তারের-জট: কাঁচরাপাড়া বাজারে। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কতই বা দূরত্ব হবে? মেরেকেটে ৫০০ মিটার। নিউ বিবেকানন্দ হকার্স মার্কেট থেকে কাঁচরাপাড়া আনন্দ বাজারের দূরত্ব হয়তো তারও কম।
নিউ বিবেকানন্দ হকার্স মার্কেটের অগ্নিকাণ্ডের পরে প্রশ্ন উঠছে, কাঁচরাপাড়ার অন্যান্য বাজারগুলি কি সুরক্ষিত? আনন্দ বাজার ঘুরে সুরক্ষার ন্যুনতম ব্যবস্থাও দেখা গেল না। ব্যবসায়ীরা মানছেন যে, সুরক্ষা থাকা খুবই দরকার। কিন্তু, সেই ব্যবস্থা আজও করে ওঠা হয়নি প্রায় ৫০ বছরের বাজারটির। বাজারের নিজস্ব কোনও ‘অগ্নি নির্বাপকযন্ত্র’ নেই। নেই কোনও জলাধার।
বাজারের ১১০টি দোকানে মজুত প্রচুর পোশাক এবং অন্যান্য দাহ্য পদার্থ। শুধু তাই নয়, বাজারের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত তারের কাটাকুটি। কোনওটি বিদ্যুতের তো কোনওটি কেবল-এর। তারগুলি এমন জট পাকিয়ে গিয়েছে যে, কোনও একটি নির্দিষ্ট তার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ফলে বছরের পর বছর সেই তারে হাত পড়ে না, ফলে ছাড়ে না জটও।
এখানকার ব্যবসায়ীরাই মানছেন, এই বাজার কার্যত জতুগৃহ হয়ে রয়েছে। বিবেকানন্দ মার্কেটে আগুন লেগেছিল শর্ট-সার্কিট থেকে। তেমন ঘটনা যে এখানে ঘটবে না, তেমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। তেমন ঘটনা ঘটলে কী হবে, তা জানা নেই ব্যবসায়ীদের। তাঁরা ভরসা করে রয়েছেন, বাজারের বাইরের ডোবাটি পুরসভা সংস্কার করে দিক।
কাঁচরাপাড়া শহর জুড়ে বেশ কয়েকটি বড় বাজার রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম এই আনন্দ বাজার। জেলা তো বটেই, ভিন্ জেলা থেকেও প্রতিদিন অনেক মানুষ কাঁচরাপাড়ায় আসেন কেনাকাটা করার জন্য। ব্যারাকপুর মহকুমা তো বটেই, পাশের নদিয়া জেলাতেও কাঁচরাপাড়ার মতো জমজমাট বাজার নেই। ফলে কাঁচরাপাড়ায় প্রতিদিন দোকানের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনই বাড়ছে ছোটখাটো বাজারের সংখ্যাও।
আনন্দ বাজার কাঁচরাপাড়া গাঁধী মোড় লাগোয়া এলাকায়। অন্যান্য বাজারগুলির তুলনায় বেশ ঝকঝকে এই বাজারটি। বাজারের মাঝখানে প্রসস্থ জায়গা রয়েছে। প্রায় প্রতিটি দোকানই সাজানো গোছানো। বাজারের বেশিরভাগ দোকানই পোশাকের।
দু’-একটি প্রসাধনীর দোকানও রয়েছে। বেশ বড়সড় একটি লাগেজের ‘শো-রুম’ রয়েছে বাজারের শুরুতেই। প্রায় সব দোকানেই দাম মেটানোর ক্যাশলেস ব্যবস্থা। দোকানের সামনে ফলাও করে লেখা সব ক্রেডিট কার্ড গ্রহণযোগ্য।
যে বাজার দাম মেটানোর ক্ষেত্রে এমন আধুনিক, সেই বাজারে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা নেই কেন? বাজার কমিটির সহ-সভাপতি অশোক সাহা বললেন, ‘‘সুরক্ষার প্রয়োজন তো অবশ্যই রয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কিছু করে ওঠা যায়নি।’’ কিন্তু, কেন? অশোক বলছেন, ‘‘আসলে বাজারে তো অনেক দোকান। সবার মত থাকা চাই।’’ সুরক্ষার ক্ষেত্রে দোকানিদের মতবিরোধ থাকবে কেন? সেই প্রশ্নের কোনও জবাব মেলেনি।
অশোক জানান, বাজারের বাইরেই একটি ডোবা রয়েছে। সেটি পুরসভা সংস্কার করে দেবে বলেছিল। তা সংস্কার হলে সমস্যা অনেকটাই মিটবে। কাঁচরাপাড়ার পুরপ্রধান সুদামা রায় বলেন, ‘‘সব বাজারের অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে। যাঁদের কোনও ব্যবস্থা নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই ব্যবস্থা তাদের করতে হবে। পুরসভার দিক থেকে যা যা করার তাও করা হবে।’’