পড়তে চেয়ে শ্বশুরবাড়ি ছাড়ল তরুণী    

পৃথিবা রাধারানি গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেছিল সাবিনা। তারপরেই ‘সুপাত্র’ হাতে পেয়ে বাবা-মা দেরি করেননি। আনারবেড়িয়ার যুবকের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেন মেয়ের। বিয়েটা শুরু থেকেই মানতে পারেনি সাবিনা। পড়াশোনা চালিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাওয়ার স্বপ্ন তার বরাবরের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হাবড়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০১:২৭
Share:

প্রাপ্তি: পুরস্কৃত সাবিনা। মঙ্গলবার ছবিটি তুলেছেন সুজিত দুয়ারি

ষোলো বছর বয়সে যখন শ্বশুরের ভিটেয় পা রেখেছিল মেয়েটি, তখনও দু’চোখে তার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু রক্ষণশীল শ্বশুরবাড়ির তাতে আপত্তি। এই নিয়ে টানাপড়েন, মন কষাকষি, নির্যাতন।

Advertisement

শেষমেশ স্রেফ প়ড়া চালিয়ে যাবে বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছে সদ্য আঠারোয় পা দেওয়া মেয়ে সাবিনা খাতুন। ফের ভর্তি হয়েছে স্কুলে। হাবড়ার দক্ষিণ সরাই এলাকার ইদগা চৌমাথা গ্রামের বাসিন্দা সাবিনার কথা জানতে পেরে তার সাহসিকতার তারিফ করেছেন সকলে। মঙ্গলবার কন্যাশ্রী দিবসে সাবিনাকে ‘স্পেশাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছে হাবড়া ১ ব্লক প্রশাসন। বিডিও শুভ্র নন্দী বলেন, ‘‘মেয়েটির লড়াইকে আমরা কুর্নিশ জানাচ্ছি। ওর কৃতিত্ব সকলের কাছে শিক্ষনীয়। আমরা ওর ঘটনাটা সকলের কাছে তুলে ধরব।’’

কিন্তু ওজর-আপত্তি কানে তোলেননি বা়ড়ির লোকজন। সাবিনাও বাবার মুখের উপরে সরাসরি ‘না’ বলার সাহস পায়নি। কিন্তু তখনও বুকে বল পয়েছিল এ কথা ভেবে, স্বামী-শ্বশুরকে বুঝিয়ে হয় তো পড়াটা চালিয়ে যেতে পারবে।

Advertisement

অনেক সাধ্য সাধনার পরে অনুমতি মিলেও গিয়েছিল। একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয় মেয়েটি। মন দিয়ে পড়া চালিয়ে যাবে বলে বাপের বাড়িতে এসে থাকতে শুরু করে। মাঝে মধ্যে যাতায়াত ছিল শ্বশুরবাড়িতে।

কিন্তু এই বন্দোবস্ত মেনে নিতে পারেনি সাবিনার শ্বশুরবাড়ি। নানা নির্যাতন শুরু হয় তার উপরে। দ্বাদশ শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি তাকে।

এরপরেই জেদ ধরে একগুঁয়ে মেয়েটা। মাস দু’য়েক আগে শ্বশুরের ভিটে থেকে পাকাপাকি ভাবে বেরিয়ে আসে। সাবিনার কথায়, ‘‘আর শ্বশুরবাড়িতে ফিরতে চাই না। ওরা লেখাপড়া করতে দিতে চায় না। এখন লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।’’

বাবা-মা এ বার পাশে আছেন সাবিনার। সাবিনা বলে, বাবা আকবর গোলদার, মা সাহানারা খাতুন এখন বুঝতে পারছেন, নাবালিকা অবস্থায় আমার বিয়ে দেওয়াটা ভুল হয়েছিল। ওঁরাও চান, আমি লেখাপড়া চালিয়ে যাই।’’

এত কিছুর পরেও দুশ্চিন্তা একটা আছে। গত বছর পড়াশোনায় ছেদ প়ড়ায় স্কুল থেকে রেজিস্ট্রেশন হবে কিনা সাবিনার, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক অন্তরা আচার্য বলেন, ‘‘মেয়েটির যাতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে কোনও অসুবিধা না হয়, তা দেখব।’’

বিষয়টা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ভেঙে পড়ার মেয়ে নয় সাবিনা। সে বলে, ‘‘সামনের বছর না পারি, পরের বছর হাতে আছে। লেখাপড়়া
চালিয়ে যাবই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন