সরে যেতে হচ্ছে পুরপ্রধান সুভাষকে

আজ, বৃহস্পতিবার সুভাষবাবুকে জরুরি ভিত্তিতে মধ্যমগ্রামে দলের জেলা কার্যালয়ে জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। তবে, জ্যোতিপ্রিয়বাবু দাবি করেছেন, ‘‘গোবরডাঙাতে মুখ্যমন্ত্রীর হোর্ডিং নামিয়ে রাখা হয়েছে বা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

গোবরডাঙা  শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০১:২৩
Share:

রাস্তায় নেমে দলের পক্ষ থেকে বন্ধের বিরোধিতা করা হয়নি বলেই কি সুভাষবাবুকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়?—ফাইল চিত্র

এলাকায় বন্ধ হাসপাতাল চালুর দাবিতে বুধবার ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছিল ‘গোবরডাঙা পুর উন্নয়ন পরিষদ’ এবং ‘হাসপাতাল বাঁচাও কমিটি’। সেই বন্‌ধ সফল এবং সর্বাত্মক হতেই গোবরডাঙার দলীয় পুরপ্রধান সুভাষ দত্তকে পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া শুরু করল তৃণমূল। দলেরই একটি সূত্রে এ খবর জানা গিয়েছে।

Advertisement

আজ, বৃহস্পতিবার সুভাষবাবুকে জরুরি ভিত্তিতে মধ্যমগ্রামে দলের জেলা কার্যালয়ে জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে। তবে, জ্যোতিপ্রিয়বাবু দাবি করেছেন, ‘‘গোবরডাঙাতে মুখ্যমন্ত্রীর হোর্ডিং নামিয়ে রাখা হয়েছে বা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। কারা ওই কাজ করেছে তা জানতেই সুভাষবাবুকে ডাকা হয়েছে।’’ সুভাষবাবু অবশ্য ওই তলব বা তাঁর অপসারণ সংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘দলের পক্ষ থেকে আমাকে কিছু জানানো হয়নি।’’

সম্প্রতি ব্যারাকপুরে জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে এলাকার হাসপাতালটি চালুর আর্জি জানিয়েছিলেন সুভাষবাবু। মুখ্যমন্ত্রী তা নস্যাৎ করে দেন। সুভাষবাবু এর পরেও জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘‘আমি কি তা হলে এলাকায় গিয়ে বলে দেব যে হাসপাতাল হবে না?’’ মুখ্যমন্ত্রী সাফ বলে দেন, ‘‘হ্যাঁ বলে দিন।’’

Advertisement

এলাকাবাসী ওই সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরাও খুশি হননি। দলের পতাকা বা ব্যানার ছাড়া হাসপাতাল চালুর দাবিতে তাঁরা মিছিলও করেছিলেন। বুধবারে বন্‌ধ হল। দোকানপাট, বাজার, স্কুল, ব্যাঙ্ক, ডাকঘর—সব বন্ধ ছিল। এমনকী, স্টেশনের প্ল্যাটফর্মের সস্তার দোকানও খোলনি। ট্রেন ছাড়া সব যানবাহন চলাচলও বন্ধ ছিল। সুনসান ছিল রাস্তাঘাট।

শহরের অনেকেরই বলছেন, কোনও রাজনৈতিক দলের ডাকা বন্‌ধেও এমন সর্বাত্মক প্রভাব পড়ে না। সুভাষবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘আমরা বন্‌ধকে সমর্থন করিনি। পুরসভাও খোলা রেখেছিলাম।’’

‘গোবরডাঙা পুর উন্নয়ন পরিষদ’-এর সহ-সভাপতি পবিত্রকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এই বন্‌ধ প্রমাণ করেছে, এলাকার মানুষের কাছে হাসপাতাল কতটা জরুরি। আমদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন।’’ হাসপাতাল বাঁচাও কমিটি-র আহ্বায়ক সিপিএম নেতা বাপি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলকে সে ভাবে রাস্তায় দেখা যায়নি। হয়তো ওদের দলীয় দায়বদ্ধতা ছিল।’’ সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘‘হাসপাতালের চাহিদা এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের। ওঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করব।’’

অরাজনৈতিক বন্‌ধ হলেও এর সফল হওয়ার পিছনে সুভাষবাবুর প্রছন্ন মদত রয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, বন্‌ধের সাফল্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব মেনে নিতে পারেননি। তাই তাঁকে সরানো হচ্ছে। গোবরডাঙা হিন্দু কলেজে পড়ার সময় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিতি পান সুভাষবাবু। পরবর্তী সময়ে এলাকার মানুষ তাঁকে শিক্ষক হিসেবেই চিনতেন।

ভদ্র, সৎ এবং সংস্কৃতি-মনস্ক মানুষটি ২০০৫ সালের পুরভোটে তৃণমূলের টিকিটে দাঁড়ান। সে বার জিততে পারেননি। ২০১০ সালে জিতে গোবরডাঙার পুরপ্রধান হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন