TMC

বিরোধীদের দোষ ধরতে ব্যস্ত তৃণমূল

শাসক দলের জনপ্রতিনিধি বা নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি স্বজনপোষণের অভিযোগে তুলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা  জুড়ে চলছে ক্ষোভ বিক্ষোভ। পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করে চলছে বিক্ষোভ।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২০ ০৫:৫৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

আমপান দুর্নীতিতে বিজেপির অস্ত্রে এ বার তাঁদেরই ঘায়েল করতে পদক্ষেপ করল তৃণমূল।

Advertisement

শাসকদলের পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধি বা নেতা-কর্মীদের একাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আমপান ঘূর্ণিঝড়ে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়েও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। কোথাও তাঁরা নিজেদের নামে টাকা নিয়েছেন, কোথাও আত্মীয় স্বজনদের টাকা পাইয়ে স্বজনপোষণ করেছেন বলে অভিযোগ।

শাসক দলের জনপ্রতিনিধি বা নেতা নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি স্বজনপোষণের অভিযোগে তুলে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা জুড়ে চলছে ক্ষোভ বিক্ষোভ। পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি ঘেরাও করে চলছে বিক্ষোভ। সড়ক অবরোধ করে টাকা ফেরানোর দাবিতে জানানো হচ্ছে। ভয়ে পঞ্চায়েত সদস্যেরা পাটখেত বাঁশবাগানে গিয়ে লুকিয়ে থাকছেন। পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিচ্ছেন।

Advertisement

শাসক দলের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি সরব হয়েছে বিজেপি। এ বার জেলা তৃণমূলের তরফে বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে পাল্টা ঘেরাও, বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেই মতো গত দু’দিন ধরে কাজ শুরুও হয়ে গিয়েছে।

উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কথায়, ‘‘উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ১৯৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৯০টির বেশি পঞ্চায়েত আমাদের দখলে। বিজেপির দখলে চার-পাঁচটি পঞ্চায়েতে। তৃণমূল পরিচালিত ১৯০টি পঞ্চায়েতে যা সামান্য দুর্নীতি হয়েছে, বিজেপি পরিচালিত সামান্য কয়েকটি পঞ্চায়েতের দুর্নীতি তাকে ছাপিয়ে গিয়েছে।’’ জ্যোতিপ্রিয়র দাবি, ‘‘আমাদের দলের জনপ্রতিনিধি বা নেতা-কর্মীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে যাঁদের টাকা ঢুকেছে, তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিংহভাগই ফিরিয়ে দিয়েছেন। যাঁরা টাকা ফেরাচ্ছেন না, দল তাঁদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করছে। প্রয়োজনে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে, তা তিনি যতবড় নেতাই হন না কেন।’’ জেলা সভাপতির দাবি, ‘‘আমরা দেখতে চাই, বিজেপি তাদের দলের যাঁরা দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়।’’

গত পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি বনগাঁ মহকুমায় চারটি পঞ্চায়েত দখল করে। তার মধ্যে বাগদার সিন্দ্রাণী পঞ্চায়েতের কয়েকজন সদস্য তৃণমূলে যোগদান করায় সেখানে তৃণমূল এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। তৃণমূল নেতৃত্ব ইতিমধ্যেই বিজেপি পরিচালিত কোনিয়াড়া ২ এবং ধরমপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখিয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপি পরিচালিত বাকি পঞ্চায়েতগুলিতেও বিক্ষোভ দেখানো হবে।

রাজনৈতিক মহল মনে করছে, তৃণমূলের শক্তঘাটি হিসাবে পরিচিত এই জেলায় গত পঞ্চায়েত এবং লোকসভা ভোটে বিজেপি ভাল ফল করেছে। পাঁচটি লোকসভা আসনের মধ্যে দু’টি তারা দখল করেছে। জেলার বেশির ভাগ পুরসভা এলাকায় তাঁরা এগিয়ে ছিল। সামনেই বিধানসভা ভোট। তার আগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি যাতে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে না পারে, সে জন্যই পাল্টা দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

জেলা বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তাঁদের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমপান দুর্নীতিতে সম্পূর্ণ ডুবে আছে তৃণমূল। বিজেপি পরিচালিত পঞ্চায়েতে বিক্ষোভ দেখিয়ে ওঁরা নিজেদের অপরাধ দুর্নীতি, স্বজনপোষণ ঢাকতে চাইছেন। এতে লাভ হবে না। মানুষ সব দেখছেন। আমাদের পঞ্চায়েতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। কয়েকটি এলাকায় তৃণমূল জোর করে আমাদের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকিয়ে দিয়েছে। যাঁরা টাকা পেয়েছেন, তাঁরা ফিরিয়েও দিয়েছেন।’’

সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘আমপান দুর্নীতিতে তৃণমূল ও বিজেপি মুদ্রার এ পিঠ ও পিঠ। পঞ্চায়েতের ৪ সদস্যের কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছিল। সেখানে পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা হিসাবে বিজেপির সদস্য ছিলেন।’’

ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অবশ্য দুর্নীতি নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির এই রাজনৈতিক লড়াইকে ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁদের কথায়, ‘‘তৃণমূল না বিজেপি কারা বেশি দুর্নীতি করেছেন সেটা নিয়ে আমরা ভাবতে রাজি নই। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও টাকা পেলাম না কেন, সেটাই জানতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন