একা বসে বৃদ্ধা। —নিজস্ব চিত্র।
ভাত জুটছে না পেটে, কিন্তু ভোট দেওয়ার ইচ্ছায় ভাটা পড়েনি। যদিও অনেকেরই অভিজ্ঞতা, ভোট দিতে গিয়ে শুনেছেন, তাঁর নামের ভোট নাকি আগেই পড়ে গিয়েছে!
ইছামতীর পাড়ে বরুণহাটের জবেদ পাড়া। ওই পাড়াকে এলাকার মানুষ স্বামীহারাদের পাড়া বলেই জানে। এক সময়ে সেখানকার বেশির ভাগ বাসিন্দার রুজি বলতে সুন্দরবনের জঙ্গল থেকে মধু-কাঠ সংগ্রহ এবং নদীনালা থেকে মাছ ধরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এখানকার অন্তত ৪০-৫০ জন পুরুষ জঙ্গলে গিয়ে আর ফেরেননি। তাঁদের স্ত্রীরা অকালে স্বামীহারা। অনেককে ভাগ্যের ফেরে স্বামীর ভিটেও ছাড়তে হয়েছে।
পেট চলে কী করে তাঁদের?
ওই মহিলাদের অনেককেই কাজের আশায় ভিন রাজ্যে পাড়ি দিতে হয়। যাঁরা যেতে পারেন না, তাঁরা নদীতে মিন ধরে, ইটভাটায় কাজ করে কোনও রকমে দিন গুজরান করেন। প্রতিদিনের জীবনকে টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রতি নিয়ত বাস্তবের সঙ্গে কঠিন লড়াই তাঁদের। ওই মহিলারা জানালেন, ভোটের পিছু পিছুই আসে প্রতিশ্রুতি। পঞ্চায়েত, বিধানসভা, লোকসভা ভোট এলেই প্রতিশ্রুতি বিলোতে তৎপর হন নেতারা। স্বামী মারা যাওয়ার পরে প্রাপ্য ভাতা, সরকারি নানা প্রকল্পের সুবিধা, রেশন-সহ নানা সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার ভরপুর আশ্বাস থাকে। প্রতিশ্রুতির অধিকাংশই অবশ্য বাস্তবায়িত হয় না বলে এই সব মহিলাদের অভিজ্ঞতা। তাঁদের অধিকাংশই সরকারি কোনও সুযোগ-সুবিধাও তেমন একটা পান না বলে জানালেন।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই না পাওয়াদের তালিকার খুব উপরের দিকেই আছেন অতি গাজি। বছর পঁয়ষট্টির অতির দু’বেলা খাওয়াই জোটে না। এক চিলতে দরমার ঘরে শুয়ে জ্বরে কাঁপতে-কাঁপতে অতি বলেন, ‘‘স্বামী বাঘের পেটে গিয়েছেন চল্লিশ বছর হবে। সে সময়ে সরকারি সাহায্য মেলেনি। তিন সন্তানের এক জন মারা গিয়েছে। মেয়ে এবং বৌমার স্বামীও মারা গিয়েছেন। রেশনের চাল-আটা ছাড়া অন্য আর্থিক সাহায্য কিছুই মেলেনি।’’
ভোট দিতে যাবেন?
প্রশ্ন শুনে কোনও রকমে হাতে ভর দিয়ে উঠে বসে অতি বললেন, ‘‘দিতে তো চাই। কিন্তু দেব কী ভাবে? অধিকাংশ ভোটে তো প্রার্থীই দিতে দেওয়া হয় না। ভোটের দিন বাড়িতে বসেই কাটাই।’’
কিছুটা সাহায্য মিলেছে এমন হাতেগোনা যে ক’জন ওই গ্রামে আছেন তাঁদেরই একজন জোহরা গাজি। তাঁর স্বামী মহব্বতকেও বাঘে খেয়েছিল। জোহরার কথায়, ‘‘সরকারি সাহায্য হিসাবে ২ হাজার টাকা মিলেছিল। এখনকার সরকার পাকা ঘর, রেশনের ব্যবস্থাও করেছে।’’
ভোট দেবেন তো? প্রশ্নে অবশ্য তাঁরও আপসোস শোনা গেল। জানান, নিজের ভোট নিজে দেওয়া বড় একটা হয়ে ওঠেনি তাঁর। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে শোনেন ভোট পড়ে গিয়েছে।
ওই গ্রামের সালেয়া বিবি আবার অন্য কথা শোনালেন। ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘‘পরিচিতি না থাকলে প্রকল্প-ঘর কিছুই মেলে না। তাই কেউ দু’তিনখানা ঘর পান, আবার কারও ভাগ্যে একটাও জেটে না।’’