শরীরের অসুবিধা নিয়ে মাঠে নেমেও মাত করল সুচিত্রারা

একে একে লক্ষ্মী, কৃষ্ণেরাও এল মাঠে। দর্শকেরা মুগ্ধ। ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় ছেলেমেয়েরা সকলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসকে মনে রেখে মঙ্গলবার দুপুরে রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের দক্ষিণ চক্রের পরিচালনায় খাড়ি হাইস্কুল মাঠে প্রতিবন্ধী স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই বসেছিল এই আসর।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

রায়দিঘি শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:১৪
Share:

তাক-লাগানো: প্রতিযোগিতায় ছেলেমেয়েরা। নিজস্ব চিত্র

সরু, বেঁটেখাটো চেহারার সুচিত্রার জন্মের পর থেকেই হাত-পা, শরীর প্রায় অচল। কোনও মতে চলাফেরা করে। তৃতীয় শ্রেণির সেই ছাত্রী যখন ভূত সেজে মাঠে নামল, সকলের চোখ ছানাবড়া।

Advertisement

একে একে লক্ষ্মী, কৃষ্ণেরাও এল মাঠে। দর্শকেরা মুগ্ধ। ‘যেমন খুশি সাজো’ প্রতিযোগিতায় ছেলেমেয়েরা সকলেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসকে মনে রেখে মঙ্গলবার দুপুরে রায়দিঘির মথুরাপুর ২ ব্লকের দক্ষিণ চক্রের পরিচালনায় খাড়ি হাইস্কুল মাঠে প্রতিবন্ধী স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের নিয়েই বসেছিল এই আসর। বসে আঁকো প্রতিযোগিতাও হয়েছে। প্রায় ৮০ জন প্রতিযোগী যোগ দিয়েছিল।

গ্রামীণ এলাকায় পুষ্টির অভাব, সচেতনতার অভাবের জন্য বহু প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়ের জন্ম হয়। নানা রোগের শিকার হয়েও অনেকের চলাফেরা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো হয়ে পড়ে। মানসিক ভারসাম্যহীনতা তো আছেই। কিন্তু এ ধরনের ছেলেমেয়েদের প্রশিক্ষণের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই সর্বত্র। সবার আগে দরকার প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকা। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। কোনও মতে প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি করা হলেও পঞ্চম শ্রেণিতে বড় স্কুলে এ ধরনের ছেলেমেয়েদের ভর্তি নিতে চায় না বহু স্কুল— রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এমন অভিযোগ ওঠে ভুরি ভুরি।

Advertisement

মথুরাপুর ২ ব্লকের এই চক্রে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র আছে ২৭টি, প্রাথমিক স্কুল ৬৫টি। হাইস্কুল ২০টি ও অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ১৪৫টি। সব প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রতিবন্ধীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০ জন। তাদের দেখভালের জন্য আছেন ২ জন বিশেষ শিক্ষক (স্পেশাল এডুকেটর)। প্রতিবন্ধীদের চিহ্নিত করে তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কথা জানানোর জন্য আছে ৭টি রির্সোস রুম। কিন্তু মাত্র দু’জন প্রশিক্ষকের পক্ষে এত ছেলেমেয়ের তালিম দেওয়া যে মুশকিল, সে কথা মানেন সকলেই।

বিশেষ শিক্ষক সুমনা দাস বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে নানা সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। এ ধরনের ছেলেমেয়েদের স্কুলে ভর্তি করাতে গেলে শিক্ষকেরা নানা অজুহাত খাড়া করে মুখ ফিরিয়ে নেন। কর্মীর সংখ্যা কম থাকায় সময় মতো সব জায়গায় পৌঁছনো যায় না। এ ধরনের শিশুদের শিক্ষার অধিকার থাকলেও তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিবন্ধী খুদেরা।’’

ওই চক্রের স্কুল পরিদর্শক স্নেহাজিৎ দে-র কথায়, ‘‘প্রতিবন্ধী ছাত্রছাত্রীদের মনের বিকাশ ঘটাতে ও তাদেরকে নানা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। তাদের দিয়েই রাস্তার ধারে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন