ট’বাজারে ঢোকার সংকীর্ণ পথ। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক
বাজারে ঢোকার তিনটি সরু গলি। তার মধ্যে একটি গলির পাশে ডাঁই করে রাখা মাটির হাঁড়ি-সহ জিনিসপত্র। রাস্তার উপরেই দাঁড় করানো রয়েছে বাইক-সাইকেল। বাজারের মধ্যে চায়ের দোকানে স্টোভ জ্বালিয়ে রান্না হচ্ছে।
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, আগুন লাগলে কোনও ভাবে দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারবে না বনগাঁর ট’বাজারে। সম্প্রতি পুরসভার তরফে বাজারটির পরিকাঠামোর অনেকটাই উন্নতি করা হয়েছে। কিন্তু ওই গলির পরিস্থিতি বদলায়নি। ব্যবসায়ীরা জানান, ট’বাজারের মধ্যে ঢোকার তিনটি রাস্তা রয়েছে। বাকি দু’টি রাস্তা তুলনায় চওড়া হলেও কোনও কারণে আগুন লাগলে দমকলের গাড়ি বাজারের ভিতরে ঢুকতে পারবে না। বাজারে নেই আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও নেই।
কয়েক বছর আগে একটি খই-মুড়ির দোকানে আগুন ধরে গিয়েছিল। খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল। কিন্তু কাজ শুরু করতেই পারেননি কর্মীরা। কারণ, দমকলের গাড়ি বাজারের মধ্যে ঢুকতেই সময় লেগে যায়। শেষে বাইরে থেকে পাইপ লাগিয়ে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে জল আনার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আশেপাশের দোকানিরাও নিজেরা জল ঢেলে চেষ্টা চালান। আগুনের তীব্রতা কম থাকায় সে বার বেশি ক্ষতি হয়নি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় তিনশো দোকান এই বাজারে। রোজ হাজার চারেক মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন। বাজার-সংলগ্ন এলাকায় কয়েকটি পরিবারও বাস করেন। তাঁরাও সব সময়ে আতঙ্কে থাকেন। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। বাজারের পিছন দিয়েই গিয়েছে ইছামতী। নদীর পাশে স্থায়ী পাম্পসেট বসানোই যেত। তা হলে সমস্যা মিটত।’’
আগে বাজারে ঢোকার বাইরে রাস্তার উপরে অস্থায়ী দোকানপাট বসত। রাস্তার উপরে গাড়ি পার্ক করা হত। বড় গাড়ি ঢোকার কোনও পরিস্থিতি ছিল না। সম্প্রতি বনগাঁ পুরসভার তরফে রাস্তায় বসে থাকা অস্থায়ী দোকানপাট সব তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই সব ব্যবসায়ীদের জন্য হকার্স মার্কেট করে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তাটি সংস্কার করে আরও চওড়া করা হয়েছে। ফলে বড় গাড়িও অনেক সহজেই যাতায়াত করতে পারছে। আগুন লাগলে ওই সড়কের উপরে দমকলের গাড়ি আসতে পারবে। কিন্তু বাজারে ঢোকা মুশকিল।
অন্য একটি গলির মধ্যে মাছের পাইকারি কারবার চলে। মাছ ভর্তি ট্রে গলির মধ্যে রাখা হয়। আর একটি গলির উপরে আনাজ ব্যবসায়ীরা মালপত্র নিয়ে বসে রয়েছেন। ওভেন ও স্টোভ জ্বালিয়ে চা তৈরি হয়। বাজারের মধ্যে কেউ কেউ বিড়ি সিগারেট খাচ্ছেন। বিদ্যুতের তার বিপজ্জনক ভাবে উপরে ঝোলে। বাজারে আলো ঢোকে না বললেই চলে। অনেক দোকানের উপরে প্লাস্টিকের ছাউনি দেওয়া।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, দূরে পাইপ লাগিয়ে জল দিয়ে আগুন নেভানো হলে জলের গতি কমে যায়। ফলে এ ধরনের জায়গায় কাজ করা সত্যি মুশকিল।