বিদ্যুতের লাইন কাটতে মার বসিরহাটে

পুলিশি সূত্রের খবর, শ’খানেক মানুষ এ দিন ভেবিয়ায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসে হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, ধস্তাধস্তি হয় বিদ্যুৎকর্মীদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৭ ০১:৫০
Share:

কয়েক বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটে বিদ্যুতের লাইন কাটার জেরে গ্রামবাসী-পুলিশ সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল। বিদ্যুতের লাইন কাটতে গিয়ে বুধবার ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটল উত্তর ২৪ পরগনায় বসিরহাটের ভেবিয়ায়।

Advertisement

পুলিশি সূত্রের খবর, শ’খানেক মানুষ এ দিন ভেবিয়ায় রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার অফিসে হামলা চালায়। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি, ধস্তাধস্তি হয় বিদ্যুৎকর্মীদের। মারধর করা হয় নিরাপত্তাকর্মীকে। আহত নিরাপত্তাকর্মীকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

বণ্টন সংস্থা জানায়, যে-সব গ্রাহকের বিল দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া রয়েছে, এ দিন তাঁদের লাইন কাটতে গিয়েছিলেন বিদ্যুৎকর্মীরা। ক্ষিপ্ত জনতা তাঁদের লাইন কাটতে বাধা দেয়। শুরু হয় তর্কাতর্কি। অভিযোগ, বিদ্যুৎকর্মীরা ফিরে গেলেও বেলা ১২টা নাগাদ এক দল লোক ভেবিয়া গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রে গিয়ে হামলা চালায়। পুলিশ আসে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত বণ্টন সংস্থার পক্ষ থেকে কারও বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়নি।

Advertisement

বিদ্যুৎ সংস্থার অভিযোগ, জামাত আলি শেখ নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী মাগুর মাছের চাষের জলের জন্য মোটর ব্যবহার করেন। তাঁর বিলের কিছু টাকা বকেয়া ছিল। বিদ্যুৎকর্মীরা তাঁর বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ওই সময়েই জামাত এবং তার দুই ছেলে বিদ্যুৎকর্মীদের মারধর করেন বলে অভিযোগ। পরে ওই ব্যবসায়ী আরও কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার মদতে অফিসে হামলা চালান।

বিদ্যুৎ মহলের অভিযোগ, ভেবিয়া অঞ্চলে হুকিং-ট্যাপিংয়ে বিদ্যুৎ চুরি তো হচ্ছেই। বেশ কিছু গ্রাহক বিলও মেটান না। ফলে প্রতি মাসেই আর্থিক ক্ষতি হয় সংস্থার। তাই এ দিন লাইন কাটার সিদ্ধান্ত নেন বণ্টন সংস্থার কর্তারা। বিদ্যুৎকর্মীরা লাইন কাটতে গিয়েছিলেন পুলিশ না-নিয়েই। কিন্তু লাইন কাটা তো দূরের কথা, উল্টে এলাকার কিছু বাসিন্দার ক্ষোভের মুখে পড়ে বিদ্যুৎকর্মীরা আতঙ্কিত।

মগরাহাটে বেআইনি লাইন কাটতে গিয়ে পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে প্রাণহানির পরে রাজ্য জুড়ে হুকিং-বিরোধী অভিযান কার্যত প্রায় বন্ধই আছে। কিছু জেলায় বিদ্যুৎ বিলের টাকা ৩০ শতাংশও আদায় হয় না। কোটি কোটি টাকা লোকসান হয় বণ্টন সংস্থার। টাকা আদায় হচ্ছে না বলেই বিদ্যুৎকর্তারা লাইন কাটার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু প্রতিরোধের মুখে তাঁদের পিছু হটতে হল।

এক বিদ্যুৎকর্তা জানান, হাড়োয়ায় মুখ্যমন্ত্রীর সভা আছে ১ ডিসেম্বর। তার আগে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা হোক, এটা তাঁরা চান না। তবে এর পরে তাঁরা প্রশাসনের শীর্ষ মহলে বিষয়টি জানাবেন।

ঘটনাচক্রে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিনই বিধানসভায় জানান, হুকিংয়ের জন্য কোথাও কোথাও লো-ভোল্টেজ চলছে। তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার লো-ভোল্টেজ নিয়ে প্রশ্ন তোলায় শোভনদেববাবু জানান, বেশ কিছু সাবস্টেশন নতুন করে গড়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও লো-ভোল্টেজ হওয়ার কারণ হুকিং।

তিনি বিধায়কদের কাছে আবেদন করেন, তাঁরা যেন নিজের এলাকায় গিয়ে দেখেন, কোথায় হুকিং হচ্ছে। চুরি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা যেন প্রশাসনকে জানান। ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুতের গ্রাহকদের ৭০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। তার পরেও হুকিং মেনে নেওয়া যায় না,’’ বলেন মন্ত্রী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন