আসর: বাইচ প্রতিযোগিতা ঘিড়ে উৎসাহ। ছবি: সুজিত দুয়ারি
কোঁচকানো চামড়া। বয়স থাবা বসিয়েছে গোটা শরীরে। তবু তীব্র বেগে বৈঠা হাতে নৌকা বেয়ে চলেছেন বৃদ্ধ। সঙ্গে আরও কয়েক জন। সকলেই দ্রুত ছুঁতে চাইছেন ফিনিশিং লাইন।
দূরে দাঁড়ানো অসংখ্য মানুষ হাততালি দিয়ে, চিৎকার করে তাঁদের উৎসাহ দিচ্ছেন।
প্রতি বছর বিজয়া দশমীর দিন হাবড়ার কুমড়া কাশীপুর পঞ্চায়েতের বিজয়নগরে স্থানীয় সরকার পরিবারের দুর্গা প্রতিমা বিসর্জন উপলক্ষে পরিবারের তরফে আয়োজন করা হয় বাইচ প্রতিযোগিতার। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন তাতে যোগ দিতে আসেন। বড় নৌকায় ৩০-৩৫ জন প্রতিযোগী থাকেন। ছোট নৌকায় ২০-২৫ জন। প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পরে প্রতিমা নৌকোয় তুলে ঘুরিয়ে তারপর ঝিলে বিসর্জন দেওয়া হয়।
সরকার পরিবারের প্রায় ৭০ বিঘে ঝিলে বাইচের আসর বসছে দীর্ঘ দিন ধরে। পরিবার সূত্রে জানা গেল, এ দেশে তাঁদের পারিবারিক দুর্গা পুজোর বয়স ৮০ বছর। বাইচের বয়সও একই। অতীতে বাংলাদেশে এই পুজো হত। পরিবারের সদস্যেরা দেশভাগের আগে এ দেশে চলে এসেছিলেন।
কেন বিসর্জনের আগে বাইচ?
সরকার পরিবারের চতুর্থ পুরুষ প্রবীরকুমার জানালেন সেই ইতিহাস। তাঁর কথায়, ‘‘অতীতে বাংলাদেশে দুর্গা পুজোর সময়ে নৌকায় করে প্রতিমা নদীতে বিসর্জন দিতে নিয়ে আসতেন পুজোর আয়োজকেরা। প্রচুর নৌকো আসত। প্রতিমা বিসর্জনের পরে ওই সব নৌকো যাঁরা নিয়ে আসতেন, তাঁদের মধ্যে বাইচ প্রতিযোগিতা হত। যা দেখতে মানুষ জমায়েত হতেন।
এ দেশে আসার পরে অধুনা বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার বৌলগ্রামের বাসিন্দা সরকার পরিবারের সদস্যেরা ওই ঐতিহ্য মনে রেখে এখানেও বাইচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে আসছেন।
শুধু সরকার পরিবার নয়, আরও বহু মানুষ ফরিদপুর, খুলনা থেকে দেশভাগের সময়ে বা পরবর্তী সময়ে বিজয়নগরে এসে বসবাস শুরু করেছিলেন। বিজয়নগর এলাকার মানুষের কাছে সরকার পরিবারের পুজোর আকর্ষণ এখনও অটুট।
এ বছর শনিবার বিকেলে বাইচ শুরু হওয়ার প্রায় দু’ঘণ্টা আগে থেকে লোকজন ভিড় করতে থাকেন ঝিলের ধারে। মেলা বসে। উদ্যোক্তারা জানালেন, প্রতিযোগিতায় প্রথম তিনটি দলকে ট্রফি দেওয়া হয়। যাঁরা কোনও স্থান পান না, তাঁদের পরিবারের তরফে মিষ্টি খাওয়ার টাকা দেওয়া হয়। কথা হচ্ছিল স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ শৈলেন্দ্রনাথ মণ্ডলের সঙ্গে। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে খুলনায়। ছোটবেলায় ও দেশের নদীতে তিনি বাবার সঙ্গে বাইচ দেখতে যেতেন যেতেন। এখানে এসে বাইচ প্রতিযোগিতায় নেমেছেন কয়েকবার। বললেন, ‘‘বাইচ দেখতে দেখতে ছোটবেলার কত স্মৃতি মনে পড়ে যায়। ও দেশে বাইচের পাশাপাশি সারিগানের আসরও বসত। ভারী মায়াময় ছিল সেই পরিবেশ।’’