স্বপ্ন: প্র্যাকটিসে পার্থ। নিজস্ব চিত্র
প্রশিক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো (ইনডোর কোর্ট) নেই। তাই স্থানীয় থানার মাঠে কয়েক জন ছাত্রকে নিয়ে নিবিড় অনুশীলনে ব্যস্ত থাকেন পার্থ কীর্তনীয়া।
বাড়ি বাগদা থানার হেলেঞ্চা এলাকায়। ‘টপি’ নামে এক ডাকে সকলে চেনে। পরিচয়ের সূত্রটা ব্যাডমিন্টন। আর্থিক অনটন, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে সেই ছোট বেলা থেকেই পার্থ হাতে তুলে নিয়েছেন র্যাকেট।
বছর আটত্রিশের পার্থ ২৩-২৫ মার্চ বেঙ্গালুরুতে সিনিয়র জাতীয় প্যারা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছেন। জাতীয় প্রতিযোগিতায় এর আগেও যোগ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে তামিলনাড়ুতে ডবলসে কোয়ার্টার ফাইলানে হেরে যান। এ ছাড়া, রাজ্য ও দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নিয়মিত যোগ দেন। অগস্ট মাসে থাইল্যান্ডে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সুযোগ পেয়েছেন পার্থ। সেখানে যেতে হলে অনেক টাকার দরকার, যেটা হাতে নেই পার্থবাবুর।
লটারির টিকিট বিক্রি করে আয় সামান্যই। বেঙ্গালুরুতে যাচ্ছেন নিজের খরচে। বিয়ে হলেও স্ত্রীর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। দশ বছরের মেয়ে সোনিয়া বাবার কাছেই থাকে। খুব ছোটবেলায় পথ দুর্ঘটনার পর থেকে শরীরের বাঁ দিকটা অকেজো হয়ে যায় পার্থর। সোজা হয়ে হাঁটতেও পারেন না। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিল ব্যাডমিন্টন খেলার। কিন্তু বললেই তো হল না। বনগাঁ মহকুমায় ব্যাডমিন্টনের উন্নত মানের প্রশিক্ষণ ও প্রশিক্ষকের অভাব ছিল। তারই মধ্যে বনগাঁর দুই খেলোয়াড়ের কাছে শিখেছিলেন ব্যাডমিন্টনের প্রাথমিক পাঠ। পরবর্তী সময়ে কল্যাণীতে গিয়ে কিছু দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
গোপীচাঁদের ভক্ত পার্থ। টিভিতে তাঁর খেলা দেখেই অনুপ্রেরণা খুঁজতেন। স্বপ্ন দেখেন, উন্নত মানের প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে দেশের হয়ে বিদেশ থেকে পদক আনার। তাঁর কথায়, ‘‘বড় আসরে সাফল্য পাওয়ার ক্ষেত্রে আমার বড় প্রতিবন্ধকতা হল, এখানে কোনও ইনডোর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।’’
বনগাঁ মহকুমা ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতায় তিনি সাধারণ খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলে বছর দু’য়েক আগে ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। মহকুমা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী সভাপতি সুব্রত বক্সী বলেন, ‘‘শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে পার্থ যে ভাবে সাফল্য পাচ্ছেন, তা সকলের কাছে দৃষ্টান্ত।’’
কয়েকজন যুবককে বাগদা থানার মাঠে প্রশিক্ষণ দেন পার্থ। নিজের প্র্যাকটিসও সেরে নেন সেখানেই। শেখানোর জন্য পারিশ্রমিক নেন না। পার্থবাবুর কথায়, ‘‘ফেদারের দাম খুব বেশি। ছাত্ররাই তা কিনে আনে। আমারও কাজে লেগে যায়।’’