সিলিকোসিসে মৃত্যু মামলায় হাইকোর্টের রায়

৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ 

বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ। 

Advertisement

সামসুল হুদা

ভাঙড় শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৮ ০২:১৭
Share:

চিকিৎসাধীন: সিলিকোসিসে আক্রান্তের জন্য অক্সিজেন। নিজস্ব চিত্র

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নির্দেশ মেনে এখনও পর্যন্ত ৪টি পরিবারকে রাজ্য সরকার ৪ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। কিন্তু আরও বহু পরিবার তা পায়নি। এ বার একটি জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্ট নির্দেশ দিল, সিলিকোসিসে মৃতের পরিবারগুলিকে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

Advertisement

বুধবার এই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শম্পা সরকারের ডিভিশন বেঞ্চ।

মামলাকারীর আইনজীবী শামিম আহমেদ জানান, ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, আক্রান্তদের পেনশন, তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থাও করতে হবে। এমনকী, অবিবাহিত মেয়ের বিয়ের খরচও দিতে হবে রাজ্য সরকারকে।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার মিনাখাঁ ব্লকের গোয়ালদহ, দেবীতলা, ধুতুরদহ-সহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ জন মারা গিয়েছেন সিলিকোসিসে। আয়লা পরবর্তী সময়ে উত্তর ২৪ পরগনার এই সব এলাকা থেকে বহু মানুষ আসানসোল, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ এলাকায় পাথর খাদান ও ক্র্যাশার কারখানায় কাজে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফেরেন মারণ রোগ শরীরে নিয়ে। প্রায় ১৮০ জনের সিলিকোসিস ধরা পড়ে। ২০১২ সালের পর থেকে এই রোগে ভুগে মারাও গিয়েছেন অনেকে।

অভিযোগ, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিলিকোসিসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য সরকারি ভাবে কোনও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। বিভিন্ন গণসংগঠন, বিজ্ঞান কর্মী, পরিবেশ কর্মীরা আক্রান্ত পরিবারগুলির পাশে দাঁড়ান। বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও।

স্থানীয় যুবক সইদুল পাইক তিনিই গ্রামে সিলিকোসিসে আক্রান্তদের সেবা-শুশ্রূষা করছেন। সইদুল বলেন, ‘‘গ্রামে সরকারি ভাবে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা হয়নি। অথচ অনেকেরই মাঝে মাঝে প্রবল শ্বাসকষ্ট হয়। আমরা উদ্যোগী হয়ে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গ্রামে অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করেছি। সরকারি ভাবে যদি গ্রামে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়, তা হলে অনেকেই খুব উপকৃত হবেন।’’

আবুল পাইক ও জাকির পাইক দুই ভাই সিলিকোসিসে মারা গিয়েছেন। তাঁরা মারা যাওয়ার পরে স্ত্রীরা সন্তান রেখে দিয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। নাতি-নাতনিদের দেখভাল করছেন বৃদ্ধ ঠাকুরদা-ঠাকুরমা। আবুল পাইকের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪ লক্ষ টাকা মিলেছে। কিন্তু জাকিরের মৃত্যুতে টাকা পায়নি পরিবার। তাঁদের মা মর্জিনা বিবি বলেন, ‘‘আমার স্বামী খুব অসুস্থ। দুই রোজগেরে ছেলে মারা যাওয়ার পরে বৌমারা নাতি-নাতনিদের রেখে অন্যত্র সংসর পেতেছে। আমি কোনও রকমে সেলাইয়ের কাজ করে সংসার চালাই। শুনেছি আদালত নাকি কী সব নির্দেশ দিয়েছে। জানি না, সেই সব সুযোগ সুবিধা কবে পাব।’’

আক্রান্তদের পরিবারগুলির আরও অভিযোগ, সরকারি ভাবে কোনও সুযোগ-সুবিধা পান না তাঁরা। মাঝে মধ্যে ১০ কেজি করে গম দেওয়া হয়। তা-ও সেই গম আনতে ব্লক অফিসে যেতে হয়। সামান্য গমের জন্য বারবার ঘোরানো হয়। ওই গম আনতে গিয়ে অনেক টাকা গাড়ি ভাড়া চলে যায়। এখন গ্রামে মেডিক্যাল ক্যাম্প হয়। তা-ও মাসে একবার।

এ বিষয়ে মিনাখাঁর বিডিও শেখ কামরুল ইসলাম বলেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত সরকারি কোনও নির্দেশ পাইনি। নির্দেশ পেলে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ তিনি জানান, সম্প্রতি নুর হোসেন মোল্লা নামে একজন মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণের ৪ লক্ষ টাকা এসেছে। খুব শীঘ্রই সেই টাকা পরিবারকে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন