গণতন্ত্র এমনই হওয়া উচিত, বলছেন ভোটার

সম্ভবত দক্ষিণবঙ্গের কোনও একটি পুরসভা থেকে যদি গণ্ডগোলের ছিটেফোঁটা খবরও না এসে থাকে, তবে সেটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-মজিলপুর। এমনকী, রাজ্য জুড়ে যেখানে বহিরাগত ঢোকার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল বিভিন্ন পুর এলাকা, সেখানে এই অভিযোগও তোলেনি বিরোধী দলগুলি। এমনকী, বুথের সামনে সামান্যতম জটলার খবর পেলেও পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে লাঠি উঁচিয়ে হঠিয়ে দিয়েছে জনতাকে। শান্তিপূর্ণ ভোট করতে পারায় পুলিশ-প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরে খুশি স্থানীয় মানুষও।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

জয়নগর-মজিলপুর শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫২
Share:

ভূমিকম্পে পুকুরের জলও টালমাটাল তখন। নিশ্চিন্ত-ভোটে সেই ছবিই মোবাইল-বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন এক নিরাপত্তাকর্মী। শনিবার জয়নগরে তোলা নিজস্ব চিত্র।

সম্ভবত দক্ষিণবঙ্গের কোনও একটি পুরসভা থেকে যদি গণ্ডগোলের ছিটেফোঁটা খবরও না এসে থাকে, তবে সেটি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর-মজিলপুর। এমনকী, রাজ্য জুড়ে যেখানে বহিরাগত ঢোকার অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তাল বিভিন্ন পুর এলাকা, সেখানে এই অভিযোগও তোলেনি বিরোধী দলগুলি। এমনকী, বুথের সামনে সামান্যতম জটলার খবর পেলেও পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছে লাঠি উঁচিয়ে হঠিয়ে দিয়েছে জনতাকে। শান্তিপূর্ণ ভোট করতে পারায় পুলিশ-প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছে সব রাজনৈতিক দল। নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরে খুশি স্থানীয় মানুষও।

Advertisement

জয়নগর-মজিলপুরে অবশ্য ভোটে এর আগেও কখনও বড় গোলমাল হয়নি। এলাকার বাসিন্দা অমিত মিত্র, অঞ্জু ভট্টাচার্যর মতো নবীন ভোটাররা বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে যে সব খবর কিছু দিন ধরেই আসছিল, তার ফলে এখানে কতটা নির্বিঘ্নে ভোট হবে, তা নিয়ে কিছুটা সংশয় তো ছিলই। কিন্তু জীবনে প্রথম বার ভোট দিতে গিয়ে বেশ ভাল অভিজ্ঞতাই হল। গণতন্ত্র তো এমনই হওয়া উচিত।’’

অন্য দিকে, অশোকনগরেও ভোট মিটেছে শান্তিতে। তবে বহিরাগতদের ভিড় ছিল সেখানে। শুরু হয়েছিল তাদের দাপাদাপি। কিন্তু পুলিশের সক্রিয়তায় পিছু হঠল তারা। সেই সঙ্গে আকাশ ভাঙা বৃষ্টির দাপটেও ভোটের দিন অশোকনগর-কল্যাণগড়ে বিশেষ ট্যাঁ-ফু করতে পারল না দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ অশোকনগর-কল্যাণগড় পুরসভা এলাকার হরিপুর মোড়ে মোটর বাইকে করে শ’খানেক বহিরাগতরা জড়ো হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ আসে। তাদের লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে হঠিয়ে দেওয়া হয়।

সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ওই পুরসভারই ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বনবনিয়া এলাকায় বহিরাগতরা এসে ধমকে-চমকে এলাকার দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। পুলিশ গিয়ে লাঠি চালিয়ে তাদের সরায়।

৯ নম্বর ওয়ার্ডের গাঁধী সেন্টেনারি বিএড কলেজে বাইক বাহিনী জড়ো হয়েছিল। কিন্তু ওই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী সত্যসেবী কর ও বিজেপি প্রার্থী তনুজা চক্রবর্তী লোকজন নিয়ে রুখে দাঁড়ানোয় উল্টো দিকের জমায়েত ফাঁকা হয়ে যায়।

ভোটের দিন, শনিবার সকাল থেকেই গোটা পুর এলাকা জুড়ে ছিল বাইক বাহিনীর দাপাদাপি। বহিরাগতরা বুথ জ্যাম করার চেষ্টা করেছে। তবে সকাল ১১টা থেকে বেলা ২টো পর্যন্ত প্রবল বৃষ্টি পুলিশের কাজটা অনেক সহজ করে দিয়েছে। এক হোটেল মালিককে বলতে শোনা গেল, ‘‘বৃষ্টি আমাদের অনেকটা স্বস্তি দিয়েছে। বহিরাগতরা এলাকায় ঢুকলেও বৃষ্টির জন্য দাপট দেখাতে পারেনি।’’

রাস্তাঘাট দীর্ঘ ক্ষণ সুনসান ছিল। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের আশপাশে রাজনৈতিক দলগুলির ক্যাম্পও অনেকটা সময় ফাঁকাই পড়ে ছিল।

সত্যসেবীবাবু বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত থেকে বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে, যা এখানকার ভোটে নতুন দৃশ্য। যদিও মানুষ সন্ত্রাসের আবহকে ছিন্ন করে ভোট দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে পুলিশকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে।’’

বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘রাজ্যের অন্যত্র ভোটের তুলনায় এখানে অনেক শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তবে পুলিশের ভূমিকা আরও নিরপেক্ষ হবে আশা করেছিলাম।’’

গোবরডাঙার পুর এলাকাতেও এ দিন বহিরাগতদের বাইক নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম কোনও বুথ এজেন্ট দিতে পারেনি। এমনকী, প্রার্থী শমীক সরকারও ওয়ার্ডে ঢুকতে পারেননি বলে অভিযোগ। মূলত আশপাশের পঞ্চায়েত এলাকা থেকে তৃণমূল লোক নিয়ে এসেছিল বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তবে বৃষ্টির জন্য বহিরাগতদের দাপাদাপি কিছুটা কম হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে বা সূত্র মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বহিরাগতদের সরিয়ে দিয়েছে কিছু জায়গায়।

সিপিএম নেতা বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘১-১৭ নম্বর প্রতিটি ওয়ার্ডেই বহিরাগতেরা বুথ জ্যাম করে ৫০-৭০টি করে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। দু’জন কর্মীকে মারধর করা হয়েছে।’’

বিরোধীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা শঙ্কর দত্ত বলেন, ‘‘কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে ভোট বিরোধীরা নিজেদের রাজনৈতিক দৈন্যতা ঢাকতে গল্প ফাঁদছে।’’

সহ প্রতিবেদন: সীমান্ত মৈত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন