মাটি বোঝাই গাড়ির ধাক্কায় এক মোটরবাইক আরোহীর মৃত্যুর জেরে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল ভাঙড়।
মৃতদেহ রেখে পথ অবরোধ দিয়ে শুরু হয়েছিল। পুলিশ লাঠি চালিয়ে অবরোধ তুলতে গেলে ইট-পাটকেল উড়ে আসে। দু’টি গাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। অবৈধ মাটি ব্যবসা বন্ধের দাবি তুলে এক তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের স্টেশনারি দোকান ভাঙচুর করা হয়। দুই থানার ওসি-সহ ছ’জন পুলিশকর্মী জখম হন। চোট গুরুতর হওয়ায় এক কনস্টেবলকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনা পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী বলেন, “পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। হামলায় জড়িতদের ধরতে তল্লাশি চলছে।”
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার দুপুর সওয়া ৩টে নাগাদ ভাঙড়ের কাশীপুর বাজারের কাছে নাইন পয়েন্ট বাস রোডে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার যুবক ইমান মোল্লা (২২) ওরফে সান্টু মোটরবাইক নিয়ে গলি থেকে বেরনোর সময়ে মাটি বোঝাই লরি এসে ধাক্কা মারে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। এর পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শাসক দলের কিছু নেতার মদতে স্থানীয় শোনপুর খাল থেকে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে ব্যবসা হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে দেহ ঘিরে অবরোধ শুরু হয়।
পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের বুঝিয়ে-সুজিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, দলমত নির্বিশেষে এলাকার মানুষ অবরোধে সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যেতেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া শুরু হয়। গণ্ডগোল যখন তুঙ্গে, পুলিশের দু’টি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পূর্ব) রূপেশ কুমারের নেতৃত্বে বাড়তি বাহিনী গিয়েও সামাল দিতে পারেনি। স্থানীয় সানপুকুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান মুছাহক মোল্লার স্টেশনারি দোকানও ভাঙচুর করে ক্ষিপ্ত জনতা।
ক্ষিপ্ত জনতার হামলায় জখম হন ভাঙড় থানার ওসি আশিস দাস, কাশীপুর থানার ওসি সূর্যশেখর মণ্ডল, ভাঙড়ের সিআই শিশির মিত্র-সহ ছয় পুলিশকর্মী। মিহিরকুমার বিশ্বাস নামে এক পুলিশকর্মীর মাথা ফাটে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ভাঙড় ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন ভাঙড় ২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ওহিদুল ইসলামও। তাঁরাই জনতাকে বুঝিয়ে অবরোধ তোলেন। ঘটনার প্রায় দেড় ঘণ্টা পরে দমকলের একটি ইঞ্জিন এসে আগুন নেভায়। মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কলকাতার চিত্তরঞ্জন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অবরোধকারীদের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানও মাটি ব্যবসায় জড়িত। তাই তাঁর দোকান জনরোষের শিকার হয়েছে। মুছাহক মোল্লা অবশ্য দাবি করেন, “ওই ছেলেটির কিছু আত্মীয়-স্বজন আমাদের গ্রামে থাকেন। আমাদের বিরোধী রাজনীতি করেন। মনে হয়, তাঁরাই গণ্ডগোলের সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভাঙচুর করেছেন।” এক পা এগিয়ে আরাবুলের বক্তব্য, “গোটা গণ্ডগোলের পিছনে স্থানীয় বাম বিধায়ক বাদল জমাদার ও তাঁর ছেলের হাত রয়েছে। অবিলম্বে তাঁদের গ্রেফতার করতে হবে।”
সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “সরকারি মাটি চুরি করে বিক্রি করা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আড়াল করতেই বৃদ্ধ সিপিএম বিধায়ক ও তাঁর দুই অসুস্থ ছেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে তৃণমূল।” বাদলবাবু জানান, তিনি ও তাঁর এক ছেলে অসুস্থ হয়ে বাড়িতে রয়েছেন। কলকাতায় তাঁর এক ছেলের ডায়ালিসিস চলছে। তাঁর কটাক্ষ, “আরাবুল যেখানেই যান, সিপিএমের নেতাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন। আমার নামেও করছেন। আসলে মাটি কাটা নিয়ে তৃণমূলের নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা।”