কবাডি শেখাতে আরও আগ্রহী হোক স্কুল, বলছেন ক্রীড়া সংগঠকেরা

কবাডি নিয়ে জাতীয় স্তরে ‘লে পাঙ্গা’ প্রচারপর্বের পরে জাতীয় খেলা নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে সর্বত্রই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিনা পয়সায় স্কুলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ করা হয়েছে।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:৫৩
Share:

কবাডি নিয়ে জাতীয় স্তরে ‘লে পাঙ্গা’ প্রচারপর্বের পরে জাতীয় খেলা নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে সর্বত্রই। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিনা পয়সায় স্কুলগুলিকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সুযোগ দেওয়ার উদ্যোগ করা হয়েছে। কিন্তু জেলার বেশিরভাগ স্কুলই কবাডির প্রশিক্ষণ নিয়ে সেই উদ্যোগ কাজে লাগাতে তেমন আগ্রহী নয়— সদ্য শেষ হওয়া ৬১ তম রাজ্য স্কুল কবাডি প্রতিযোগিতায় যোগদানকারীদের অনেকের কাছে শোনা গেল এমন কথা। পরিসংখ্যানও শোনাচ্ছে সে কথাই। জেলায় প্রায় ৮০০ স্কুল। যার মধ্যে মাত্র ১০টি স্কুলে এখন কবাডি শেখাতে পারছে অ্যাসোসিয়েশন।

Advertisement

জেলা কবাডি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদর্শন হালদার বলেন, ‘‘আমরা দেখছি, টিভিতে জাতীয় খেলার প্রচার প্রো-কবাডি দেখার পরে অনেক অভিভাবকেরাই তাঁদের বাচ্চাদের কবাডি শেখাতে আগ্রহী। আমরাও অ্যাসোসিয়েশনের তরফে বিনা পয়সায় কবাডির স্কুলে স্কুলে গিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসতে রাজি। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলই আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’’

মথুরাপুরে একটি প্রশিক্ষণ শিবির করে সপ্তাহে দু’দিন করে বিনা পয়সায় কোচিং করাচ্ছে অ্যাসোসিয়েশন। কিন্তু জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে সপ্তাহে দু’দিন মথুরাপুর প্রশিক্ষণে যাওয়ার ক্ষেত্রেও চাপ রয়েছে অনেকেরই। এ বছর অনূর্ধ্ব ১৯ বছর ক্যাটাগরিতে জেলা মহিলা দলের হয়ে খেলছে শতলকলসা হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুপ্রীতি গায়েন, আঙুরা খাতুনরা। তাদের কথায়, ‘‘কয়েক দিন গিয়েছিলাম। কিন্তু ফলতা থেকে সপ্তাহে দু’দিন করে যাওয়া আর্থিক কারণেই সম্ভব হচ্ছে না। স্কুলেই একটা ব্যবস্থা হলে ভাল হতো।’’

Advertisement

প্রাক্তন কবাডি খেলোয়াড় তথা প্রশিক্ষক স্বরূপ ঘোষ বলেন, ‘‘একটা ছোট মাঠ, আর কিছু উৎসাহী বাচ্চা হলেই কবাডি প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব। আগের চেয়ে আমাদের মথুরাপুর শিবিরে অনেক বেশি করে ছেলেমেয়েরা আসছে। সেগুলি যাতে এলাকার স্কুলে করানো যায় তার জন্য আমরা সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়েও কোচিংয়ের ব্যবস্থা করছি। কিন্তু স্কুলগুলিকে তো এগিয়ে আসতে হবে।’’ পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ারদের মধ্যে অনেকেই প্রাক্তন কবাডি খেলোয়াড়। কারও কারও জাতীয় স্তরে যোগদানের অভিজ্ঞতাও আছে বলে জানা গেল।

অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এক একটি থানা এলাকায় ওই সমস্ত ভলান্টিয়ারদের দিয়েও স্কুলে গিয়ে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেওয়া হচ্ছে। মথুরাপুর, রায়দিঘি, কুলপি, বারুইপুরের কয়েকটি স্কুল এগিয়েও এসেছে। মন্দিরবাজারেও চালু হওয়ার মুখে।

কিন্তু তা জেলার সার্বিক প্রশিক্ষণের যা প্রয়োজন তার ১ শতাংশেরও অনেক নীচে। জেলায় এই খেলার সঙ্গে যুক্ত কোচ, প্রশিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, জেলা অ্যাসোসিয়েশনের কাছে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কাকদ্বীপ ব্লক, সাগর ব্লক আগের থেকে পিছিয়ে পড়ছে অনেকটাই। ডায়মন্ড হারবারেও কবাডির চর্চা তেমন একটা হচ্ছে না।

প্রতিটি স্কুলেই কম বেশি ছোট মাঠ বা উঠোন থাকেই। সেখানেই প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন অ্যাসোসিয়েশনের প্রশিক্ষকেরা। তা হলে কেন এমন পরিস্থিতি?

সাগর বামনখালি এমপিপি হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তথা জেলা ক্রীড়া সংসদের কাকদ্বীপ শাখার সম্পাদক দিলীপ জানা বলেন, ‘‘আমাদের মাঠের একটু সমস্যা রয়েছে। তাই কবাডি প্র্যাকটিস ওখানে করা সম্ভব নয়।’’ এর আগে ডায়মন্ড হারবার পুরসভার কাছে কবাডি অ্যাসোসিয়েশন মাঠের একটা ব্যবস্থা করে দিতে বলেছিল। কিন্তু মাঠ না থাকার জন্য তা করে উঠতে পারেনি পুরসভা।

প্রধান শিক্ষকদের একটি অংশ আবার দাবি করছেন, শিক্ষক কম থাকায় অনেক সময় স্কুলের খেলার শিক্ষকদের দিয়েও ক্লাস নিতে হয়। তাই এ সব কাজে যুক্ত করে তাঁদের সময় নষ্ট করতে আগ্রহী নয় অনেক স্কুল। তবে এখনও অনেক স্কুলেই কবাডি অ্যাসোসিয়েশন পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে ওঠা সম্ভব হয়নি, তা-ও ঠিক। সাগরের খানসাহেব আবাদ স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব দাস যেমন জানিয়েছেন, এ রকম সুযোগ এলে তাঁরা অবশ্যই সহযোগিতা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন