ট্রাক আটকে চাঁদার জুলুম কালীপুজোতেও

ভোর সাড়ে ৫টা। অশোকনগরে যশোহর রোডে সাঁ সা করে ছুটছে একের পর এক ট্রাক, ছোট গাড়ি। কিন্তু রেলগেটের সামনে থমকে যাচ্ছে গাড়ির গতি। না, রেলগেটের সতর্কতার জন্য নয়। গাড়ির গতি আটকাচ্ছে বাড়িয়ে দেওয়া চাঁদার বিল।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০৪
Share:

যশোর রোডে এ ভাবেই তোলা হচ্ছে চাঁদা। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ভোর সাড়ে ৫টা। অশোকনগরে যশোহর রোডে সাঁ সা করে ছুটছে একের পর এক ট্রাক, ছোট গাড়ি। কিন্তু রেলগেটের সামনে থমকে যাচ্ছে গাড়ির গতি। না, রেলগেটের সতর্কতার জন্য নয়। গাড়ির গতি আটকাচ্ছে বাড়িয়ে দেওয়া চাঁদার বিল।

Advertisement

মঙ্গলবার দেখা গেল এমনই ছবি। দূর থেকে ট্রাক, মিনিট্রাক, ছোট গাড়ি আসতে দেখলেই জনা পাঁচেক যুবক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দিচ্ছে সেই সব গাড়ি। চালকের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কালীপুজোর চাঁদার বিল। চাঁদা না দিয়ে এলাকা ছাড়ার উপায় নেই। দশ-কুড়ি থেকে একশো, যার কাছ থেকে যেমন পাওয়া যায় তেমনই আদায় করা হচ্ছে। রেলগেটের দু’দিকেই চলছে এ ভাবে চাঁদা আদায়। পড়ে গিয়েছে গাড়ির লাইন। তার মধ্যেই কোনওরকমে একটি ছোট গাড়ি চলে যাওয়ার চেষ্টা করলে তার দিকে রে রে করে তেড়ে গেল চাঁদা আদায়কারীরা। তবে এত সবের মধ্যে কোথাও নজরে পড়ল না পুলিশের নজরদারি।

হাবরার দিকে যাওয়ার পথে দেখা গেল, বিল্ডিং মোড় এলাকাতেও গাড়ি আটকে চলছে চাঁদার জলুম। আবার দত্তপুকুর থেকে বনগাঁ পর্যন্ত প্রায় ৪৫ কিলোমিটার রাস্তায় অন্য ছবি। কোথাও দেখা গেল না গাড়ি আটকে চাঁদা তোলার পরিচিত ছবি। এক গাড়ি চালক জানালেন, এই এলাকায় পুলিশের তৎপরতায় কিছুটা হলেও কাজ হয়েছে। তবে কোথাও চাঁদা না দিলে গালাগালি ভেসে আসছে বলে জানালেন তিনি।

Advertisement

এ বিষয়ে কী বলছেন জেলার পুলিশ কর্তারা?

উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘থানাগুলিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কোনওভাবেই সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদা তোলা বরদাস্ত করা হবে না। যশোর রোডে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে।’’

দুর্গাপুজোর আগে চাঁদা আদায়কারীদের উৎপাত কমাতে গাইঘাটা থানার ওসি অনুপম চক্রবর্তী ও কয়েকজন পুলিশ ট্রাকচালক সেজে ভোরবেলা টহলদারি শুরু করেছিলেন। হাতে হাতে ফলও মেলে। গ্রেফতার হয় কয়েকজন চাঁদার জুলুমবাজ। দুর্গাপুজোর সেই দাওয়াই কিছুটা হলেও কালীপুজোয় কাজ দিয়েছে বলে মত যানচালকদের।

পুলিশ জানিয়েছে, কালীপুজোর আগে হাবরায় যশোর রোডে প্রতিবার চাঁদার জুলুমের অভিযোগে কান পাতা দায় হয়ে ওঠে। এ বারও প্রাথমিক ভাবে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছিল। ভোরে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাও তোলা শুরু হয়েছিল। খবর পেয়ে হাবরা থানার পুলিশ রবিবার ভোরে অভিযান চালিয়ে স্থানীয় জয়গাছি এলাকায় যশোর রোড থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করে। চাঁদার জুলুম রুখতে পুলিশের এ হেন সক্রিয়তায় কিছুটা কাজ হয়েছে বলে মানছেন স্থানীয়রা।

যদিও পুলিশি তৎপরতার পরেও সোমবার গাইঘাটার কুলপুকুর ও ন’হাটা মোড়ে কিছু যুবককে চাঁদা তুলতে দেখা গিয়েছে। তবে অনেক গাড়িচালককে চাঁদা না দিয়ে চলে যেতেও দেখা গিয়েছে। কয়েক জন চালক জানান, আগে চাঁদা না দেওয়ায় তাঁদের মারধরও খেতে হয়েছে। ভাঙচুর করা হয়েছে গাড়ি। তবে এ বার চাঁদার জুলুম কিছু কম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন