পথে নেমে সোচ্চার। শনিবার সজলকুমার চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দিকে দিকে রাস্তায় নেমে পড়ে বিক্ষোভে সোচ্চার তৃণমূলের অনেক নেতা ও তাঁদের সমর্থকেরা। কোথাও অভিযোগ উঠছে, বহিরাগত প্রার্থী মেনে নেওয়া হবে না। কোথাও সরাসরি স্থানীয় নেতাকে প্রার্থী করার দাবি তুলছেন কর্মী-সমর্থকেরা। তৃণমূল ভবনে গিয়েও ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখানো শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিন এই প্রবণতা আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তবে ডানপন্থী দলে প্রার্থিপদ নিয়ে এ হেন ক্ষোভ-বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়, তা-ও স্বীকার করছেন তৃণমূলের প্রবীণ নেতারা।
দেগঙ্গায় গতবারের জয়ী বিধায়ক নুরুজ্জমানকে সরিয়ে এ বার প্রার্থী করা হয়েছে রহিমা মণ্ডলকে। রহিমা উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি। গত পঞ্চায়েত ভোটে জয়ী হওয়ার আগে রাজনীতিতে অবশ্য পরিচিত মুখ ছিলেন না। কিন্তু গত কয়েক বছরে জেলা সভাধিপতি হওয়ার সুবাদে পরিচিতি বেড়েছে। নিজেকে সে কারণেই ‘বহিরাগত’ বলতে রাজি নন তিনি। যদিও ‘বহিরাগত’— এই যুক্তিতেই বনগাঁর বাসিন্দা রহিমার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন দেগঙ্গার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একটা অংশ।
তাঁরা এখানে প্রার্থী হিসাবে চেয়েছিলেন তৃণমূলের দেগঙ্গা ব্লক সভাপতি মিন্টু সাহাজিকে। সেই মিন্টু, গতবারও বিধানসভা ভোটে যিনি ছিলেন টিকিটের অন্যতম দাবিদার। কিন্তু সে বার প্রার্থী হন নুরুজ্জমান। দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, মিন্টুর ক্ষোভ সামাল দিতে তৃণমূল নেতৃত্বের উপর মহল থেকে বলা হয়েছিল, অপেক্ষা করতে, সবুরে মেওয়া ফলবে।
কিন্তু মিন্টুর ভাগ্যে শিকে ছেঁড়েনি এ বারও। সেই ক্ষোভেই শুক্রবার থেকে দফায় দফায় দেগঙ্গায় টাকি রোড অবরোধ করেছেন তাঁর সমর্থকেরা।
মিন্টু নিজে সরাসরি প্রার্থী হতে চান, এমন দাবি করছেন না বটে, কিন্তু ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, বহিরাগত প্রার্থী বদলের দাবিতে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে, তাতে তাঁর অমতও নেই। মিন্টুর কথায়, ‘‘পরিস্থিতি যে দিকে গিয়েছে, তাতে কর্মী-সমর্থকদের উপরে আমারও আর নিয়ন্ত্রণ নেই।’’
তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের জন্মলগ্ন থেকেই সঙ্গে আছেন মিন্টু। এলাকায় পরিশ্রমী এবং দক্ষ সংগঠক হিসাবে তাঁর নামডাক আছে। জনসংযোগও ভাল। গত কয়েক বছর ধরে তিনিই দেগঙ্গায় তৃণমূলের অন্যতম মুখ। নুরুজ্জমান স্থানীয় বাসিন্দা নন। তিনি এলাকায় বড় একটা যাতায়াত করতেন না বলে অভিযোগ ছিল। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়েই এলাকায় প্রভাব বাড়ে মিন্টুর। নুরুজ্জমান গোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর আড়াআড়ি সম্পর্কের কথাও অজানা নয় দলের উপর মহলের। দিন পনেরো আগে মিন্টু ও নুরুজ্জমানকে ডেকে তৃণমূল ভবনে আলোচনায় বসেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সভাপতি সুব্রত বক্সি। দু’পক্ষের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলানোর চেষ্টা হয়।
কিন্তু নুরুজ্জমান এ বার দেগঙ্গায় না দাঁড়ালেও টিকিট পাচ্ছেন হুগলি থেকে। ফলে মিন্টুর ক্ষোভ যে আরও বেড়েছে, তা মনে করছেন দলের জেলা নেতৃত্বের একাংশ।
দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘দল যাকে প্রার্থী করবে, তাকেই মানতে হবে। রাস্তা অবরোধ করলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। কোনও রকম বেয়াদপি, বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না, সেটা ওঁকে (মিন্টু) জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ অন্য দিকে রহিমা বলেন, ‘‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমি ভোটে লড়তে নেমেছি। আশা করছি, দলের সব অংশকে সঙ্গে পাব।’’