বাদুড়িয়া থেকেই পাকড়াও ‘ফেরার’ মরা-মুরগির কারবারি

এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও মরা মুরগির কারবারিদের খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে এই কারবারের মাথা মনিরুল মণ্ডল ওরফে রাজুকে পাকড়াও করল পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৮ ০১:৩৯
Share:

অভিযান: মরা মুরগি ধরতে তৎপরতা। ছবি: নির্মল বসু

এলাকায় জনরোষ ছিল দীর্ঘ দিন ধরেই। কিন্তু, হেলদোল ছিল না প্রশাসনের। এলাকায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেও মরা মুরগির কারবারিদের খুঁজে পাচ্ছিল না পুলিশ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ধমকের পরে এই কারবারের মাথা মনিরুল মণ্ডল ওরফে রাজুকে পাকড়াও করল পুলিশ।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দেওয়া ইস্তক সে গা ঢাকা দিয়েছিল। পুলিশ যাকে ফেরার বলছিল, সোমবার সকালে বাদুড়িয়ারই আরসুলা গ্রামে তার সন্ধান পায় পুলিশ। এর আগে পুলিশ অবশ্য সাত জনকে গ্রেফতার করেছিল। তবে মনিরুলই ছিল মূল অভিযুক্ত। পুলিশ জানিয়েছে মরা মুরগির কারবারে সেই ছিল ‘মাস্টার মাইন্ড’।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মনিরুলের ডেরা থেকে রোজ ফর্মালিনে চোবানো প্রচুর মুরগির মাংস বরফ দিয়ে কলকাতা-সহ লাগোয়া বিভিন্ন বাজারে যেত। মনিরুলকে বসিরহাট আদালত তিন দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে। এই কারবারে যুক্ত বাকিদের ধরতে জোর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।

Advertisement

কী ভাবে চলছিল মরা মুরগির কারবার? তা জানতে সোমবার বাদুড়িয়ার বল্লবপুর গ্রামে যান জেলা পরিষদের সভাধিপতি রেহানা খাতুন। গ্রামের বাসিন্দারা তাঁকে জানান, অসুস্থ এবং মরা মুরগি কেটে প্রায় প্রকাশ্যে ফর্মালিন মাখিয়ে বরফ দিয়ে সংরক্ষণ করা হত। মুরগির ছাল, নাড়ি-ভুড়ি পুকুরে ফেলে দেওয়া হত। তাতে দুর্গন্ধ যেমন ছড়াত, তেমন জল দূষিত হয়ে রোগ ছড়াত। মরা মুরগির কারবারের জন্য যে জমি ব্যবহার করা হত, তার মালিক এবং কারবারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেন রেহানা।

তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নির্দেশে বাদুড়িয়ায় এসেছি। ফের যাতে এই কারবার না ফাঁদে, তার জন্য স্থানীয় বাসিন্দা এবং স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের নজরদারির কাজে লাগানো হবে।’’

সভাধিপতিকে সামনে পেয়ে এ দিন গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, পুলিশের সঙ্গে হাত মিলিয়েই কারবার চালাচ্ছিল মনিরুলরা। বল্লভপুরের বাসিন্দা ভুট্টো মণ্ডল, আব্দুল নইম, সেলিম গাজি, রুকসানা বিবিদের অভিযোগ, ‘‘মুরগির কারবারিদের কিছু বলতে গেলে, তারা উল্টে পুলিশের ভয় দেখাত।’’

এ দিন সভাধিপতির সঙ্গে ছিলেন বাদুড়িয়া পুরসভার চেয়ারম্যান তুষার সিংহ, জেলা পরিষদের স্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ জ্যোতি চক্রবর্তী-সহ প্রশাসনের অন্যান্য কর্তারা। তুষারবাবু বলেন, ‘‘যে সব মুরগি খামারের ট্রেড লাইসেন্স নেই, তার মালিকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা শুরু হয়েছে।’’ এ দিকে, মরা মুরগি নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ায় ব্যবসা কার্যত লাটে উঠেছে অন্যান্য খামার মালিকদের। তাঁদের অভিযোগ বসিরহাট-বাদুড়িয়া থেকে কেউ মুরগি কিনতে রাজি হচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফর্মালিন মাখানো মুরগির মাংসের নমুনা এখনও পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পারেনি প্রশাসন। ফলে কারবারিদের অপরাধ প্রমাণ করা যাবে না। এই ফাঁক গলে তারা দিব্যি খালাস পেয়ে যাবে। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে যে, বসিরহাট এবং দেগঙ্গার কিছু এলাকাতেও মরা মুরগির কারবার চলছে। অভিযান চালানো হবে সেই এলাকাতেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন