এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি মেনে অবশেষে মণি নদীর উপর আরও একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। এই সেতু চালু হলে মথুরাপুর ২ ও জয়নগর ২ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ ও উন্নত হবে। আপাতত সেই আশাতেই রয়েছেন এখন স্থানীয় বাসিন্দারা।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এই দু’টি ব্লকের ভূমিভাগকে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন করেছে মণি নদী। দুই ব্লকের দুই পাড় পূর্ব জটা ও চুপড়িঝাড়ার মধ্যে সংযোজক সেতুর অসম্পূর্ণ কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। অন্য সেতুটি হল মথুরাপুর ২ ব্লকের রায়দিঘি পঞ্চায়েতের ২৩ নম্বর লাট গ্রামের সঙ্গে জয়নগর ২ ব্লকের নলগোড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নলগোড়া গ্রামের মধ্যে সংযোজক। এখানে মণি নদী প্রায় দেড়শো মিটার চওড়া। দাঁড় টানা নৌকোয় পারাপারের ব্যবস্থা। প্রতিদিনই হাজার হাজার যাত্রী পারাপার ছাড়াও নৌকায় বোঝাই হয় নানা পণ্যসামগ্রী, নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, সাইকেল, মোটর সাইকেল ইত্যাদি। নামমাত্র তৈরি কংক্রিটের জেটিতে জলকাদায় নিত্য সেই পারাপার খুবই কষ্টকর বলে অভিযোগ যাত্রীদের। বারবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন সেতু নির্মাণের। সে কারণেই সেতুর মাধ্যমে দুই ব্লককে যুক্ত করে সমস্যামুক্ত করার লক্ষ্যেই এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। নলগোড়ার বাসিন্দা রামপদ সর্দার, ভোলানাথ বিশ্বাসরা বলেন, “রাতে নৌকা করে নদী পেরোনো খুবই ভয়ঙ্কর। তারপরে ইঞ্জিন ভ্যানে করে যাতায়াত করতে হয় চোদ্দো রশি অথবা জয়নাল পর্যন্ত। এমনি মানুষই নাজেহাল হয়ে যায়। আর যদি রোগী বা প্রসূতি থাকে তা হলে তো আর কোনও কথাই নেই।” তাই তাঁদের দাবি, সেতু নির্মাণ করার পাশাপাশি দুই পারের ইটের রাস্তা কংক্রিটের কিংবা পাকা হলে ভাল হয়। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক ঘোষ বলেন, “দ্রুত পরিবহণের সমস্যা মিটলে এলাকার আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। এলাকায় উৎপাদিত কৃষিজ পণ্য রফতানি করার পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।”
সরকারি ভাবে সেতুটি নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় ‘হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনকে। কমিশন সেই কাজের বরাত দিয়েছে একটি বেসরকারি সংস্থাকে। ১৬০ মিটার লম্বা ও সাড়ে সাত মিটার চওড়া এবং দু’দিকে এক মিটার করে ফুটপাত-সহ এই সেতুটি নির্মাণের জন্য খরচ হবে প্রায় ১৬ কোটি টাকা। কাজ শেষ করার সময়সীমা আঠারো মাস দেওয়া হলেও সংস্থাটির দাবি, এই সময়সীমার মধ্যে যেহেতু দু’বার বর্ষাকাল আসবে তাই কাজ শেষ করতে প্রায় দু’বছর লাগবে। এপ্রিলেই কাজের আনুষ্ঠানিক সূচনা হলেও এখনও কাজ পুরোপুরি শুরু হয়নি। সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পদ্মলোচন সাহু বলেন, “সেতুর দু’দিকে প্রায় তিনশো মিটার পাকা রাস্তা তৈরির কথাও রয়েছে প্রকল্পে। তবে, মূল রাস্তা থেকে সেতুর দুই প্রান্তের দূরত্ব কয়েক কিলোমিটার করে হওয়ায় এবং সেই রাস্তা সংকীর্ণ ও ইটের তৈরি হওয়ায় নির্মাণ সামগ্রী পরিবহণে সমস্যা হচ্ছে।”