Panchayat Elction

‘ভোটে যেন সকলে সুরক্ষিত থাকেন’

ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তারক্তি এ বাংলায় পুরনো ‘রাজনৈতিক সংস্কৃতি’। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটও ব্যতিক্রম নয়। সে বার যে সব পরিবারে হানা দিয়েছিল সন্ত্রাস, এ বার ভোট নিয়ে কী বলছেন তাঁরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র  

হাবড়া শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:১৮
Share:

বিপ্লব সরকার। নিজস্ব চিত্র

জীবনে প্রথম বার ভোটে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছিলেন হাবড়া ১ ব্লকের বেড়গুম ২ পঞ্চায়েতের বাসিন্দা বিপ্লব সরকার। কিন্তু সে কথা জানতেও পারলেন না। কারণ, পঞ্চায়েত ভোটের দিনই তাঁকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছিল।

Advertisement

দিনটা ছিল ১৪ মে, ২০১৮। রাজ্যে সে দিন ছিল পঞ্চায়েত ভোট। বিপ্লব তৃণমূলের হয়ে হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়েছিলেন।

কী হয়েছিল ওই দিন?

Advertisement

গ্রামের মানুষ জানালেন, সকাল থেকে ভোট নির্বিঘ্নেই চলছিল। দুপুরের পর থেকে পরিবেশ পাল্টে যেতে থাকে। শুরু হয় বহিরাগত বাইক বাহিনীর তাণ্ডব। তাদের অনেকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল।

ভোটগ্রহণ পর্ব তখন প্রায় শেষের মুখে। বিকেল ৫টা নাগাদ বিপ্লব ভোটগ্রহণ কেন্দ্র থেকে বেরিয়ে কাছেই অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ে বসেছিলেন। আচমকাই এক দল লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে বিপ্লবের উপরে চড়াও হয়। মারধর করা হয় বিপ্লব ও তাঁর সঙ্গী অনুপ দাসকে। তিনি তৃণমূল কর্মী। আশঙ্কাজনক অবস্থায় দু’জনকে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিপ্লব মারা যান। বহু দিন চিকিৎসার পরে অনুপ সুস্থ হন।

জমিজমা রেজিস্ট্রি করার কাজ করতেন বিপ্লব। এ ছাড়া, একটি স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ও একটি কৃষি সমবায় সমিতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ঘটনার পরে পেরিয়েছে প্রায় পাঁচ বছর। ফের সামনে পঞ্চায়েত ভোট। বিপ্লবের বৃদ্ধা মা আভা ছেলের মৃত্যুর পর থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এখনও ছেলের কথা মনে পড়লে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

২০১৮ সালের ভোটে বিপ্লবের পরিবারের আরও এক জন ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। রুমা সরকার নামে বিপ্লবের এক বৌদি দাঁড়িয়েছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের আসনে। রুমাও ভোটে জেতেন। পরে বেড়গুম ২ পঞ্চায়েতের প্রধানও হয়েছেন।

গত পঞ্চায়েত ভোটের ভয়াবহ স্মৃতি এখনও তাঁকে তাড়া করে বেড়ায়। রুমা বলেন, ‘‘গত ভোটে আমার পরিবারের সঙ্গে যে ঘটনা ঘটেছে, চাই না তেমন কিছু আর কারও সঙ্গে ঘটুক। চাইব, ভোটে প্রতিটি মানুষ, ভোটার, প্রার্থী যেন সুরক্ষিত থাকেন।’’

একান্নবর্তী পরিবার বিপ্লবদের। বিপ্লবের মৃত্যুর পরে তাঁর স্ত্রী শুভ্রাকে রাজ্য সরকার গ্রুপ-ডি পদে চাকরি দিয়েছিল। তিনি এখন জেলাশাসকের দফতরে কর্মরত। বিপ্লবের এক ছেলে এবং এক মেয়ে।

রুমা বলেন, ‘‘আমার দেওরকে যখন খুন করা হয়েছিল, তখন ওঁর ছেলের বয়স মাত্র এক বছর। বাবা ডাকতে পর্যন্ত শেখেনি। জন্ম থেকে ছেলেমেয়েরা বাবাকে পেল না।’’

তাঁর দাবি, ‘‘দেওরকে খুনের ঘটনায় কয়েক জন গ্রেফতার হলেও ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ছিলেন বিজেপির এক নেতা। তিনি পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী ছিলেন। এখনও গ্রেফতার হননি।’’

বিপ্লব খুনের ঘটনার পরে শাসক তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছিল, বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই পরিকল্পিত ভাবে খুন করেছে। পুলিশ বিজেপির গ্রাম পঞ্চায়েতের এক প্রার্থী-সহ কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছিল। হাবড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অজিত সাহা বলেন, ‘‘বিপ্লব ভোটে দাঁড়াতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু এলাকায় ওঁর জনপ্রিয় দেখে জোরাজুরি করেছিলাম। খুবই সৎ মানুষ।’’ অজিতের অভিযোগ, ‘‘বিজেপি জিততে পারবে না বুঝতে পেরে পরিকল্পিত ভাবে বিপ্লবকে খুন করেছিল।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে হাবড়ার বিজেপি নেতা বিপ্লব হালদার বলেন, ‘‘ভোটে তৃণমূল বুথ দখল করে ছাপ্পা দিতে গিয়েছিল। গ্রামের মানুষ ও ভোটারেরা প্রতিরোধ করেন। বিজেপির লোকজনকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে আমাদের অনেকেই এখনও ঘরছাড়া বা জেল খাটছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন