৯ বার ধরা পড়ল বেআইনি মদের কারবারি

ব্রেকের কারবারে ব্রেক কষবে কে

বার বার ন’বার। ব্রেকের কারবারে ‘ব্রেক ফেল’ হওয়ার লক্ষণ নেই।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

হাবড়া শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:২৫
Share:

ধরা পড়েও বেপরোয়া ব্রেক

বার বার ন’বার। ব্রেকের কারবারে ‘ব্রেক ফেল’ হওয়ার লক্ষণ নেই।

Advertisement

বেআইনি দেশি মদের কারবারি ব্রেক পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে দিন কয়েক আগে। এই নিয়ে ন’বার। পুলিশের গাড়িতে ওঠার আগে সে সাংবাদিকদের বলে গিয়েছে, ‘‘আগের মামলাগুলোও তো ঝুলছে। তার খরচ তুলতে কারবার চালাতে তো হবেই।’’

প্রশ্ন উঠছে, আইনের ফাঁক গলে বার বার কেন খালাস পেয়ে যাবে বেআইনি মদের কারবারিরা? কেন তাদের আটকে রাখা যাচ্ছে না আইনের শাসনে?

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বেআইনি দেশি মদ-সহ গ্রেফতার হলে তিনটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়। ৪৬-এএ, ২৭২ এবং ২৭৩। তিনটি ধারাই জামিন অযোগ্য কিন্তু আদালত থেকে জামিন পেলে পুলিশের কী করার থাকতে পারে! কিন্তু যারা একবার গ্রেফতার হয়, তারা জামিন পেয়ে এলাকায় ফিরে এলে নজর রাখা হয়। সে কারণেই এত বার গ্রেফতার হয়েছে। আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ৪৬-এএ ধারায় সর্বোচ্চ দশ বছর জেল ও জরিমানা হতে পারে। বাকি দু’টি আইনে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবনের আদেশও হতে পারে।

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি কী বলছে?

বনগাঁ মহকুমা আদালতের মুখ্য সরকরি আইনজীবী সমীর দাসের অভিজ্ঞতায়, ২০১১ সালের পর থেকে এই সব ধারায় বনগাঁ আদালতে কারও কোনও সাজাই হয়নি। পুলিশের একটি সূত্র জানাচ্ছে, জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করার পরে অনেকে আট-দশ-পনেরো দিনেও জামিন পেয়ে যাচ্ছে। কেন এমন অবস্থা? পুলিশ ও আইনজীবীদের একটি সূত্রের মতে, দেশি মদ আটক করা হলে তা ফরেন্সিকে পাঠানো হয়। সেই রিপোর্টে বিষাক্ত কিছু না পেলে মামলার ধার কমে যায়। তা ছাড়া, অল্প পরিমাণ মদ আটক করে মামলা দায়ের হলে মামলার গুরুত্ব লঘু হয়ে যায়। জামিন অযোগ্য ধারা দেওয়ার যৌক্তিকতা প্রমাণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

আর এ সবেরই সুযোগে চলতে থাকে বেআইনি দেশি মদের কারবার। জামিন পেয়ে অনেকে ফেরে পুরনো কারবারেই।

যেমন সঞ্জয় দে ওরফে ব্রেক। সে দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় রমরমিয়ে দেশি মদের কারবার চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ। বুধবার রাতে হাবড়া থানার পুলিশ তাকে ফের গ্রেফতার করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রচুর দেশি মদ। রুদ্রপুর বাজার এলাকায় তার একটি মুদির দোকান রয়েছে। দোকানটি রাস্তার ভিতরের দিকে হওয়ায় কেনাবেচা বিশেষ হয় না। সে কারণেই সে দেশি মদের কারবার ফেঁদে বসেছে বলে দাবি করেছে ব্রেক। তার কথায়, ‘‘আগে আটবার গ্রেফতার হয়েছি। একটি মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। বাকি সাতটা এখনও চলছে। ওই মামলা চালাতে গেলে টাকার দরকার। দোকানে মালপত্র বেচে রোজগার তেমন নেই। তাই মদ বিক্রি করি।’’

কী ভাবে মদ সংগ্রহ করে ব্রেক? পুলিশকে সে জানিয়েছে, হাবড়া বাজারে বৈধ দেশি মদের কাউন্টার আছে। সেখান থেকেই পেটি পেটি মদ কেনে সে। ৬০০ এমএলের বোতল থেকে মদ ঢেলে প্লাস্টিকের ছোট প্যাকেটে ভরে খুচরো বিক্রি করে। ৩০০ এমএল মদ বিক্রি করে ৪৫ টাকায়। ৬০০ এমএল বিক্রি হয় ৯০-১০০ টাকায়। দোকানে যার দাম ৭৫ টাকা। সর্বত্র দেশি মদের দোকান না থাকায়, সংলগ্ন জায়গায় খাওয়ার সুযোগ না থাকায় খুচরো কারবারিদের কাছে বেশি দাম দিয়েও লোকে দেশি মদ কেনে বলে মানুষজনের অভিজ্ঞতা।

বছর দুই আগেও হাবড়া, অশোকনগর এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার ছিল। মহিলারা ট্রেনে করে বাইরে থেকে চোলাই এনে কারবার চালাত এলাকায় ও বাড়িতে। চোলাই এখন বন্ধ। তার জায়গা নিয়েছে দেশি মদ। পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়েও সেই কারবারে পুরোপুরি রাশ টানতে পারছে না বলেই মনে করছেন সাধারণ মানুষজন। লাইসেন্সপ্রাপ্ত দেশি মদের দোকান থেকে খুচরো কারবারিরা কী ভাবে পেটির পর পেটি মাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নও

তুলছেন অনেকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন