল সক্কাল আনন্দবাজারের পাতায় যা দেখে ওই নম্বরে ফোন করেন বসিরহাটের প্রৌঢ়া সাবিত্রী দে। আগের রাতে থানায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁকে মারধরের ঘটনায় পুলিশ স্রেফ একটি জেনারেল ডায়েরি নিয়ে দায় সেরেছিল। মঙ্গলবার অবশ্য ফোনে সাবিত্রীদেবীর অভিযোগ পেয়েই নড়ে বসে জেলা পুলিশ। সাবিত্রীদেবীকে মারধরের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে এক যুবককে।
মঙ্গলবারের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন সাবিত্রীদেবী। পুলিশের হেল্পলাইনে ফোন করে তিনি নিজেকে ‘ক্যানসার আক্রান্ত মহিলা’ বলে পরিচয় দিয়ে বলেন, অন্যায় ভাবে তাঁকে মারধর করা হয়েছে। অথচ, স্থানীয় থানায় গিয়ে সব জানালেও পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সাবিত্রীদেবীর এই অভিযোগ জেলা কন্ট্রোলের মাধ্যমে তৎক্ষণাৎ পৌঁছে যায় বসিরহাট থানার আইসি-র কানে। আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে অভিযুক্ত রাজু দাসকে গ্রেফতার করে থানায় ধরে আনেন।
কী হয়েছিল সাবিত্রীদেবীর সঙ্গে?
পুলিশ জানায়, বসিরহাটের সোনপুকুর এলাকার বছর পঞ্চান্নর ওই মহিলা সোমবার সন্ধ্যায় এক প্রতিবেশীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন। সে সময়ে স্থানীয় যুবক রাজু তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। ঘুষি লাগে সাবিত্রীদেবীর মুখে। ওই মহিলা বলেন, ‘‘আমি একাই থাকি। সেই অসহায়তার সুযোগ নিয়ে কেউ কেউ আমার সঙ্গে নানা সময়ে দুর্ব্যবহার করে। সোমবার সন্ধ্যায় সামান্য বিষয় নিয়ে কয়েকজনের সঙ্গে কথা কাটাকাটির সময়ে রাজু এসে হঠাৎ আমাকে ঘুষি মারে। শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করে।’’
প্রৌঢ়ার দাবি, রাত ৮টা নাগাদ বসিরহাট থানায় গেলে সেখানে ডিউটি অফিসার সাধারণ ডায়েরি লিখে ছেড়ে দেন। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা তো দূর, এলাকায় গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেনি পুলিশ। সাবিত্রীদেবীর কথায়, ‘‘একে আমি অসুস্থ। তার উপরে সকলের সামনে মারধর করে নিগ্রহ করায় চূড়ান্ত অপমানিত হই। পুলিশের এমন গা ছাড়া ব্যবহারে আরও অসহায় লাগছিল নিজেকে। সারা রাত ঘুমোতে পারেনি।’’
সকালে উঠে খবরের কাগজে ফোন নম্বর দেখে তিনি যোগাযোগ করেন পুলিশের সঙ্গে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ এসে হাজির। গ্রেফতারও করা হয় রাজুকে। খানিক বিস্মিত, খানিক আপ্লুত সাবিত্রীদেবী বলেন, ‘‘পুলিশ সুপারকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমাদের মতো বহু মানুষের আশীর্বাদ পাবেন উনি।’’
গ্রেফতারের পরে অনুশোচনার সুর রাজুর গলায়। সে বলে, ‘‘ওঁর গালিগালাজ সহ্য করতে না পেরে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে অসহায় বৃদ্ধাকে এ ভাবে মারধর করা উচিত হয়নি।’’
বসিরহাট থানার আইসি দেবাশিস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, অফিসারদের সকলকে বলা হয়েছে, যে অভিযোগই আসুক, দ্রুত তা তদন্ত করে দেখতে হবে। এ ব্যাপারে পঞ্চায়েত প্রধানদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এলাকায় কোনও সমস্যা হলে তাঁরা যেন অবিলম্ব পুলিশকে জানান। আইসি আরও বলেন, ‘‘শহরবাসীকে জানানো হচ্ছে, কেউ বেশি টাকা সঙ্গে নিয়ে এ দিক ও দিক গেলে কিংবা বাড়ি ফাঁকা রেখে কোথাও গেলে যেন পুলিশকে জানান। পুলিশ সাধ্যমতো নজরদারি করবে।’’
কী বলছেন পুলিশ সুপার?
তাঁর কথায়, ‘‘এ ধরনের পরিষেবাই পুলিশকে দিতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্যে, মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো।’’ পাশাপাশি তিনি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বয়স্ক, প্রতিবন্ধী বা অসুস্থ মানুষজন— এক কথায় যাঁরা থানায় আসতে পারেন না অথচ যাঁদের অভিযোগ গুরুতর, তাঁদের জন্যই মূলত এই হেল্পলাইন। তা ছাড়া, স্থানীয় থানা কোনও কারণে অভিযোগ না নিলে বা অভিযোগের গুরুত্ব দিচ্ছে না মনে করলেও কেউ হেল্পলাইনে যোগাযোগ করতে পারেন। কিন্তু তা বলে যাঁদের থানায় আসার মতো পরিস্থিতি আছে বা অন্য কোনও জটিলতা দেখা যায়নি, তাঁরা সরাসরি থানায় যোগাযোগ করলেই ভাল।
ফোন করুন এই নম্বরে
০৩৩-২৫২৪০০১২/ ০৩৩-২৫২৪০০৪২