নৌকোর গল্পেই টাকার কথা ফাঁস

নদীতে ভুটভুটি চেপে ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন ওঁরা। ফুরফুরে মেজাজে সেই গল্পগুজবই কাল হল। সঙ্গে কতটা কী টাকাপয়সা আছে, সে কথা উঠেছিল। ভুটভুটি চালকের মাধ্যমে সে তথ্য সটান গিয়ে পৌঁছেছিল দুষ্কৃতীদের কানে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩২
Share:

নদীতে ভুটভুটি চেপে ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিলেন ওঁরা। ফুরফুরে মেজাজে সেই গল্পগুজবই কাল হল। সঙ্গে কতটা কী টাকাপয়সা আছে, সে কথা উঠেছিল। ভুটভুটি চালকের মাধ্যমে সে তথ্য সটান গিয়ে পৌঁছেছিল দুষ্কৃতীদের কানে।

Advertisement

শনিবার রাতে পিয়ালি দ্বীপের পর্যটক আবাসে ডাকাতির তদন্তে নেমে এ কাহিনি জানতে পেরেছে পুলিশ। ওই দিন রাতে ডাকাতরা হোটেলের দোতলায় দু’টি ঘরে চড়াও হয়ে টাকাপয়সা লুঠপাট করে। শুধু তাই নয় তাদের এলোপাথাড়ি মারে এবং বন্দুকের গুলিতে গুরুতর আহত হন কলকাতার যাদবপুরের বাসিন্দা সুদীপ্ত বসুঠাকুর। এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ দিন বারুইপুর মহকুমা আদালত তাদের ১২ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, ডাকাতিতে মোট ১১ জন জড়িত ছিল। বাকি ৪ জনের খোঁজ চলছে।

গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, শনিবার সকালে ওই চারটি পরিবার মোট তিনটি গাড়ি নিয়ে এসে পিয়ালির লজে ওঠেন। বিকেলে তাঁরা সবাই মিলে পিয়ালি নদীতে ভুটভুটিতে ঘুরছিলেন। ওই সময়ই তাঁরা নিজেদের সঙ্গে থাকা টাকাকড়ি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। পরে ওই ভুটভুটি-চালক তাঁর পরিচিতদের কাছে সে কথা গল্প করেন। ‘সোর্স’ মারফত সেই কথা গিয়ে পৌঁছয় এলাকার দাগি দুষ্কৃতী ইবাদ আলি-র কাছে। এর পরেই ইবাদ তার দলবল জোগাড় করে ডাকাতির ছক কষে। তবে তাদের চিন্তা ছিল ওই পর্যটনকেন্দ্র থেকে পাঁচশো মিটার দূরে পুলিশ ফাঁড়ির কর্মীদের নিয়ে। ইবাদ পুলিশকে জানিয়েছে, রাত দেড়টা নাগাদ ওই ফাঁড়ির পুলিশ যে এলাকায় টহল দিতে বের হয়, তা জানা ছিল তাদের। তাই ওই সময়টাই ডাকাতির জন্য বেছে নেওয়া হয়। সেই মতো পর্যটনকেন্দ্রের আশপাশে ঘাপটি মেরে বসেছিল ইবাদ আলির দলবল। ফাঁড়ির পুলিশরা টহলদারিতে বেরিয়ে যেতেই তারা পর্যটনকেন্দ্রের দোতলায় সুদীপ্তবাবু ও মিলনবাবুর ঘরে হামলা চালায়। ইবাদ জানিয়েছে, ওই দু’জনের কাছেই মোটা টাকা রয়েছে বলে তার কাছে আগাম খবর ছিল। তাই তারা ওই দু’টি ঘরেই হানা দিয়েছিল।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন যাদবপুরের বেসরকারি হাসপাতালে থাকা সুদীপ্তবাবুর সঙ্গেও দেখা করে ডাকাতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) অরিজিৎ সিংহ। সুদীপ্তবাবুরা কেন অত টাকা নিয়ে কেন পিয়ালি দ্বীপে গিয়েছিলেন, সেই বিষয়েও তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে জেলা পুলিশ সূত্রের খবর। সুদীপ্তবাবু পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা শুনেছিলেন, সুন্দরবনের ওই এলাকায় কোনও এটিএম নেই। তাই রাস্তায় গাড়ি খারাপ হয়ে গেলে বা অন্য কোনও সমস্যায় পড়লে নগদ টাকার দরকার হতে পারে ভেবে তাঁরা ওই টাকা সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। সুদীপ্তবাবুরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে মোট ৫৫ হাজার টাকা লুঠ করা হয়েছে। এখনও অবধি ১৩ হাজার টাকা উদ্ধার করতে পেরেছে পুলিশ।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এ দিন সুদীপ্তবাবুর কাঁধে একটি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাঁর অবস্থারও উন্নতি হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন